হিল ভয়েস, ৬ মে ২০২৫, ঢাকা: বান্দরবানের থানচি উপজেলায় এক খেয়াং আদিবাসী নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে ও নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে এবং খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ঢাকায় শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ঢাকা মহানগর শাখা, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টুস কাউন্সিল, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, ত্রিপুরা স্টুডেন্টস্ ফোরাম, ঢাকা মহানগর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার এবং সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন, ঢাকা কমিটি।
উক্ত সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা সংহতি বক্তব্যে বলেন, বান্দরবানের পুলিশ, জেলা প্রশাসক একটি সংবাদ সম্মেলন করেছে। তারা নাকি ঠিক বুঝতে পারছে না কি হয়েছে জায়গাটি দুর্গম হওয়ার কারণে। আপনারা জায়গাকে দুর্গম বলে আইন কে অন্যদিকে মোড় ঘুরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। ওখানে কি রকেট ছিলো যে ধর্ষকরা রকেটে করে পালিয়ে গেলো? তা না হলে ২৪ ঘন্টা পার হওয়ার পরও কেন তাদের গ্রেপ্তার করা হলো না? যারা পাহাড়ে যায় তাদের দফায় দফায় ক্যাম্পগুলোতে আইডি কার্ড শো করতে হয়। তাহলে তাদেরকে শনাক্ত করা এত কঠিন কেন? আপনারা নববর্ষে নানান জাতিগোষ্ঠীকে সাজিয়ে গুজিয়ে এনে অন্তর্ভুক্তি দেখান, কিন্তু যখন একজন খেয়াং নারী ধর্ষণের শিকার হয় সেই ধর্ষকদের ধরে কেন জেলে অন্তর্ভুক্ত করছেন না? তখন আপনার অন্তর্ভুক্তি আইন কোথায় যায়? অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধুচন্দ্রিমার ৮ মাস পূর্ণ হয়ে গেছে। আপনারা এবার রাষ্ট্রের নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে জেগে উঠুন।
পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক সৈসানু মারমা বলেন, আমাদের কষ্ট একটাই, গতকালের পাহাড়ী নারীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাত জাগবে না। সারা বাংলাদেশ রাত জাগবে না। আমাদের প্রশ্ন থাকবে এত এত সেনা ক্যাম্প থাকতেও কেন তারা আমার পাহাড়ী নারীকে নিরাপত্তা দিতে পারে না? যারা ভাবছেন পাহাড়ী নারীদের পেটে মুসলিমের সন্তান থাকবে, যারা ভাবছে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামকে ইসলামিকরণ করা হবে তাদের স্পষ্ট বলতে চাই, আপনাদের এই ষড়যন্ত্র পাহাড়ী ছাত্র সমাজ সমস্ত ষড়যন্ত্র সফল হতে দিবেনা।
বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল, কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অংশৈসিং মারমা বলেন, পাহাড়ের ধর্ষণে ঘটনাগুলোকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধামাচাপা দেয় এই অজুহাতে যে সেখানে সাম্প্রদায়িক ঘটনা হতে পারে। আমরা জানি পাহাড়ের প্রত্যেক ধর্ষণ ঘটনায় এক অদৃশ্য শক্তি কাজ করে। রাঙামাটিতে সাংগ্রাইয়ের সময়ে এক পাহাড়ী বোনকে টানা ৮ দিন ধরে গণধর্ষণ করেছে। তার প্রতিবাদ করতে গেলে প্রশাসন বাঁধা দেয়। কেননা বিদেশী প্রতিনিধিদের তারা শুধুমাত্র পাহাড়ের সৌন্দর্য্য দেখাতে চায়, পাহাড়ের সমস্যা, দু:খ, কষ্ট দেখাতে চায় না। পার্বত্য চট্টগ্রামের ৫০০ টির উপর ক্যাম্প থাকার পরও আপনারা আমার আদিবাসী মা বোনদের রক্ষা করতে পারেন না। আপনারা আরো কতগুলো ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করলে আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারবেন?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবারের সদস্য সুর্মী চাকমা বলেন, পাহাড়ের ধর্ষণ ঘটনায় কখনোই সমতলের বাঙালি বন্ধুদের আওয়াজ তুলতে দেখি নাই। পাহাড়ের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়েও ধর্ষণের মতো ঘটনা বন্ধ থাকে নাই। কিন্তু আপনারা চুপ থাকেন। কারণ আমরা আপনাদের ধর্মের নই। আপনাদের আমি ধিক্কার জানাই।
ত্রিপুরা স্টুডেন্টস্ ফোরাম, ঢাকা মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন্ত ত্রিপুরা বলেন, পাশবিক নির্যাতনের মাধ্যমে চিংমা খেয়াংকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। আমি জানিনা কোন দেশে জন্মগ্রহণ করলে এমন অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হতে হয়। ৩টি সন্তানকে মা হারা করা হয়েছে। একটি জাতিকে প্রথমে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বানিয়ে দেওয়া হল, তারপরে আমাদেরকে সন্ত্রাসী ট্যাগ লাগিয়ে নির্যাতন নীপিড়নের পর হত্যা করা হচ্ছে। আমি জানিনা এর মুক্তি কোথায়? আমরা দেখতে পাচ্ছি এই রাষ্ট্রে ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না থাকার কারণে এর মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা চাই এই ধর্ষকদের সরকার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেত্রী রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা তার সংহতি বক্তব্যে বলেন, আমাদের পাহাড়ের ধর্ষণের ঘটনাগুলো কখনোই মূল ধারার সংবাদ মাধ্যমে আসে না। এর কারণ বাঙালি জনগোষ্ঠীর মানসিকতা। আমরা চাই এসব মানসিকতার পরিবর্তন হোক।
সংহতি বক্তব্যে শিক্ষার্থী জনি খেয়াং বলেন, আমরা কখনোই ট্যুরিস্টদের বিরুদ্ধে ছিলাম না। কিন্তু তাদের দ্বারা যদি এরকম অপকর্ম ঘটতে থাকে, তাহলে সেটা পাহাড়ী জনগোষ্ঠী কখনোই মেনে নেবে না। আমরা ধর্ষকদের উল্লেখযোগ্য শাস্তির দাবি জানাচ্ছি এই প্রতিবাদী সমাবেশ থেকে।
উক্ত সমাবেশে আরো সংহতি বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক শুভ্রময় মাহাতো, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অংক্রাথুই খেয়াং এবং ঢাকাস্থ ম্রো ছাত্র সমাজ। পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় উক্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।
+ There are no comments
Add yours