সজীব চাকমা
সম্প্রতি আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে শান্তির যে সুবাতাস শেখ হাসিনা ছড়িয়ে দিয়েছেন, তার পথ ধরেই এগিয়ে যাচ্ছে সম্ভাবনাময় পার্বত্য এলাকা। দুর্গম পাহাড়ে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি শেখ হাসিনা এখন উন্নয়নের স্বর্ণদুয়ার খুলে সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দিয়েছেন।’ (সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন ও দৈনিক যুগান্তর)।
তিনি আরও বলেছেন, ‘শান্তিচুক্তির অধিকাংশ শর্ত ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। ভূমি-সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের সমস্যাও নিষ্পত্তির প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। …সরকার এ অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকার স্বকীয়তা বজায় রেখে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাচ্ছে।’
গত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ণ এই নেতা ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তার বাসভাবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিন পার্বত্য জেলা ও কক্সবাজারের সড়ক উন্নয়ন বিষয়ক এক সভায় এসব কথা বলেন।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা হচ্ছে একটি রাজনৈতিক সমস্যা। এই রাজনৈতিক সমস্যাকে রাজনৈতিকভাবেই সমাধান করতে হবে। রাজনৈতিকভাবে সমাধান না করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে কখনোই এই সমস্যাকে সমাধান করা সম্ভব হয়। এতে বরঞ্চ সমস্যাটা আরো জটিল হতে বাধ্য এবং হচ্ছেও তাই। তাই ওবায়েদুল কাদেরের এই ‘উন্নয়নের স্বর্ণদুয়ার খুলে দেয়া’ বা ‘শান্তির সুবাতাস বইয়ে দেয়া’র বিষয়টি প্রথমত পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের প্রক্রিয়া কতটুকু এগিয়েছে তার আলোকে; দ্বিতীয়ত এসব উন্নয়ন কার্যক্রমে পার্বত্যবাসীর, বিশেষ করে জুম্ম জনগণের ভূমি ও সাংস্কৃতিক অধিকার এবং পার্বত্যাঞ্চলের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য কতটুকু বিবেচনায় নেয়া হয়েছে তার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা জরুরী।
বলাবাহুল্য, মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এইসব বক্তব্য পাহাড়ের মানুষদের, বিশেষ করে আদিবাসী জুম্মদের খুশি করা তো দূরের কথা যারপরনাই হতাশ ও বিরক্তির সৃষ্টি করেছে। তার এই বক্তব্য পার্বত্য চট্টগ্রামের বাস্তব পরিস্থিতিকে যেমনি তুলে ধরে না, তেমনি নিপীড়ন ও বঞ্চনার শিকার জুম্মদের অধিকার নিয়ে উপহাস করার সামিলও বটে। দীর্ঘ প্রায় ২৩ বছরেও পার্বত্য চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়িত না হওয়ার প্রেক্ষাপটে তার এমন উপচেপড়া আত্মতুষ্টি ও আত্মপ্রশংসা প্রকাশ বস্তুত পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের প্রকৃত অবস্থা ও চুক্তি স্বাক্ষরকারী জুম্ম জনগণের সাথে প্রতারণা বৈ কিছু নয়।
পাহাড়ের মানুষ এবং তাদের শুভাকাঙ্খী যারা আছেন, তারা জানেন বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি কী শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় উপনীত হয়েছে। পাহাড়ে কী ধরনের উন্নয়ন হচ্ছে, কাদের উন্নয়ন হচ্ছে! তারা জানে, সরকারি ও বেসরকারি উন্নয়নের নামে কীভাবে এখানকার ভূমির সন্তান আদিবাসী জুম্মদের প্রতিনিয়ত উচ্ছেদ ও ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। আজকে পাহাড়ের সাধারণ মানুষ জানে, কিভাবে চুক্তির পূর্ববর্তী সময়ের ন্যায় রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে একদিকে জুম্মদের বাক স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে, অপরদিকে তাদের উপর দমন, পীড়ন ও নির্যাতনের ষ্টিমরোলার চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। একদিকে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও সরকারী মহলের লোকদের দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে, অপরদিকে বাঙালি সেটেলার ও তাদের বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক সংগঠন এবং সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ইত্যাদি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী লেলিয়ে দিয়ে জুম্মদের উচ্ছেদ ও ধ্বংসের ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
