কোভিড -১৯ সমতলে ৬২% আদিবাসীকে চরম দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছেঃ আইপিডিএস

হিল ভয়েস, ২৭ আগস্ট ২০২০, ঢাকা: আজ বৃহস্পতিবার ওয়েবিনারের আলোচনা সভায় ইন্ডিজিনাস পিপলস ডেভেলাপমেন্ট সার্ভিসেসের (আই পি ডি এস) পরিচালক সঞ্জীব দ্রং এর সভাপতিত্বে আলোচক হিসেবে যুক্ত ছিলেন নাগরিক উদ্যোগের পক্ষ থেকে জাকির হোসেন, গ্রাম বিকাশ কেন্দ্রের সমাজ উন্নয়ন পরিচালক সারা মারান্দি, আই পি ডি এসের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর রিপন চন্দ্র বানাই প্রমুখ।

অনলাইন আলোচনায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সংগঠনের পরিচালক সঞ্জীব দ্রং। তিনি বলেন করোনার কারণে সমতল অঞ্চলের ৬২% শতাংশ আদিবাসী চাকুরী হারিয়েছে। যারা বেশিরভাগ শপিংমল, বিউটি পার্লার, গৃহ পরিচারিকা, ড্রাইভার, দিন মজুর, সিকিউরিটি গার্ড, বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় খণ্ডকালীন এবং শ্রমিক হিসাবে কাজ করত।

লিখিত প্রবন্ধে আরও বলা হয়, ৯২% সমতলের আদিবাসী আয় রোজগার কমেছে। করোনা মহামারির কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও ব্যক্তিমালিকানাধীন চাকুরি ও কাজ হারিয়ে নতুন করে কমপক্ষে ৫০০,০০০ আদিবাসী “নতুন দরিদ্র” মানুষ হিসেবে পরিণত হয়েছে। এই অংশটি আগে গরিব ছিল না। এ সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

এছাড়াও লিখিত প্রবন্ধে সঞ্জীব দ্রং, করোনাকালীন সময়ে সমতলের আদিবাসীদের জন্য নামসহ বিশেষ অর্থনৈতিক প্রণোদনার ব্যবস্থা করা, চাকুরী হারিয়ে নতুন দরিদ্র আদিবাসীদের জন্য জন্য বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ প্রদান যার ৫০% হবে অনুদান এবং ৫০% স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ প্রদান, সমতল অঞ্চলের কমপক্ষে ১০,০০০ থেকে ২০,০০০ আদিবাসী তরুণ-তরুণীর জন্য স্বল্পমেয়াদী কর্মসংস্থান করা, বিউটি পার্লারে কর্মরত আদিবাসী নারীদের জন্য বিশেষ এককালীন আর্থিক সহায়তা প্রদান, সরকারি বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় (বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী, মাতৃত্ব ভাতা ইত্যাদি) অধিক সংখ্যক আদিবাসী প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করা, সরকার যে ৫০ লক্ষ দরিদ্রকে ২,৫০০ টাকা করে প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এই তালিকায় কমপক্ষে ৫০,০০০ আদিবাসীকে যুক্ত করা এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক একটি মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।

আলোচনায় নাগরিক উদ্যোগের জাকির হোসেন বলেন, সমতলে বসবাসকারী মানুষের দীর্ঘমেয়াদী সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং আর্থিকভাবে সহায়তার জন্য উপকার ভোগীদের উপজেলা ভিত্তিক পৃথক পৃথক তথ্য সংগ্রহের উপর জোর দেন। তিনি আরও বলেন আদিবাসীরা উচ্চ সুদের হারে লোন নিতে বাধ্য হচ্ছে এবং তার জন্য আগেই ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। তারা কয়েক মাসের মধ্যেই গুরুতর সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। ইতিমধ্যে দরিদ্ররা আরও দরিদ্র হয়ে উঠবে।

গ্রাম বিকাশ কেন্দ্রের সমাজ উন্নয়ন পরিচালক সারা মারান্দি বলেছেন, আদিবাসীরা খাদ্যের ঘাটতির মুখোমুখি হচ্ছে, যার ফলে তারা অপুষ্টিতে ভুগছে। সরকারের উচিত তাদের জীবন বাঁচানোর জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি আইপিডিএস মাইনোরিটি রাইটস্ গ্রুপ ইউরোপের সহযোগিতায় বাংলাদেশের সমতল ভূমিতে বসবাসরত আদিবাসীদের জীবনে কোভিড-১৯ এর প্রভাব বিষয়ক একটি সমীক্ষা চালান। সমতলের ২৮ টি জেলার ৩৫ টি সমতলের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ১,২০৫ টি পরিবারের মধ্যে এ সমীক্ষাটি চালানো হয়। আজ বৃহস্পতিবার আই পি ডি এস তার সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেন।

More From Author