অস্তিত্ব রক্ষায় আদিবাসী শিক্ষার্থীদেরকে এগিয়ে আসতে হবে: রাবিতে পিসিপি’র সাধারণ সম্পাদক রুমেন চাকমা

হিল ভয়েস, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, রাজশাহী মহানগর শাখা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবারের যৌথ আয়োজনে নবীন বরণ, বিদায় সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ খ্রি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র মিলনায়তনে রাবি ও রুয়েটের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের নবীন আদিবাসী শিক্ষার্থীদের বরণ ও ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আদিবাসী শিক্ষার্থীদের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য(প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন মজুমদার, রাজশাহী বিভাগীয় সাংস্কৃতিক একাডেমির পরিচালক হরেন্দ্র নাথ সিং, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রুমেন চাকমা প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, রাজশাহী মহানগর শাখার সভাপতি বিজয় চাকমা এবং সঞ্চালনা করেন চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সফল চাকমা।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন মং ই সিং মারমা। নবীন শিক্ষার্থীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন পাইছাসিং মারমা ও ক্রে ক্রা হ্লা মারমা এবং বিদায়ী শিক্ষার্থীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন সুরেন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা ও চন্দ্রলাল ত্রিপুরা। নবীন শিক্ষার্থীদের মানপত্র পাঠ করেন জেমি সাইলুক তঞ্চঙ্গ্যা ও বিদায়ী শিক্ষার্থীদের মানপত্র পাঠ করেন চেসী ত্রিপুরা এবং মানপত্র গ্রহণ করেন নবীন শিক্ষার্থী সুজিয়ন চাকমা ও বিদায়ী শিক্ষার্থী টিউলিপ চাকমা।

অধ্যাপক ড. মাঈন উদ্দিন বলেন, সৎ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। আমাদের দেশে সৎ ও নিষ্ঠাবান মানুষের বড়ই অভাব রয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিবাসী শিক্ষার্থীদের যেকোনো প্রয়োজনে আমার প্রশাসনিক দপ্তরের পাশে থাকবে।

অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন মজুমদার বলেন, শিক্ষার্থীদের অর্জিত জ্ঞান মানব কল্যাণে যাতে কাজে লাগে সেভাবে ভূমিকা রাখতে হবে। আদিবাসী শিক্ষার্থীদের আবাসনের সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা করা হবে।

হরেন্দ্র নাথ সিং বলেন, আদিবাসী শিক্ষার্থীদের মধ্যে একতাবদ্ধতা, পারস্পরিক আন্তরিকতার সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। স্বপ্ন দেখতে হবে, স্বপ্ন পূরণে পরিশ্রম করতে হবে।

রুমেন চাকমা বলেন, দেশের বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যতজন জুম্ম শিক্ষার্থী পড়াশোনা করি কতজনই নিজের সমাজের জন্য কাজ করছি, নিজ জাতির ইতিহাস সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখি।

স্ব জাতির ইতিহাস, সংস্কৃতি ও লড়াই সম্পর্কে ব্যাপক একটা অংশের সম্যক ধারণা না থাকা আমাদের মতো পিছিয়ে পড়া জাতিগোষ্ঠীর জন্য খুব একটা সুখকর নয়। এজন্য আমাদেরকে ব্যাপক অধ্যয়ন করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, আদিবাসীদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করার রাজনীতি বিগত সরকারগুলোও করেছিল, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও তা করে যাচ্ছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পাহাড়ে সেটেলারদের হামলায় ৪ জন আদিবাসী নিহত এবং ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকায় আদিবাসীদের উপর সেটেলারদের ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় সরকার কোন ধরণের কার্যকরী পদক্ষপ গ্রহণ করেনি বরং অতিসম্প্রতি সরকার এসব সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কথা অস্বীকার করেছে।

রুমেন চাকমা বলেন, আদিবাসীদের অস্তিত্ব ও অধিকার অস্বীকারের যে রাজনীতি চলমান রয়েছে সেটির বিরুদ্ধে পাল্টা হেজিমনি তৈরি করতে হবে। নিজেদের কথা নিজেদেরকেই বলতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বক্ষেত্রে লেখালেখি চলমান রাখতে হবে। আমাদের আত্মপরিচয়হীনতার কথা, অধিকারহীনতার কথা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মাঝে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। সর্বোপরি এসব বিষয় উপলদ্ধি করে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষিত তরুণ ছাত্র সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।

অধিকতর পিছিয়ে পড়া আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য রুম বরাদ্দ এবং রাকসুতে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য কমপক্ষে দুইটি আসন সংরক্ষিত রাখার জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি পিসিপির সাধারণ সম্পাদক আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আদিবাসী শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।

More From Author