চট্টগ্রামে পিসিপি’র ৩১তম বার্ষিক শাখা সম্মেলন ও কাউন্সিল ২০২৫ সম্পন্ন

হিল ভয়েস, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, চট্টগ্রাম: আজ ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম মহানগর শাখা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ৩১তম বার্ষিক শাখা সম্মেলন ও কাউন্সিল ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়।

“সকল প্রকার ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের বৃহত্তর আন্দোলনে ছাত্র সমাজ অধিকতর সামিল হউন” উক্ত স্লোগানকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত সম্মেলন ও কাউন্সিলটি চট্টগ্রাম নগরস্থ আন্দরকিল্লা আর্বান সেন্টারে আজ সকাল ১০:০০ ঘটিকায় অনুষ্ঠিত হয়।

সম্মেলন সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক জুয়েল চাকমা। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নিপন ত্রিপুরা , হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক উলিসিং মারমা , পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ বিকাশ চাকমা প্রমুখ।

পিসিপি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বিদায়ী কমিটির সভাপতি অন্তর চাকমার সভাপতিত্বে ও চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সহ-সভাপতি সৌরভ চাকমা ও চবি শাখার সাধারণ সম্পাদক অন্বেষ চাকমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি হ্লামিও মারমা এবং প্রতিনিধি বক্তব্য রাখেন খুলশী থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক থোয়াইউ প্রু মারমা, চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট শাখার সহ-সভাপতি সুমান চাকমা , চবি ২ নং গেইট শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক অপূর্ব চাকমা। সম্মেলনে বার্ষিক সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করেন চবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুভাষ চাকমা ও চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আদর্শ চাকমা। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সকল শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

প্রধান অতিথি বক্তব্যে জুয়েল চাকমা বলেন, “আজ আমাদের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। জুম্ম জনগণকে প্রতিনিয়ত নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ, সেনা নিপীড়ন,নারীদের শ্লীলতাহানি ও অনিরাপত্তাসহ নানা ধরণের অসহনীয় নিপীড়ন অত্যাচারের মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করতে হচ্ছে। তাই ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে জুম্ম জাতীয় অস্তিত্ব সমুন্নত করার জন্য আদর্শিক চেতনায় জাগরিত হয়ে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার বৃহত্তর আন্দোলনে ছাত্র সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা যদি আত্মমর্যাদা, আত্মপরিচয় ও অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকতে চায় তাহলে সংগ্রামের বিকল্প নেই। তাই বর্তমান ছাত্র সমাজকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ভবিষ্যৎ পার্বত্য চট্টগ্রামকে তারা কীভাবে দেখতে চায়।”

তিনি আরও বলেন, “জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ছাত্র-যুব সমাজকে ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হতে হবে। আমাদের জাতীয় জীবন আজ সংকটের মুখে সেটা প্রজন্মকে অনুধাবন করতে হবে। এই সংকট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে ছাত্র ও যুব সমাজকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে। চুক্তি করেও সরকার কেন অধিকার দিতে চায় না এটা আমাদের বুঝতে হবে। সর্বোপরি এম এন লারমার আদর্শকে ধারণ করে লড়াই সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হবে।”

নিপন ত্রিপুরা বলেন, “কঠোর লড়াই ব্যতীত আমাদের কোনো বিকল্প পথ নেই। জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী দেশে যে মৌলবাদী শক্তির উত্থান ও সাম্প্রদায়িক রুপ তা আমাদের জন্য শুভকর নয়। তাই কর্মীদের সংগঠনের নীতি আদর্শের ভিত্তিতে সংগঠিত হয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে আত্মপ্রত্যয়ী হতে হবে এবং জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ছাত্র ও যুব সমাজকে পার্টির নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধকরণে কাজ করতে হবে।

সন্তোষ বিকাশ চাকমা বলেন, “পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ জুম্ম জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে এক কান্ডারী সংগঠন। এই সংগঠনের মাধ্যমে ছাত্র সমাজের মধ্য থেকে আদর্শিক সংগ্রামী নেতৃত্ব গড়ে ওঠে। যুগে যুগে নিপীড়িত জাতিসমূহের লড়াই-সংগ্রামে তরুণরাই সামনের সারিতে ছিল। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের অধিকার আদায়ের সনদ পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনেও এই ছাত্র সমাজের এগিয়ে আসা এখন সময়ের দাবি।”

উলিসিং মারমা বলেন, “বাংলাদেশের শাসন কাঠামোতে ক্ষমতার পালা বদল হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। বিগত সময়ে আদিবাসীদের উপর উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর হামলা এবং তার বিচারহীনতা প্রমাণ করে এই রাষ্ট্র আমাদের জন্য আন্তরিক নয়। কাজেই বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে জাতীয় অস্তিত্ব সমুন্নত করতে কঠোর সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামের পশ্চাৎপদ নারী সমাজকেও অধিকার সম্পর্কে সোচ্চার হয়ে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই সংগ্রামে এগিয়ে আসতে হবে।”

স্বাগত বক্তব্যে হ্লামিও মারমা বলেন, “আত্মকেন্দ্রীকতা ও জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা মানুষকে অন্ধকারের দিকে ধাবিত করে। তাই ছাত্র ও যুব সমাজকে আত্মকেন্দ্রিকতাকে পরিহার করে জাতির সামগ্রিক স্বার্থে ঐতিহাসিক দায়-দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হবে। জাতির অস্তিত্ব রক্ষার ঐতিহাসিক দায়িত্ব তরুণদের নিতে হবে।”

এরপর হ্লামিও মারমাকে সভাপতি, আদর্শ চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও আশুতোষ তঞ্চঙ্গ্যা সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে ২৫ সদস্য বিশিষ্ট চট্টগ্রাম মহানগর শাখা, অন্বেষ চাকমাকে সভাপতি, সুমন চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও এনতেস চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে ২৫ সদস্য বিশিষ্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, অপূর্ব চাকমাকে সভাপতি, প্রিয় জ্যোতি চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও প্রেঙ নি ম্রোকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ২নং গেইট শাখা, সুমন চাকমাকে সভাপতি, পূর্ণ জ্যোতি চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও চ শৈ মারমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট শাখা, আশুতোষ তঞ্চঙ্গ্যাকে সভাপতি, জ্যোতিময় তঞ্চঙ্গ্যাকে সাধারণ সম্পাদক, আইশু ত্রিপুরা সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট খুলশী থানা শাখা কমিটি ঘোষণা করা হয়।

পিসিপি, চবি শাখা ও চবি ২নং গেইট শাখার নবনির্বাচিত কমিটিকে শপথবাক্য পাঠ করান পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রুমেন চাকমা এবং চট্টগ্রাম মহানগর শাখা ও চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট শাখা ও খুলশী থানা শাখার নবনির্বাচিত কমিটিকে শপথবাক্য পাঠ করান পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা।

পরিশেষে অন্তর চাকমার সভাপতির বক্তব্যের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম মহনগর ও চবি শাখার ৩১তম শাখা সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

More From Author