বান্দরবানে প্রাকৃতিক পরিবেশকে ধ্বংস করে চলছে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের মহোৎসব

হিল ভয়েস, ২০ নভেম্বর ২০২০, বান্দরবান: বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলা থেকে অবাধে ও অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন ও পাচারের ঘটনা থেমে নেই। ফলে দ্রুত নিঃশেষ হচ্ছে পাথর। তার প্রভাব পড়ছে প্রাণ ও প্রকৃতির উপর। পরিবেশবীদরা আশঙ্কা করছেন পাথর উত্তোলনের ফলে জেলার ঝিরি, ঝর্ণা শুকিয়ে যাচ্ছে এবং এ কারণে অদূর ভবিষ্যতে মরুভূমিতে পরিণত হতে পারে পুরো বান্দরবান জেলা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বান্দরবানের লামা, আলিকদম, রোয়াংছড়ি, থানচি উপজেলায় সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই চলছে নির্বিচারে পাথর উত্তোলন। আলিকদমের বড়ভরিমুখ, ছোটভরিমুখ, মাংগেরঝিরি, কলাঝিরি থেকে নির্বিচারে পাথর উত্তোলন করছে ২৫/৩০ জন শ্রমিক। উত্তোলনকৃত পাথরগুলো গাড়িতে করে কলার ঝিরি হয়ে নয়াপাড়ায় পাচার করে। পরে পাথর ভাঙ্গার মেশিন দিয়ে পাথর ভেঙ্গে ছোট করা হচ্ছে। বাঘের ঝিরি ও ভরিমুখ রাস্তার পাশে পুরনো পাথরের পাশাপাশি সদ্য উত্তোলনকৃত পাথর স্তুপ করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, পাথর উত্তোলনের সরকারি কোন বৈধতা না থাকলেও আলিকদমের সব জায়গায় পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রশাসন, নিরাপত্তাবাহিনী, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় পাথর উত্তোলন করা হয়।

সুরেশপাড়ার বাসিন্দা দিবিয়মণি তঞ্চঙ্গ্যা জানান, আমরা পাথর উত্তোলনকারীদের ক্ষমতার কাছে অসহায়। আমাদের বসতভিটার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বড়ভরিমুখ ঝিরিটি এক বছর আগেও পাথরেরভর্তি থাকলেও বর্তমানে কোন পাথর নেই।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, লামা উপজেলার সাঙ্গু মৌজার হরিণঝিরি, পাইকঝিরি, কাপঝিরি, কেরানীঝিরি, শিলেরঝিরি, চিনিরঝিরি, বাঁকখালী খালসহ ইয়াংছা মৌজার বিভিন্ন স্থানে শত শত শ্রমিক দ্বারা পাহাড় ও ঝিরি খনন করে অবৈধভাবে দিনরাত পাথর উত্তোলন করছে পাথর খেকোরা। ঝিরি ও পাহাড় খুঁড়ে পাথর উত্তোলনের কারণে পানির উৎস নিঃশেষ হয়ে জুম্ম গ্রামগুলোতে তীব্র পানিসংকট দেখা দিচ্ছে।

এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা শিমন জালাই ত্রিপুরা ও চংপাট ম্রো সাংবাদিকদের কাছে লিখিতভাবে এ অভিযোগ করেন। অভিযুক্তরা হলেন, কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ভেন্ডিবাজার এলাকার বাসিন্দা মহিউদ্দিন, পিতা-মৃত নুরুল কবির, মো: এনাম, ফরহাদ, মো: জলিল, মনো মেম্বার ও ওমর হামজাসহ আরো বেশ কয়েকজন।

অথচ, পরিবেশ রক্ষার্থে পাহাড় কাটা, প্রবাহিত ঝিরির স্বাভাবিক গতি পরিবর্তন, পাহাড়, ঝিরি ও ছড়া খনন করে পাথর উত্তোলনসহ বারুদ দ্বারা পাথর ভাঙার উপর সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তারপরেও অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পরিবেশ আইন অমান্য করে পাথর উত্তোলন করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জেলায় নির্দিষ্ট মেয়াদ ও কী পরিমাণ পাথর উত্তোলন করা যাবে তা নির্দিষ্ট করেই পাথর উত্তোলনের অনুমতি প্রদান করে কর্তৃপক্ষ। সীমা অতিক্রম করে নির্দিষ্ট পরিমাণের দশগুণ বেশি পাথর উত্তোলন করছেন এমন ব্যক্তি ও সংস্থার সংখ্যা অনেক। অনুমোদন ছাড়া পাথর আহরণ নিষিদ্ধ হলেও ক্ষমতাশীন দলের এক শ্রেণির ঠিকাদার বৈআইনীভাবে ঝিরি ও পাহাড় খুঁড়ে পাথর উত্তোলন করছে।

কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয়ভাবে ১ ফুট পাথরের দাম ১৩০ টাকা, একটি মিনি ট্রাকে ১শ’ ফুট ও বড় ট্রাকে দেড়শ ফুট পাথর বোঝাই করা যায়। দিনে প্রতিটি উপজেলা থেকে অন্তত ১০টির বেশি ট্রাকে করে পাথর পাচার হচ্ছে।

More From Author