চুক্তি বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলনে জুম্ম ছাত্র সমাজকে অধিকতর সামিল হতে হবে: পিসিপি’র সম্মেলনে উ উইন মং জলি

হিল ভয়েস, ২ মে ২০২৫; বান্দরবান: আজ ২ মে, ২০২৫ রোজ শুক্রবার বান্দরবান সদরের রয়েল হোটেলের সম্মেলন কক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), বান্দরবান জেলা শাখার ২১তম বার্ষিক শাখা সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়।
“সকল প্রকার ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলনে ছাত্র সমাজ অধিকতর সামিল হউন“ স্লোগানে সম্মেলনে পিসিপি’র বান্দরবান জেলা শাখার সহ সভাপতি উশৈহ্লা মারমার সভাপতিত্বে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত সম্মেলন ও কাউন্সিলের সকালের অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক উ উইন মং জলি, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিসিজেএসএস বান্দরবান জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রী উবাসিং মারমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি বান্দরবান জেলা কমিটির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক রেম এং ময় বম এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যাঁ।

পিসিপি’র বান্দরবান জেলা শাখার সদস্য সিংওয়াই মারমার সঞ্চালনায় এযাবৎ কালে জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে আত্মবলিদানকারী সকল বীর শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি’র বান্দরবান জেলা শাখার সদস্য উবাথোয়াই মারমা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উ উইন মং জলি বলেন, মহান পার্টি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি আনুষ্ঠানিক ভাবে গঠিত হয়েছিলো ১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু মহান নেতা এম এন লারমার আর্দশে গড়া এই পার্টি গঠন করার পরিকল্পনা ছিলো অনেক দীর্ঘ দিন থেকেই। এই মহান নেতার আর্দশ, লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য নিয়ে গড়া মহান পার্টি যুগ যুগ ধরে জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাঅধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে আজ ৫৩ বছর অতিবাহিত করেছে। সকল ষড়যন্ত্র, দমন-পীড়নের চালিয়ে শাসকগোষ্ঠী জনসংহতি সমিতিকে নির্মূল করতে পারে নি, ভবিষ্যতেও পারবে না।

তিনি আরও বলেন, ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসকেরা ব্রিটিশ আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়িত মানুষের উপর শোষণের যে বীজ বপন করে গিয়েছিলো একই প্রক্রিয়া পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র ধারাবাহিকভাবে চলমান রেখেছে। চুক্তি পূর্ববর্তী সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে যে বাস্তবতা বিরাজমান ছিল, বর্তমানেও একি বাস্তবতা পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজ করছে। বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগনকে নানা ভাগে বিভাজন করে ‘ভাগ করো শাসন করো’ নীতির ভিত্তিতে জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব শেষ করে দেওয়ার সব ষড়যন্ত্র কায়েম করে চলেছে। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জুম্ম তরুণ সমাজকে রুখে দাঁড়াতে হবে। তিনি আরো বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী শাসনামলের অবসানের পর পুরো দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। বরঞ্চ নিপীড়ন, নির্যাতন, হামলা বেড়েছে। আজ যদি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়িত হত তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামে এরকম নিপীড়ন- নির্যাতন, হামলার ঘটত না। সুতরাং সমস্ত নিপীড়ন- নির্যাতন, শোষণ-বঞ্চনা অবসানের লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম ছাত্র-যুব সমাজকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলনে অধিকতর সামিল হতে হবে।

জনসংহতি সমিতি বান্দরবান জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক উবাসিং মারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের অতীত ইতিহাস থেকে বর্তমান বাস্তবতা পর্যন্ত জুম্ম জনগণ যেভাবে শোষণ-শাষণের শিকার হয়ে আসছে বর্তমান যুব তরুণ ও ছাত্র সমাজকে তা গভীরভাবে অনুধাবন করতে হবে ও বুঝতে হবে। অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সামিল হতে হবে।

পিসিপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, বর্তমান জুম্ম ছাত্র যুব সমাজের দায়িত্ব -কর্তব্য হচ্ছে মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার নির্দেশিত প্রগতিশীল আদর্শে দীক্ষিত হয়ে সকল প্রকার ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল হওয়া।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারণ জনগণ ও যুব ছাত্র সমাজের মধ্যে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করে দিয়েছে। এই ভয়ের সংস্কৃতি থেকে আমাদের তরুণ ছাত্র যুব সমাজকে অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে এবং লড়াই সংগ্রামে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে নিয়োজিত করতে হবে।

বিকেলে কাউন্সিল অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় সদস্য কে এস মং মারমা, জনসংহতি সমিতির বান্দরবান জেলা কমিটির সভাপতি সুমন মারমা, সাংগঠনিক সম্পাদক মংনু মারমা, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক জিকো চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বান্দরবান জেলা কমিটির সভাপতি উলি সিং মারমা।

কাউন্সিল অধিবেশনে বান্দরবান জেলার শাখার আওতাধীন বিভিন্ন থানা ও কলেজ শাখার প্রতিনিধিরা সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক কার্যক্রম ও বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে করণীয় বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন।

সম্মেলন শেষে উশৈহ্লা মারমাকে সভাপতি, জামাধন তঞ্চঙ্গ্যাকে সাধারণ সম্পাদক ও হ্লাপ্রুসিং মারমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ২৭ সদস্য বিশিষ্ট পিসিপি, বান্দরবান জেলা শাখার ২১তম কমিটি গঠিত হয়। নবগঠিত কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান পিসিপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা।

পরবর্তীতে পিসিপি বান্দরবান জেলা শাখার বিদায়ী কমিটির সহ-সভাপতি উশৈহ্লা মারমার সমাপনী বক্তব্যের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ বান্দরবান জেলা কমিটির ২১তম বার্ষিক শাখা সম্মেলন ও কাউন্সিল সমাপ্তি ঘটে।

More From Author

+ There are no comments

Add yours