বাঘাইছড়িতে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

হিল ভয়েস, ১০ মার্চ ২০২৫, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন কমিটি উদ্যোগে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গত ৮ই মার্চ ২০২৫ সকাল ১০:০০ ঘটিকায় সময়ে বাঘাইছড়ি উপজেলাধীন বাঘাইছড়ি গ্রামের কমিউনিটি সেন্টারে আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন বাঘাইছড়ি থানার পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির সভাপতি লক্ষীমালা চাকমা, সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ এর বাঘাইছড়ি থানার সভাপতি চিবরন চাকমা এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব সমাপ্তি দেওয়ান।

“নারী সমাজের অধিকার, মর্যাদা ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করি, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে অধিকতর ভূমিকা রাখি” এই শ্লোগানে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বাঘাইছড়ি থানা কমিটির সভাপতি পুলকজ্যোতি চাকমা এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক বাঘাইছড়ি উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী সুমিতা চাকমা, ৩২ নং বাঘাইছড়ি ইউনিয়নের মেম্বার প্রতিনিধি রাশিকা চাকমা, অধিকারকর্মী প্রহর চাকমা, বাঘাইছড়ি থানা পিসিপির প্রতিনিধি সুদর্শন চাকমা এবং বাঘাইছড়ি থানা যুব সমিতির সভাপতি পিয়েল চাকমা প্রমূখ।

এসময় বক্তারা বলেন, বিগত সময়ের তুলনায় বর্তমানে আমাদের জুম্ম সমাজে নারীদের অবস্থান রাজনৈতিকভাবে, সামাজিকভাবে এবং অর্থনৈতিকসহ বিভিন্নক্ষেত্রে আগের চাইতে অনেক পরিবর্তন চোখে পড়ে। এই পরিবর্তন নিঃসন্দেহে যথেষ্ট ইতিবাচক বলা যায়। তবে সেই সত্তর দশকের আগে বা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি না হওয়ার আগে আমাদের জুম্ম নারীদের যে ভূমিকা, যে সংগ্রামী চেতনা সেটা বর্তমানে অনেকটা ম্লান হয়ে গেছে। এই বাস্তবতা থেকে অবশ্যই উত্তরণ ঘটাতে হবে। কারণ আমাদের যে আন্দোলন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের যে আন্দোলন সেখানে যদি নারী-পুরুষ উভয়ের সমান অংশগ্রহণ আমরা নিশ্চিত করতে না পারি তাহলে সেই আন্দোলনে আমাদের ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।

বক্তারা আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়াতে দিনকে দিন পাহাড়ে বিশেষত জুম্ম নারীরা অধিক নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের নির্মম শিকারের তালিকার প্রথম সারিতে জুম্ম নারীদের রাখা হয়েছে, যেটা খুবই ভয়াবহ।

তাঁরা আরও বলেন, বর্তমানে দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চলছে এবং ৫ই আগস্ট বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সরকার কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করে দেশকে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া অব্যহত রেখেছেন। সেটা ভালো কথা। যুগোপযোগী উদ্যোগ বটে। কিন্তু অতি দুঃখের সাথে বলতে হয়, পাহাড়ে দীর্ঘ দুই যুগের অধিক যে সমস্যা পড়ে রয়েছে এবং সেই সমস্যা সমাধানের প্রধান ও একমাত্র যে উপায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন, সে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার গতিকে জোরদার করার জন্য ইতিবাচক বা চোখে পড়ার মত কোন পদক্ষেপ সরকার গ্রহণ করেছেন বলে এখনো পর্যন্ত আমাদের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না।

বক্তারা বলেন, আজকে পাহাড়ের জুম্ম জনগণ বাদেও সমতলের ৭টি বিভাগে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন সহ বিদেশের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ, পেশাজীবী সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন ও সংস্থা থেকে বারে বারে অন্তর্বর্তীকলীন সরকারকে পাহাড়ের সমস্যাকে অতিদ্রুত সমাধানের জন্য আহ্বান জানানো হলেও বোধহয় সরকার সেটা মোটেও আমলে নিচ্ছেন না এবং নিছক একটি মামুলি সমস্যা ভেবে নিয়ে অতিসরলভাবে এড়িয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সরকারকে এবং রাষ্ট্রের যারা নীতিনির্ধারক আছেন, যারা পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে দীর্ঘদিন ধরে জিইয়ে রেখেছেন তাদের এটা বুঝতে হবে, পাহাড়ের মুক্তিকামী, অধিকারকামী জুম্ম জনগণ মৌলিক অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়। বাঁচার মত করে বেঁচে থাকতে চায়। নিরাপদে সম্মানের সাথে বসবাস করতে চায়। এবং এসবের জন্য তাঁরা প্রয়োজনে সবকিছু করতে প্রস্তুত রয়েছে।

আলোচনা সভায় শুরুতে স্বাগতিক বক্তব্য রাখেন, ৩২ নং বাঘাইছড়ি ইউনিয়নের মেম্বার প্রতিনিধি রাশিকা চাকমা।

More From Author