অপহৃত ৫ শিক্ষার্থীর মুক্তি ও মারমা তরুণী ধর্ষণকারীর শাস্তির দাবিতে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ, ইউপিডিএফ কর্তৃক বাধা, হুমকি

হিল ভয়েস, ২১ এপ্রিল ২০২৫, খাগড়াছড়ি: গত ১৬ এপ্রিল ২০২৫ সকাল আনুমানিক ৬:৩০ ঘটিকায় খাগড়াছড়ি সদরস্থ গিরিফুল এলাকা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ৫ জন শিক্ষার্থীকে অপহরণ ও রাঙ্গামাটির কাউখালীতে এক দল সেটেলার বাঙালি কর্তৃক দিবাগত রাতে এক আদিবাসী মারমা তরুণীকে(২০) অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে গিয়ে রাতভর গণধর্ষণের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে খাগড়াছড়িতেও বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করেছে খাগড়াছড়িস্থ আদিবাসী ছাত্র সমাজ।

তবে একাধিক সূত্রে অভিযোগ পাওয়া গেছে, চবির ৫ শিক্ষার্থীকে অপহরণকারী ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীরা বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী অনেক ছাত্র-ছাত্রী ও গ্রামবাসীকে উক্ত বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে এবং হুমকি প্রদান করেছে। তবে, শেষ পর্যন্ত প্রতিবাদী ছাত্র-জনতা সেসব হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গতকাল (২০ এপ্রিল) সকাল ১০ টার সময়ে খাগড়াছড়ি শহরের মহাজনপাড়াস্থ সূর্যশিখা ক্লাব প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা কোর্ট ফটকে সমাবেশে মিলিত হয়। এতে খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে শত শত শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসী অংশগ্রহণ করেন।

সমাবেশে জনোত্তম চাকমা সঞ্চালনায় এবং খাগড়াছড়ি কলেজের শিক্ষার্থী তুষন চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন খাগড়াছড়ি কলেজের শিক্ষার্থী সুমতি বিকাশ চাকমা, মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী মায়া চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী রহেল চাকমা। সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন টিএসএফ’র সদর থানা কমিটির সভাপতি আকাশ ত্রিপুরা, বিএমএসসি খাগড়াছড়ি জেলার সাধারণ সম্পাদক উক্যনু মারমা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুজন চাকমা।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ যখনই কিছুটা স্বস্তিতে থাকতে শুরু করেন তখনই একটি বিশেষ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপর হয়ে উঠে চুক্তি বিরোধী সংগঠন ইউপিডিএফ। চুক্তি পরবর্তী সময়ে যখন চুক্তি মোতাবেক সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার করা শুরু হয় তখনই তিন বিদেশী অপহরণের মাধ্যমে ‘অপারেশন উত্তরণ’র নামে সেনাশাসন জারি রাখার বৈধতা প্রদান করেছে ইউপিডিএফ। বিভিন্ন মিছিল সমাবেশে সেনাশাসনের বিরোধী কথা বললেও কাজেকর্মে সেনা শাসনকেই বৈধতা দিয়ে চলেছে এই সংগঠনটি। যার আরেকটি বড় প্রমাণ এই শিক্ষার্থীদেরকে অপহরণসহ ১ সপ্তাহের মধ্যে তিনটি অপহরণের ঘটনা।

বক্তারা আরও বলেন, আমরা শঙ্কিত হই এ কারণে যে, ইউপিডিএফ জন্মলগ্ন থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনীতির যে নোংরা কূটনীতি শুরু করেছিল তা আবারও শুরু করেছে। প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে শিক্ষার্থীদের অপহরণ করা হয়েছে।

সমাবেশে পাঁচ শিক্ষার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ইউপিডিএফকে দায়ী করে বক্তারা বলেন, ইউপিডিএফই পাঁচ শিক্ষার্থীকে অপহরণ করেছে। চার দিন পার হয়ে গেলেও এসব শিক্ষার্থীর খোঁজ মিলছে না। তাঁদের উদ্ধারে প্রশাসনও ব্যর্থ।

সমাবেশ থেকে অনতিবিলম্বে নিঃশর্তে অপহৃতদের মুক্তি প্রদান এবং ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত মোঃ ফাহিমকে গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টামূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়, অন্যথায় পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের মাধ্যমে অধিকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

অপহৃত শিক্ষার্থীরা হলেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র রিশন চাকমা, চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী মৈত্রীময় চাকমা ও অলড্রিন ত্রিপুরা, নাট্যকলা বিভাগের দিব্যি চাকমা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের লংঙি ম্রো। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

এছাড়া, বক্তারা রাঙ্গামাটির কাউখালীতে ১৬-১৭ এপ্রিল মধ্যরাতে মারমা তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ধর্ষক মোঃ ফাহিমকে অবিলম্বে গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টামূলক শাস্তির দাবি জানান এবং অন্যথায় পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী শিক্ষার্থীরা বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে বলে হুশিয়ারী প্রদান করেন।

অপরদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, চুক্তি বিরোধী ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন জায়গায় সশস্ত্রভাবে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাধা প্রদান করে। এছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কিছু ছাত্র-ছাত্রী অভিযোগ করেন, ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা মোবাইলে তাদেরকে অনুষ্ঠানে যোগ না দিতে বলেন। অনুষ্ঠানে যোগ দিলে অসুবিধা হবে বলে হুমকি প্রদান করে। আর অনুষ্ঠানে যোগদানকারী কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীকে ইউপিডিএফের পক্ষ থেকে খোঁজ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

More From Author