পাঠ্যপুস্তকের প্রচ্ছদে “আদিবাসী” শব্দযুক্ত গ্রাফিতি বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ তিন আদিবাসী সংগঠনের

হিল ভয়েস, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, বিশেষ সংবাদদাতা : জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কর্তৃক ২০২৫ সালের নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় পত্রের বইয়ের প্রচ্ছদ থেকে “আদিবাসী” শব্দযুক্ত গ্রাফিতি বাতিলের সিদ্ধান্তে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, আদিবাসী যুব পরিষদ ও আদিবাসী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি যৌথভাবে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।

আজ সোমবার (১৩ জানুয়ারি) জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক বিভূতী ভূষণ মাহাতোর স্বাক্ষরিত এক যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তীর মাধ্যমে কমিটিত্রয় এই নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। একই সাথে তারা বলে, এনসিটিবি’র এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের আদিবাসী জনগণের জন্য অসম্মানকর, অপমানজনক ও বৈষম্যমূলক আচরণ যা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মূল চেতনার পরিপন্থী।

যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাঁওতাল, মুন্ডা, ওরাঁও, মাহালী, বেদিয়া, কুর্মি, গঞ্জু, তুরি, ঘাসিমালো, বড়াইক, কোল, লোহার, গারো, হাজং, বানাই, পাহাড়িয়া, ভূমিজ, কড়া, নুনিয়া, মুসহরসহ সমতল ও পাহাড়ে ৫০ টির অধিক আদিবাসী জাতিসত্তার প্রায় ৪০ লাখের অধিক জনসংখ্যা বসবাস করে। আদিবাসীরা দীর্ঘ সময় ধরেই আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতির জন্য দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু বরাবরই আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর জনগণ বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার হয়ে আসছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী বর্তমান অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশ্যে প্রথম ভাষণে আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। এতে আদিবাসীরা আশার আলো দেখেছিল যে বর্তমান সরকার আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবেই অভিহিত করবে। কিন্তু, এনসিটিবি নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক থেকে “আদিবাসী” শব্দযুক্ত গ্রাফিতি বাতিলের এহেন সিদ্ধান্ত শুধু আদিবাসীদেরই নয় বরং অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যকেও অসম্মান ও অবমাননা করেছেন।

আদিবাসীদের অস্বীকার করে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব নয়। তাই এনসিটিবির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে “আদিবাসী” শব্দযুক্ত গ্রাফিতি বহাল রাখা, এবং পাঠ্যপুস্তকে আদিবাসীদের সংগ্রামের যথাযথ ইতিহাস, আত্মপরিচয় সম্পর্কিত বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

সংগঠনসমূহের পক্ষে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিচিত্রা তির্কি, সাধারণ সম্পাদক নরেন চন্দ্র পাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক সূভাষ চন্দ্র হেমব্রম, আদিবাসী যুব পরিষদের সহ-সভাপতি নবদ্বীপ লাকড়া, আদিবাসী ছাত্র পরিষদের সভাপতি অনিল গজাড়, শীতকুমার উরাং, সাংগঠনিক সম্পাদক মনিকা মারান্ডী প্রমূখ এই প্রতিবাদ ও দাবি জানিয়েছেন।

More From Author