রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের অনুমোদন ছাড়া সাজেকসহ অন্যত্র পর্যটন ও বাণিজ্যিক স্থাপনা করা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত

হিল ভয়েস, ২৫ মার্চ ২০২৫, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের পূর্বানুমোদন ব্যতীত সাজেক পর্যটন সহ রাঙ্গামাটি জেলার অন্যান্য এলাকায়ও কোনো পর্যটন কেন্দ্র ও বাণিজ্যিক স্থাপনা করা যাবে না মর্মে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।

রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা খোন্দকার মোহাম্মদ রিজাইল করিম স্বাক্ষরিত এক আদেশে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয় বলে জানা গেছে।

উক্ত আদেশে বলা হয়, ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে রাঙ্গামাটি জেলার সাজেকসহ বিভিন্ন এলাকায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া অপরিকল্পিতভাবে বাণিজ্যিক ভবন/পর্যটন স্থাপনা নির্মিত হচ্ছে। এতে জেলা পরিষদ আইন ১৯৮৯ এর ২২ ধারার লংঘন হচ্ছে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং অগ্নি দুর্ঘটনা পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাই রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের অনুমোদন ব্যতিরেকে বাণিজ্যিক ভবন/পর্যটন স্থাপনা নির্মাণ না করা নির্দেশনা জারি করা হলো।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ মার্চ ২০২৫ ঢাকার বেইলী রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সের প্রশাসনিক ভবনে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও প্রতিনিধি, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের প্রতিনিধি, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রতিনিধি, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় উক্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় সম্প্রতি রাঙ্গামাটির সাজেকে পর্যটন স্থাপনা ও পাহাড়ি বসতিতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের কারণ ও প্রতিকার, পাহাড়ে পর্যটন ও পরিবেশ বিষয়ে উক্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো আব্দুল খালেক এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার, আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কে এস মং মারমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. রাশেদা , আমিনুল আসলাম, প্রদীপ কুমার মহোত্তম, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের ভারপ্রাপ্ত মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সুপর্না চাকমা, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ।

সভায় রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের হাতে পর্যটন বিভাগ হস্তান্তরিত বিভাগ হলেও জেলা পরিষদের কোনো পরামর্শ ছাড়াই যত্রতত্র পর্যটন এবং বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে এবং এতে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও স্থানীয় জাতিগোষ্ঠীর জান-মালের ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিমত ব্যক্ত করা হয়। বিষয়টি যেহেতু জেলা পরিষদের হাতে ন্যস্ত তাই বিষয়টি দেখাশোনা করতে জেলা পরিষদ দায়িত্ব নিয়ে শিগগিরই একটি প্রবিধানমালা তৈরি করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। সভায় আগামী ৭ কার্য দিবসের মধ্য জেলা পরিষদকে প্রবিধান তৈরি করে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়।

সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা পাহাড়ের জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়ন ও নিরাপত্তার বিষয়টি আগে প্রাধান্য দিতে হবে এবং পর্যটনের কারণে স্থানীয় পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ুক এবং মানুষের জানমালের ক্ষতি হয় এমন কোনো কার্যক্রম করতে দেওয়া হবে না বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কে এস মং মারমা বলেন, ‘২৪ ফেব্রুয়ারি সাজেকে আগুনের ঘটনায় আমাদের সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান মহোদয়ও বেশ তৎপর ছিলেন। সভায় খুব ভালো একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, দুপুরে পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক পর্যটনে সংঘটিত ভয়াবহ এক অগ্নিকান্ডে লুসাই জনগোষ্ঠীর ১৬টি এবং ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ১৯টি মোট ৩৫টি পরিবারের ঘরবাড়ি সম্পূর্ণভাবে পুড়ে যায়। এ ছাড়া উক্ত ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে অন্তত ৩৫টি কটেজ ও রেস্টুরেন্ট ভস্মীভূত হয় বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়।

More From Author