হিল ভয়েস, ১৫ এপ্রিল ২০২৫; রাঙ্গামাটি: গত ১৪ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) লংগুদু থানা শাখার যৌথ উদ্যোগে লংগুদুতে ” শহীদ দেববিকাশ চাকমা (সুবীর ওস্তাদ) স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট – ২০২৫ ” এর সমাপনী ও পুরষ্কার বিতরনী অনুষ্ঠান চিবেরেগা ফুটবল মাঠে সম্পন্ন হয়েছে।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) লংগদু থানা কমিটির ভূমি ও কৃষিবিষয়ক সম্পাদক বিনয় প্রসাদ কার্বারী। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন চিবেরেগা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জীবন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির লংগুদু থানা কমিটির সভাপতি দয়াল কান্তি চাকমা, লংগুদুর বড়াদম গ্রামের কার্বারী ও শহীদ সুবির ওস্তাদ-এর ছোট ভাই স্বপন বিকাশ চাকমা (কার্বারী)।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদ দেববিকাশ চাকমা (সুবির ওস্তাদ)সহ জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আত্মবলিদানকারী শহীদদের স্মরণে ১মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
প্রধান অতিথি বিনয় প্রসাদ কার্বারী বলেন, ‘শহিদ দেব বিকাশ চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে উজ্জ্বল একক নাম। নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে তিনি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়ক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন শুধুমাত্র নিপীড়ন থেকে মুক্তির জন্য। সুবির ওস্তাদদের মতো শত শত বীর যোদ্ধার অপরিসীম ত্যাগের বিনিময়ে ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর আমরা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পেয়েছি। চুক্তির পরবর্তীতে সুবির ওস্তাদদের মতো গেরিলারা অস্ত্র জমা দিয়েছে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসলে রাষ্ট্র তাদের জীবনকে নিরাপত্তাহীন অবস্থায় রেখেছে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ইউপিডিএফ নামক সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল সৃষ্টি করে দিয়ে একের পর এক প্রাক্তন শান্তিবাহিনীর গেরিলাদের হত্যার নীলনকশার পরিকল্পনা করে। শাসকগোষ্ঠীর সেই পরিকল্পনারই অংশ হিসেবে ইউপিডিএফের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা শান্তিবাহিনীর দুর্ধর্ষ গেরিলা যোদ্ধা সুবির ওস্তাদকে হত্যা করে। রাষ্ট্রীয় মদদে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা সুবির ওস্তাদদের মতো গেরিলা যোদ্ধাদের হত্যা করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন তথা আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আদায়ের আন্দোলন ধ্বংস করে দেওয়ার অপচেষ্টা করলেও জুম্ম তরুণ ছাত্র সমাজ সেটি হতে দেয়নি এবং ভবিষ্যতেও দিবে না। জনসংহতি সমিতি ও পিসিপির নেতৃত্বে পাহাড়ের জুম্ম ছাত্র-জনতা আবারও ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে এবং লড়াই সংগ্রামের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর এই সংগ্রামে সুবির ওস্তাদদের আত্মবলিদান অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।’
বিনয় প্রসাদ কার্বারী আরও বলেন, ‘এই ফুটবল টুর্ণামেন্ট শুধুমাত্র আনন্দ উৎসবের জন্যই নয়, এই টুর্ণামেন্টের মাধ্যমে লংগুদু এলাকাবাসী একত্রিত হওয়ার একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যেসব গ্রাম থেকে ফুটবল খেলায় অংশগ্রহণ করেছে; আমাদের পরস্পরের মধ্যকার ভাতৃত্ব বন্ধন ও আন্তরিকতা বৃদ্ধি পাবে।’
বিশেষ অতিথি বক্তব্যে জীবন চাকমা বলেন, ‘ফুটবল মানুষকে সুস্থ রাখে আনন্দ দেয়; এই টুর্ণামেন্টটি যেহেতু বিঝুর সময় আয়োজিত হয়েছে তাই এর আনন্দ বহুগুণে বেশি। আমরা যতই খেলাধুলা করিনা, আমাদের পড়ালেখা দিকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। তাই আমাদের লংগদু উপজেলায় সুবিধাবঞ্চিত ছাত্র ছাত্রীদের শিক্ষার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে চিবেরেগা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় উন্নয়নের দিকে সকলের সুনজর দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
বিশেষ অতিথি দয়াল কান্তি চাকমা শহিদ দেব বিকাশ চাকমা (সুবির ওস্তাদ) এর জীবনীর প্রতি আলোকপাত করতে গিয়ে বলেন, ‘শহিদ দেব বিকাশ চাকমা ১৯৭৫ সালে মহান পার্টির সাথে আন্দোলনে যুক্ত হন। সেই থেকে সংগ্রামী জীবনের শুরু থেকে পার্টির সিদ্ধান্ত মোতাবেক শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়ক বাহিনীর বিরুদ্ধে নিজের অস্তিত্ব ঠিকে রাখার লড়াই করেন এবং ১৯৯৭ সালে ২ ডিসেম্বর চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্যে দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আাসেন। কিন্তু সেই জুম্ম দালাল ইউপিডিএফের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ২০০১ সালে ২৩ ডিসেম্বর লংগদু তিনটিলায় নিজ বাড়ি গুলি করে হত্যা করে। রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ঠ সন্ত্রাসীরা সুবীর ওস্তাদকে শারীরিকভাবে হত্যা করতে পারলেও তার আদর্শকে ধ্বংস করতে পারেনি এবং পারবেও না। শহীদ সুবির ওস্তাদের আত্মত্যাগ ও সংগ্রামী চেতনা বর্তমান ছাত্র ও যুব সমাজকে আদর্শ হিসেবে নিতে হবে।’
‘ফাইনাল খেলায় চিবেরেগা (এ) টিম বড় মাহিল্যা টিমের সাথে মুখোমুখি হয় এবং খেলায় বড় মাহিল্যা টিম চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। মোট ১৩টি দলের অংশগ্রহণে টুর্ণামেন্টটি গত ১ এপ্রিল ২০২৫ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে গতকাল ১৪ এপ্রিল ২০২৫ সমাপ্ত হয়।
অনুষ্ঠানে পিসিপি লংগদু থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক স্বাগত চাকমা সঞ্চালনায় এবং পিসিপি লংগদু থানা শাখার সভাপতির রিন্টু মনি চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি লংগদু থানা শাখার দপ্তর সম্পাদক জিকো চাকমা।