বস্তুত পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়ন ও পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়ন নিয়ে আওয়ামীলীগ নেতা ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের উক্ত বক্তব্য শুধু গতানিুগতিকই নয়, বাস্তববিবর্জিত, ডাহা মিথ্যা ও গভীর প্রতারণামূলকও বটে। এই ধরনের বক্তব্য পাহাড়ের মানুষের জন্য আশার বাণী তো নয়ই, বরং ‘অশনি সংকেত’ ছাড়া কিছু নয়। কারণ এধরনের বক্তব্য সমস্যাকে অস্বীকার করে সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে বরং ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সমস্যাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার ইঙ্গিতই বটে।
সরকার নিজেই চুক্তি লংঘন করছে এবং চুক্তির উল্টো পথে হাঁটছে
মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে শান্তির সুবাতাস শেখ হাসিনা ছড়িয়ে দিয়েছেন’ এবং ‘শান্তিচুক্তির অধিকাংশ শর্ত ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে’ বলে যে বয়ান দিয়েছেন, বাস্তবে তার কোনো ভিত্তি আছে বলে মনে করা যায় না। পার্বত্য সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান, এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নের লক্ষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও শান্তিবাহিনীর মধ্যে সংঘাত বন্ধ করে বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও বিগত দীর্ঘ ২৩ বছরেও সেই চুক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করেনি সরকার। পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের কথা বাদ দিলেও যে মৌলিক বিষয়গুলোর উপর চুক্তির কাঠামো নির্মিত হয়েছে, সেই মৌলিক বিষয়ের একটিও বাস্তবায়ন করেনি সরকার।
এমনকি চুক্তির সেই মৌলিক বিষযগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও এ পর্যন্ত সরকারের কোন প্রকার আন্তরিক উদ্যোগ দৃশ্যমান হয়নি। শুধুমাত্র করছি, করবো বলেই দুই যুগ পার করে দিয়েছেন। আর ‘শান্তিচুক্তির অধিকাংশ শর্ত ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে’ বলে যে বক্তব্য মন্ত্রী দিয়েছেন, সেটাও শুভঙ্করের ফাঁকি ছাড়া কিছু নয়। কেননা, সরকারের হিসাবে দেখা যায় যে, যে ধারাগুলো বাস্তবে আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে অথবা কেবলমাত্র আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে কার্যকর করা হয়নি, সেই ধারাগুলোও সরকার সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হয়েছে বলে মিথ্যা প্রচার করে থাকে। এক্ষেত্রে জনসংহতি সমিতির বিশ্লেষণ করে ও উদাহরণ দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, সরকার প্রকৃতপক্ষে চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে মাত্র ২৫টি ধারা সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করেছে এবং অবশিষ্ট ৪৭টি ধারার মধ্যে কিছু ধারা আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে, অধিকাংশ সম্পূর্ণভাবে অবাস্তবায়িত অবস্থায় রাখা হয়েছে।
বিগত ২৩ বছরেও পার্বত্য সমস্যার অন্যতম মূল সমস্যা ভূমি সমস্যার সমাধান হয়নি। চুক্তি অনুযায়ী ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির কথা থাকলেও একটি ভূমি বিরোধেরও সুরাহা হয়নি, একজন জুম্মও তাদের বেদখল হওয়া ভূমি ফেরত পায়নি। চুক্তি অনুযায়ী ৬টি সেনানিবাস বাদে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সকল অস্থায়ী সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার করার শর্ত থাকলেও চার শতাধিক ক্যাম্প এখনো বহাল তবিয়তে সক্রিয় রয়েছে। ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থী ও হাজার হাজার অভ্যন্তরীণ জুম্ম উদ্বাস্তু পরিবারকে তাদের জায়গা-জমি ফেরত দিয়ে পুনর্বাসনের কথা থাকলেও অধিকাংশ শরণার্থী এখনও তাদের জায়গা ফেরত পায়নি এবং অভ্যন্তরীণ জুম্ম উদ্বাস্তু একটি পরিবারও তাদের জায়গা ফেরত ও পুনর্বাসনের সুবিধা পায়নি।
পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা ও ভোটার তালিকা বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়নি। এখনও পর্যন্ত স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে ভোটার তালিকা প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে ২৩ বছরেও আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা যায়নি। চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রযোজ্য সকল আইন সংশোধন ও হালনাগাদ করা হয়নি। চুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম (উপজাতি) অধ্যুষিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য বজায় রাখার বিধান থাকলেও তার কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামে অনুপ্রবেশকারী বাঙালি সেটেলারদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরের স্ব স্ব জায়গায় পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।
উল্লেখ্য যে, বিগত ১২ বছর ধরে একনাগাড়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন এই সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকলেও এই সময়কালে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের অবশিষ্ট বিষয়গুলো হস্তান্তরের উদ্যোগও দেখা যায়নি। এমনকি এই সময়কালে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদকে কার্যত অকার্যকর করে রেখেছে এবং চুক্তি স্বাক্ষরকারী জনসংহতি সমিতিক দূরে ঠেলে দিয়েছে।
অপরদিকে সরকার শুধু চুক্তি বাস্তবায়নের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে তা নয়, সরকার নিজেই চুক্তি লংঘন করে একের পর এক চুক্তি বিরোধী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে চলেছে এবং চুক্তির উল্টো পথে হেঁটে চলেছে। এমনকি সরকার এই ধরনের চুক্তিবিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে মদদও দিয়ে চলেছে। বলতে গেলে সরকার শুরু থেকেই চুক্তি লংঘনের অপচেষ্টা শুরু করে। ২০০১ সালে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন প্রণয়নের সময়ই সরকার নগ্নভাবে চুক্তি লংঘনের নজির সৃষ্টি করে। সেসময় সরকার জনসংহতি সমিতি ও আঞ্চলিক পরিষদের সাথে যথাযথ পরামর্শ ব্যতিরেকে চুক্তির সাথে সাংঘর্ষিকভাবে ভূমি কমিশন আইন প্রণয়ন করে। পরবর্তীতে বহু আন্দোলনের পর প্রায় ১৫ বছর পর ২০১৬ সালে সরকার চুক্তির সাথে সামঞ্জস্য রেখে ভূমি কমিশন আইন প্রণয়ন করে। কিন্তু আইন করার পরও দীর্ঘ ৪ বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে অথচ এখনও পর্যন্ত ভূমি কমিশন আইনের কার্যবিধিমালা প্রণয়ন করেনি সরকার। ফলে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির বিচারিক কার্যক্রম এখনো শুরু করা সম্ভব হয়নি।
চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামের সাথে সম্পৃক্ত যেকোনো ধরনের আইন প্রণয়ন বা গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম হাতে নিতে গেলে আঞ্চলিক পরিষদের মতামত বা পরামর্শ গ্রহণের বিধান রয়েছে। কিন্তু সরকার সেসবের তোয়াক্কা না করে একতরফাভাবে ২০১৪ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আইন প্রণয়ন ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন সংশোধন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রণয়ন ও স্থাপন, মেডিকেল কলেজ স্থাপন কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে। এইসব আইন ও বিধানে এবং নীতিমালায় পার্বত্য চুক্তি ও স্থানীয় জনগণের স্বার্থ ও অধিকারকে ব্যাপকভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ স্থাপন করতে গিয়ে সরকার জোরপূর্বক স্থানীয় জনগণের ভূমি অধিগ্রহণ করে।
চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন, আইনশৃঙ্খলা ও সাধারণ প্রশাসন ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষ শাসনব্যবস্থার সর্বোচ্চ সংস্থা আঞ্চলিক পরিষদ কর্তৃক সমন্বয়, তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ করার বিধান থাকলেও সরকার সেসব বিধানকে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করে চলেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষদ সম্বলিত বিশেষ শাসনব্যবস্থা পাকাপোক্ত হতে না পারায় এবং খোদ সরকারি বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তা লংঘনের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন মহল কর্তৃক উন্নয়নের নামে জুম্মদের ভূমি বেদখল ও স্বভূমি থেকে উচ্ছেদ কার্যক্রম উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
