হিল ভয়েস, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, বিশেষ প্রতিবেদক:
পাহাড়ি শরণার্থী পুনর্বাসন
পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
পার্বত্য চুক্তির ‘ঘ’ খন্ডের ১নং ধারা অনুযায়ী এবং সরকার ও শরণার্থী নেতৃবৃন্দের মধ্যে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় ৯ মার্চ ১৯৯৭ তারিখে স্বাক্ষরিত ২০ দফা প্যাকেজ চুক্তি মোতাবেক ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে ১২,২২২ টি পাহাড়ি শরণার্থী পরিবারের ৬৪,৬০৯ জন শরণার্থী প্রত্যাবর্তন করে।
টাস্ক ফোর্সের মাধ্যমে প্রত্যাগত শরণার্থীদের অধিকাংশ অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধাদি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের জমি ও ভিটেমাটি ফেরৎ দেওয়া হয়নি। তাদের জায়গা জমি ও গ্রাম এখনো সেটেলারদের দখলে থাকায় তাদের পুনর্বাসন এখনো যথাযথভাবে হতে পারেনি।
জুম্ম শরণার্থী কল্যাণ সমিতির মতে, ৯,৭৮০ পরিবার তাদের ভিটেমাটি ও জায়গা-জমি ফেরৎ পায়নি ও অন্যান্য দাবিসমূহ বাস্তবায়ন করা হয়নি। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাধীন ফেনী উপত্যকার মাটিরাংগা, মানিকছড়ি ও রামগড় উপজেলায়, মাইনী উপত্যকার দীঘিনালা ও চেঙ্গী উপত্যকার মহালছড়ি উপজেলায় এবং রাংগামাটি পার্বত্য জেলাধীন মাইনী ও কাচলং উপত্যকার লংগদু উপজেলায় অবস্থিত ভারত প্রত্যাগত শরণার্থীদের ৪০টি গ্রাম, ভিটে-মাটি ও জায়গা-জমি এখনো সেটেলার বাঙালিদের পুরো দখলে রয়েছে।
এছাড়া ত্রিপুরা রাজ্যের শরণার্থী শিবির থেকে স্বউদ্যোগে ও ১৬-দফা প্যাকেজ চুক্তি মোতাবেক প্রত্যাগত প্রায় ৫৪ হাজার শরণার্থী রেশন প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত রয়েছে। এসব শরণার্থীদের রেশন প্রদানের জন্য ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী ও আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু পুনর্বাসন সংক্রান্ত টাস্ক ফোর্সের সভায় আলোচনা অনুষ্ঠিত হলেও সে বিষয়ে কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
টাস্ক ফোর্স গঠিত হলেও পার্বত্য চুক্তির অন্যতম স্বাক্ষরকারী জনসংহতি সমিতির সাথে কোনরূপ আলোচনা না করে একতরফাভাবে গত ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে সর্বশেষ গঠিত টাস্ক ফোর্স কমিটিতে তিন পার্বত্য জেলার ডেপুটি কমিশনারদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আরো উল্লেখ্য যে, গত ২২ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে টাস্কফোর্সের সর্বশেষ সভা (১০ম সভা) অনুষ্ঠিত হওয়ার চার বছর পর টাস্কফোর্স বিধি-বহির্ভুতভাবে অতি স্বল্প নোটিশে গত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সভা ডেকেছে। ফলে জনসংহতি সমিতি ও জুম্ম শরণার্থী কল্যাণ সমিতির প্রতিনিধিবৃন্দ সভায় উপস্থিত থাকতে পারেননি।
বস্তুত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির স্বাক্ষরের পর বিগত ২৭ বছরেও চুক্তির মৌলিক বিষয়সহ দুই-তৃতীয়াংশ ধারা অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়েছে।