হিল ভয়েস, ২ ডিসেম্বর ২০২৪, বরকল: আজ ২ ডিসেম্বর ২০২৪, সোমবার সকাল ১০ ঘটিকায় বরকল উপজেলা মাঠে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৭তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ বরকল থানা শাখার উদ্যোগে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত গণসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সদস্য বিধান চাকমা। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সদস্য শ্যাম রতন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির বরকল থানা শাখার সভাপতি জ্ঞান জ্যাতি চাকমা, কার্বারী এসোসিয়েশন বরকল থানা শাখার সভাপতি নন্দ বিকাশ চাকমা, বড় হরিনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নিলাময় চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ম্রানুচিং মারমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অন্তর চাকমা প্রমূখ।
উক্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ বরকল থানা শাখার সভাপতি মিন্টু চাকমা এবং সঞ্চালনা করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ বরকল থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক ইলেন চাকমা।
প্রধান অতিথি বিধান চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ প্রত্যাশা করেছিল চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিজের স্বকীয়তা বজায় রাখতে পারবে, নিজের ভূমিতে ফিরতে পারবে কিন্তু সেই স্বপ্নকে ভেঙে সরকার আমাদের সাথে প্রতারণা করলো। দীর্ঘ ২৭ বছর পরও চুক্তি আজও অবাস্তবায়িত। পার্বত্য চট্টগ্রামে ভাগ কর, শাসন কর নীতিতে প্রয়োগ করে চুক্তি বিরোধী নানা দল সৃষ্টি করা হয়েছে। চুক্তির বিপক্ষের শক্তিগুলো চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে ধ্বংস করার জন্য এখনও পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে জোরদার করতে তরুণ সমাজকে ঐতিহাসিক দায়িত্ব কাঁধে নিতে হবে। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানে পার্বত্য চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান।
শ্যাম রতন চাকমা বলেন, বিগত সময়ের ফ্যাসিবাদী সরকার দীর্ঘ ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকলেও চুক্তির বাস্তবায়নের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ ভূমির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের মৌলিক সমস্যার অন্যতম ভূমি সমস্যা সমাধানের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ আর চুপ করে বসে থাকবে না, জুম্ম জনগন আবারো চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রস্তুত।
জ্ঞান জ্যোতি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকারের সনদ। চুক্তি বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীর মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়িত হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ দেশের অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখতে পারবে।
ম্রানুচিং মারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ আজও নিজ ভূমিতে পরাধীন। স্বাধীন একটা দেশে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও দ্বৈত শাসন চলমান। পার্বত্য চট্টগ্রামে এক নীতি, সমতলে আরেক নীতি। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মাধ্যমে জুম্ম জনগনের অধিকার নিশ্চিত করার কথা ছিল। কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগের সরকার দীর্ঘ ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকলেও চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করেনি। চুক্তি বাস্তবায়ন করার সদিচ্ছা সরকারের না থাকলে সরকারকে চুক্তি বাস্তবায়ন করতে বাধ্য করতে হবে। জুম্ম জনগণ আর পিছিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। চুক্তি বাস্তবায়নের বৃহত্তর আন্দোলনে ছাত্র যুব সমাজকে অধিকতর সামিল হতে হবে।
নন্দ বিকাশ চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি চট্টগ্রামের ভিন্ন ভাষাভাষী চৌদ্দটি জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকার৷ চুক্তির বাস্তবায়নের মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনার কথা ছিল। চুক্তির সম্পাদিত করার জন্য যত পরিমান ত্যাগ করতে হয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়নের জন্য তার চেয়ে বেশি ত্যাগ করতে হবে এবং জুম্ম জনগনকে সেই লক্ষ্যে প্রস্তুত থাকতে হবে।
নিলাময় চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ; এটিকে পিছিয়ে রেখে দেশ এগিয়ে যেতে পারবে না। বর্তমান সরকার বৈষম্য বিমোচন করার লক্ষ্যে ক্ষমতায় এসেছে। বর্তমান সরকারের কাছে অনুরোধ যেন চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের শোষণ বঞ্চনা দূর করা হয়।
অন্তর চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে বিগত সরকারগুলো নানা গড়িমসি করেছিল। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি শুধু কাগজে কোনো দলিল নয় এটি পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের মৌলিক অধিকারের সনদ। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সাথে জুম্ম জনগনের আত্মত্যাগ, শহীদদের রক্ত মিশে রয়েছে; তাই এই চুক্তিকে কখনো বৃথা যেতে দেয়া যাবে না। চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে নস্যাৎ করে দিতে চুক্তি বিরোধী অপশক্তিগুলো নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। জুম্ম জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার জন্য চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে। চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জুম্ম জনগনকে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে চুক্তি বাস্তবায়নের বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল হতে হবে।
উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৭তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত গণসমাবেশে বরকল উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সহস্রাধিক ছাত্র-জনতা অংশগ্রহণ করে।