উন্নয়নের স্বর্ণদুয়ার নয়, উন্নয়নের মরণফাঁদ
সরকার একদিকে চুক্তির বাস্তবায়ন বন্ধ রেখেছে এবং চুক্তির বিভিন্ন বিধান ও চুক্তির ফলে সৃষ্ট আইন লংঘন করে চলেছে, অপরদিকে একতরফাভাবে চুক্তির সাথে বিরোধাত্মক ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী তথাকথিত বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে চলেছে। চুক্তির ফলে সৃষ্ট বিশেষ শাসন ব্যবস্থা আঞ্চলিক পরিষদকে ঠুঁটো জগন্নাথ করে রেখে দিয়েছে এবং তিন পার্বত্য জেলা পরিষদকে জনগণের জবাবদিহিবিহীন এবং সরকারী দলের লোকদের লুটপাটের এক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। এছাড়া সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠানসমূহ সম্পূর্ণ নিজের দলের স্বার্থে এবং পার্বত্য চুক্তির মূল চেতনাকে উপেক্ষা করে একতরফাভাবে ব্যবহার করে চলেছে। ফলে এখানে যে কোনো উন্নয়ন প্রকল্পে জুম্ম জনগণ তথা স্থানীয় অধিবাসীদের অধিকার ও স্বার্থকে পদদলিত করা হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়নের নামে যে বরাদ্দ দেয়া হয়ে থাকে, যে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়ে থাকে, সেই উন্নয়ন বরাদ্দ ও প্রকল্পের চাবিকাঠি জুম্মদের হাতে থাকে না এবং সেই উন্নয়নের সুফল জুম্মদের স্বার্থে পরিচালিত হয় না। বস্তুত চুক্তির মূল চেতনাকে পদদলিত করে আঞ্চলিক পরিষদ, জনসংহতি সমিতি ও জুম্ম জনগণের মতামত ও অধিকারকে উপেক্ষা করে সরকার একের পর এক তথাকথিত এসব উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছে।
ফলে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে যে ‘উন্নয়নের স্বর্ণদুয়ার খোলা হয়েছে’ বলে বলছেন তা প্রকৃতপক্ষে আদিবাসী জুম্মদের জন্য নয়। পাকিস্তান সরকার যেভাবে উন্নয়নের নামে কাপ্তাই বাঁধ মরণ ফাঁদ তৈরি করেছিল, বর্তমান সরকারও স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়ন বন্ধ রেখে এবং চুক্তি লংঘন করে জুম্মদের ধ্বংসের জন্য একের পর এক ‘উন্নয়নের মরণফাঁদ’ তৈরি করে চলেছে।
মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উক্ত ভিডিও কনফারেন্সে তিন পার্বত্য জেলার সড়ক উন্নয়ন বিষয়ে উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলার সীমান্ত ঘেঁষে প্রায় ৩১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। এর মধ্যে ১০০ কিলোমিটার লিংক রোড এবং ২১৭ কিলোমিটার সীমান্ত বরাবর কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।’ বলাবাহুল্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদসহ জনমতকে উপেক্ষা করে, সর্বোপরি পার্বত্য চুক্তি ও আঞ্চলিক পরিষদ আইনকে লংঘন করে সরকার ও সেনাবাহিনী একতরফাভাবে এইসব সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ হাতে নিয়েছে। জানা গেছে, এই সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে শত শত জুম্ম পরিবারের আবাসভূমি, জুমভূমি বেহাত হবে এবং তাদের গড়ে তোলা অনেক বাগান-বাগিচা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এক সমীক্ষায় জানা যায় যে, কেবল রাজস্থলী-বিলাইছড়ি-জুরাছড়ি-বরকল-ঠেগামুখ সড়ক নির্মাণ করা হলে ১১৪ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে, এতে ৫৬৪ পরিবার প্রভাবিত/ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ২৪১টি বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ১০টি সাংস্কৃতিক অবকাঠামো এবং ৩২টি পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এছাড়া তিন পার্বত্য জেলায়ই সেনাবাহিনী, বিজিবি নিজেরাই চুক্তি লংঘন করে উন্নয়নের নামে শত শত স্থানীয় জুম্মদের ভূমি বেদখল ও উচ্ছেদ করে বিলাসবহুল পর্যটন ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি আবার নতুন করে বান্দরবানের নীলগিরিতে স্থানীয় জুম্ম অধিবাসীদের উচ্ছেদ ও জীবন-জীবিকাকে বিপন্ন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও সিকদার গ্রুপের যৌথ উদ্যোগে চিম্বুক পাহাড়ে উচ্চাভিলাষী বিশাল পর্যটন কমপ্লেক্স প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যেখানে মূল হোটেল ভবনের সাথে পর্যটকদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ১২টি পৃথক ভিলা ও আধুনিক ঝুলন্ত গাড়ি (ক্যাবল কার) থাকবে। জানা গেছে, তারই অংশ হিসেবে সেখানে পাঁচ তারকা ম্যারিয়ট হোটেল এবং বিনোদন পার্কের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। বস্তুত এভাবে উন্নয়নের নামে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও তাদের মদদপুষ্ট বিভিন্ন মহল কর্তৃক ইচ্ছেমত আইন ও স্থানীয় জনগণের মানবাধিকারকে পদদলিত করে বিভিন্ন পাহাড়, ভূমি দখল করে জুম্মদের বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। অথচ প্রায়ই প্রচার করা হয়ে থাকে এসবই করা হচ্ছে নাকি পার্বত্য এলাকার মানুষের উন্নয়নের স্বার্থে।
বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদও নিজেই অতিসম্প্রতি উন্নয়নের নামে পরিবেশের ক্ষতি করে, নির্বিচারে পাহাড় ধ্বংস করে একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সড়ক নির্মাণ করে চলেছে। আসলে সরকার, সরকারি মহল ও রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক এধরনের জুম্মদের জন্য ধ্বংসাত্মক উন্নয়ন কার্যক্রমের দৃষ্টান্ত ভুরি ভুরি দেয়া যাবে।
বস্তুত উন্নয়নের নামে সাম্প্রতিককালে সরকার জুম্মদের উপর যে আগ্রাসন ও জবরদস্তি চালাচ্ছে, তা এক কথায় ‘সর্বাত্মক আদিবাসী জুম্ম বিধ্বংসী ষড়যন্ত্র’ বা এক গণবিরোধী ঔপনিবেশিক আগ্রাসন ছাড়া আর কিছু নয়। এসব জনবিচ্ছিন্ন উন্নয়নের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামকে জুম্ম শূন্য করে এ অঞ্চলকে সম্পূর্ণভাবে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করা।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থিতি বিস্ফোরন্মুখ
সরকার যতই শাক দিয়ে পঁচা মাছ বা কুলো দিয়ে মরা হাতি ঢাকার চেষ্টা করুক, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রকৃত অবস্থাকে সে কখনোই আড়াল করতে পারবে না। কারণ পার্বত্য সমস্যার সমাধান, এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নের কথা বলে যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সরকার, সেই চুক্তি বাস্তবায়ন না করে, জুম্ম জনগণকে বঞ্চিত করে এবং চুক্তি স্বাক্ষরকারী জনসংহতি সমিতিকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করে কখনো স্থায়ীত্বশীল সমাধান, শান্তি ও উন্নয়ন আশা করা যায় না। সরকার ও রাষ্ট্রীয় বাহিনী বর্তমানে চুক্তি ও জুম্ম জনগণের সাথে প্রতারণা করে জনসংহতি সমিতি ও জুম্ম জনগণকে আবার অস্তিত্ব রক্ষার কঠিন সংগ্রামের দিকে ধাবিত করছে। সরকার ও রাষ্ট্রীয় বাহিনী নিজেই পার্বত্য চুক্তির সাথে প্রতারণা করে শান্তির পায়রাকে গলা টিপে ধরেছে। তারা একদিকে বহিরাগত বাঙালি সেটেলারদের দিয়ে জুম্মদের ভূমি বেদখলসহ চুক্তিবিরোধী নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে, অপরদিকে সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে দিয়ে জুম্মদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের রাজত্ব বজায় রেখে চলেছে।
ফলে ওবায়দুল কাদের তার বক্তব্যে চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ‘দুর্গম পাহাড়ে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেয়ার’ যে কথা বলেছেন, সেটা কথার ফুলঝুরি ছাড়া কিছু নয়। সাম্প্রতিককালে উন্নয়নের নামে সরকারের যে উন্নয়ন আগ্রাসন, নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসী দমনের নামে চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলনকারী জনসংহতি সমিতির নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ জনগণকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে যেভাবে হত্যা, গ্রেপ্তার, দমন, পীড়ন ও নির্যাতন শুরু করেছে, তাতে সরকার ‘শান্তির বার্তা’ নয়, বরং ‘হিংসার বার্তা’ই ছড়িয়ে দিচ্ছে পাহাড়ে। বস্তুত সরকার ও রাষ্ট্রীয় বাহিনী জুম্ম জনগণকে আজ যেভাবে নজিরবিহীন জাতীয় অস্তিত্ব ও জন্মভূমির অস্তিত্ব সংকটের মুখে দাঁড় করিয়েছে তাতে পরিস্থিতি এক বিস্ফোরন্মুখ অবস্থায় উপনীত হয়েছে।
পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা, পরিস্থিতিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা, সর্বোপরি পার্বত্য চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রম নির্বিঘ্নে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে আন্দোলনরত জুম্মদেরকে ক্রিমিনালাইজেশনের অংশ হিসেবে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বিগত ছয় মাসে সেনাবাহিনী, বিজিবি, গোয়েন্দা বাহিনী ও পুলিশ কর্তৃক ৭২টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এই ৭২টি ঘটনায় ২ জনকে বিচার বহির্ভূত হত্যা, ২৭ জনকে অবৈধ গ্রেফতার, ৮ জনকে সাময়িক আটক, ২২ জনকে শারীরিক নির্যাতন ও হয়রানি, ৫৩টি বাড়ি তল্লাসী, ৩টি নতুন ক্যাম্প স্থাপন, সেনাবাহিনীর উন্নয়নে ১৬৭ পরিবার ক্ষতির মুখে পড়ার ঘটনা ঘটেছে।
আরও উদ্বেগজনক ব্যাপার হল, প্রাণঘাতি কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যেও সাম্প্রতিককালে প্রশাসনের সহায়তায় ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী ও বহিরাগত ভূমিদস্যু কর্তৃক ভূমি জবরদখল, জুম্ম গ্রামবাসীদের নানাভাবে হামলা, হয়রানি ও উচ্ছেদকরণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত ছয় মাসে বাঙালি সেটেলার কর্তৃক এই ধরনের ২৩টি ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এই ২৩টি ঘটনায় ৪ জন জুম্ম নারী ও শিশুর উপর সহিংসতা, জুম্মদের উপর ২টি সাম্প্রদায়িক হামলা, ভূমি জবরদখল কিংবা বেদখলের চেষ্টায় ৮১৮ পরিবার ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখী, জুম্ম গ্রামবাসীদের ৩,০২১ একর জায়গা জবরদখল, ভূমি বিরোধকে কেন্দ্র করে জুম্মদের বিরুদ্ধে ২টি মামলা দায়ের ও ২ জনকে গ্রেফতার এবং প্রায় ৫,০০০ একর রাবার বাগান পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
বলাবাহুল্য, পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান সামগ্রিক পরিস্থিতি পার্বত্য চট্টগ্রামকে ও জুম্ম জনগণকে আবার ১৯৭৫ পরবর্তী যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, ঠিক সেই পরিস্থিতির দিকেই ঠেলে দিয়েছে।
শেষ কথা
বস্তুত বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম রাজনৈতিক সমস্যার রাজনৈতিক উপায়ে সমাধানের পথ পরিহার করেছে এবং পূর্ববর্তী সামরিক সরকারগুলোর মতো সামরিক উপায়ে ও ডেভেলাপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে পার্বত্য সমস্যা সমাধানের পথ কার্যত বেছে নিয়েছে। সরকারের সেই ফ্যাসীবাদী ষড়যন্ত্রকে ধামাচাপা দিতে ও ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়েদুল কাদের ‘উন্নয়নের স্বর্ণদুয়ার’-এর প্রলেপ দেয়ার অপচেষ্টা করেছেন।
এটা অত্যন্ত দু:খজনক ও উদ্বেগজনক, যে সরকার পার্বত্য সমস্যা রাজনৈতিকভাবে সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, সেই সরকারই আজ চুক্তি বাস্তবায়নের বিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষর করে যে সরকারের প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার গ্রহণ করেছেন, সেই প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলেই আজ পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে অশান্তির দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। এটা আজ দিবালোকের মত স্পষ্ট যে, সংঘাতের পরিবর্তে শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক উপায়ে সমাধানের কথা বলে চুক্তি স্বাক্ষরকারী সরকারই আজ সামরিক বাহিনী দিয়ে চুক্তি বিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রম এবং জনসংহতি সমিতি ও জুম্ম জনগণের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে।
বলাবাহুল্য, বাস্তব অবস্থাকে অস্বীকার করে, এ বিষয়ে মিথ্যাভাষণ দিয়ে কখনো বাস্তব অবস্থার বাস্তব সমাধান পাওয়া যায় না। সরকারকে অবশ্যই চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রম থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং পার্বত্য সমস্যাকে সামরিক উপায়ে সমাধানের সহিংস পথ পরিহার করতে হবে। বস্তুত পার্বত্য চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নসহ জুম্ম ও স্থায়ী অধিবাসীদের অধিকার নিশ্চিতকরণ ছাড়া পার্বত্য সমস্যা সমাধানের কোন বিকল্প নেই। তাই সরকার ও মাননীয় মন্ত্রীকে আহ্বান জানাই, এসব মিথ্যাচার বন্ধ করুন, সত্য ও বাস্তব পরিস্থিতিকে তুলে ধরুন এবং সততা ও আন্তরিকতার সাথে চুক্তি যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণ করুণ। নচেৎ ভবিষ্যত যেকোনো গুরুতর পরিস্থিতির জন্য আপনরাই দায়ী থাকবেন।