হিল ভয়েস, ১৪ অক্টোবর ২০২০, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলার নান্যাচর উপজেলার বুড়িঘাট ইউনিয়নে সেনাবাহিনীর গুলিতে একজন ইউপিডিএফ সদস্য ও একজন নিরীহ গ্রামবাসী নিহত হয়েছে এবং একজন নিরীহ যুবককে মারধরের ফলে আহত হয়েছে। অপরদিকে একজন সেনা সদস্য নিহত ও একজন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
গতকাল ১৩ অক্টোবর ২০২০, মঙ্গলবার বিকাল ৫:০০ ঘটিকায় সময় বুড়িঘাট ইউনিয়নের শহীদ মুন্সী আবদুর রওফ বেদী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায় যে, ইউপিডিএফ সদস্যদের ধরার জন্য একজন বাঙালি মৎস্য ব্যবসায়ীর সাথে সেনাবাহিনী গোপন পরিকল্পনা করে। সেনাবাহিনীর পরিকল্পনা মোতাবেক উক্ত বাঙালি মৎস্য ব্যবসায়ী ইউপিডিএফ সদস্যদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করে এবং সরাসরি দেখা করার জন্য গতকালের দিনক্ষণ ঠিক হয়।
পরিকল্পনা মোতাবেক কয়েকজন সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়ে একটি পর্যটন বোট ভাড়া করে পর্যটক সেজে মাইক বাজিয়ে সেনা সদস্যরা সিভিল ড্রেসে অস্ত্রশস্ত্রসহ রাঙ্গামাটি থেকে বুড়িঘাট ইউনিয়নের শহীদ মুন্সী আবদুর রওফ বেদীতে যায়।
সেনা সদস্যরা সেখানে পৌঁছার সাথে সাথে শহীদ মুন্সী আবদুর রওফ স্মৃতিসৌধের নিরাপত্তা প্রহরী বিনয় চাকমা (৩৮) ও স্থানীয় জেলে ইন্দ্রজয় চাকমাকে (৩৫) রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে এবং বেদম মারধর করে।
ইন্দ্রজয় চাকমা পেশায় একজন জেলে (মৎস্যজীবী)। তিনি তার নদীতে জাল ফেলে দাবায় ধুমপান করার জন্য শহীদ মুন্সী আবদুর রওফ স্মৃতিসৌধে যান। নিরাপত্তা প্রহরী বিনয় চাকমা ও ইন্দ্রজয় চাকমা সম্পর্কে আত্মীয় ও রাঙ্গামাটি সদর উপজেলাধীন বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নের ধামেইছড়া গ্রামের বাসিন্দা। এসময় নিরাপত্তা প্রহরী বিনয় চাকমা তাকে আটক করার কথা ফোনে বুড়িঘাট ক্যাম্পে জানিয়ে দেন।
এরপর মৎস্য সওদাগর স্পীড বোট দিয়ে সেখানে পৌছে ইউপিডিএফ সদস্যকে ফোনে খবর দেয় সেখানে আসার জন্য। ইউপিডিএফ সদস্যরা নৌকা যোগে ঘটনাস্থলে আসলে সেনা সদস্যদের উপস্থিতি টের পেলে সাথে সাথে সেনা সদস্যদের উপর গুলি করে। এতে দুইজন সেনা সদস্য হ্রদের পানিতে পড়ে যায়। তার মধ্যে একজন আহত হয়েছে এবং আরেকজন নিহত হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
অন্যদিকে সেনা সদস্যরা সাথে সাথে পাল্টা গুলি ছোঁড়ে। এতে ইউপিডিএফ সদস্য আশাপূর্ণ চাকমা রকেট (২৮) গুলিবিদ্ধ হয়ে নৌকার মধ্যে মারা পড়ে। অন্যদিকে সেনা সদস্যরা ইন্দ্রজয় চাকমাকেও গুলি করে। এতে ইন্দ্রজয় চাকমা ঘটনাস্থলে নিহত হয়। আশাপূর্ণ চাকমা রকেট নান্যাচর উপজেলার হাজাছড়ি গ্রামের মনো রঞ্জন চাকমার ছেলে।
তারপর বুড়িঘাট হতে সেনাবাহিনী পৌঁছলে নিরাপত্তা প্রহরী বিনয় চাকমাকে ছেড়ে দেয়। বিনয় চাকমা লাশগুলো কাধে তুলে বোটে তুলে দেয় বলে জানা যায়।