কাউখালী-কলমপতি গণহত্যার স্মরণে পিসিপি চট্টগ্রাম পলিটেকনিক শাখার উদ্যোগে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও স্মরণসভা অনুষ্ঠিত

হিল ভয়েস, ২৬ মার্চ ২০২৫, চট্টগ্রাম: গতকাল ২৫ মার্চ কাউখালী কলমপতি গণহত্যার স্মরণে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম পলিটেকনিক শাখার উদ্যোগে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।

স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক থোয়াইউপ্রু মারমা, পিসিপি চট্টগ্রাম পলিটেকনিক শাখার সভাপতি সুমান চাকমা প্রমুখ।

চট্টগ্রাম পলিটেকনিক শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক চশৈশিং মারমার সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম পলিটেকনিক শাখার রত্নপ্রিয় চাকমা।

মোমবাতি প্রজ্বলন ও স্মরণসভায় শুরুতে সকল শহীদদের স্বরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। উক্ত স্বরণসভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম পলিটেকনিক শাখার সাধারণ সম্পাদক পূর্ণ জ্যোতি চাকমা।

স্বাগত বক্তব্যে পুর্ণজ্যোতি চাকমা বলেন, ১৯৮০ সালে ২৫ শে মার্চ রাঙ্গামাটির জেলাধীন কাউখালি উপজেলা কলমপতি ইউনিয়নে রাষ্ট্রিয় মদদে সেনাবাহিনীর গ্রামবাসীকে বিহার সংস্কারের নামে ডেকে সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাড় করিয়ে নির্মমভাবে ব্রাশফায়ার করে ৩০০ জন নিরীহ জুম্মজনগণকে হত্যা করে। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় সেটেলার বাঙালিদেরকে লেলিয়ে দিয়ে নিরীহ জুম্ম জনগণকে হত্যা করা হয়। আজ দীর্ঘ ৪৫ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো বিচার হয়নি।

তিনি আরো বলেন, ১৯৯৭ সালের ২ রা ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত যে ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম সেই চুক্তির মৌলিক ধারাগুলো এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। তাই চুক্তি বাস্তবায়নে সকলকে এগিয়ে এসে কাজ করতে হবে।
থোয়াই প্রু মারমা বলেন,আ পার্বত্য চট্টগ্রামে শুধু কলমপতি নয়, এভাবে অনেক গণহত্যা হয়েছিল যার কোনটাই বিচার হয়নাই। এইআ বিচার না হওয়া প্রধান কারণ হল পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন না করে সামরিক শাসন জিইয়ে রাখা। পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু চুক্তির যথাযথ বাস্তবতায়ন না হওয়ায় আজ জুম্মরা অনিরাপদ । তাই প্রত্যেক কর্মীকে আহ্বান জানায় ৯৭ এর চুক্তি বাস্তবায়নের বৃহত্তর আন্দোলনে শামিল হওয়ার জন্য।

সুমান চাকমা বলেন, কাউখালী কলমপতি আর্মি জোনের প্রধান এক ধর্মীয় সভার নামে কলমপতি ইউনিয়নের পাহাড়িদের জড়ো করান। সকাল বেলায় ঘোষণা দেওয়া হয় পোয়াপাড়া বৌদ্ধ মন্দিরের সংস্কার কাজে আর্মিরা সহায়তা করবে এবং সাধারণ পাহাড়িদের এই সংস্কার কাজের জন্য ডাকা হয়। সাধারণ পাহাড়িরা উপস্থিত হয় এবং তাদের এক লাইনে দাঁড়াতে বলা হয়। লাইনে দাঁড়ামাত্র আর্মি সদস্যরা তাদের উপর গুলিবর্ষণ করে। এতে সঙ্গে সঙ্গে মারা যায় বাজার চৌধুরী, কুমুদ বিকাশ তালুকদার, স্থানীয় স্কুল কমিটির সাধারণ সম্পাদক শরহিদর চাকমা সহ প্রায় শত ব্যক্তি। একই দিন পোয়াপাড়া হত্যাকান্ড শেষে প্রায় ৩০ জন পাহাড়ি নারীকে জোরপূর্বক আর্মি ছাউনিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্ধ্যায় শিশু ও বৃদ্ধাদের ছেড়ে দেয়া হলেও তরুণীদের ছেড়ে দেয়া হয়নি, যাদের হদিস আর পাওয়া যায় না।

আলোচনাসভা শেষে শহীদদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে সভাপতি বক্তব্যর মাধ্যমে স্মরণ সভা সমাপ্তি করা হয়।

More From Author