জুম পাহাড়ে বুনোফুল ফোটাতে ‘জুম একাডেমি’র পথচলার চার বছর

হিল ভয়েস, ১২ নভেম্বর ২০২৪, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আদিবাসী শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত শিক্ষামূলক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান জুম একাডেমির ৪র্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ।  “বুনোফুল ফুটতে থাকুক, জুম পাহাড়ের বুকে”—এই মূলমন্ত্র ধারণ করে জুম একাডেমির পথচলা শুরু হয়। করোনা মহামারীর শেষের দিকে, যখন লকডাউন শিথিল করা হয়, তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষানুরাগী শিক্ষার্থীর উদ্যোগে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের নিয়ে ২০২০ সালে স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান জুম একাডেমি যাত্রা শুরু করে। এর পুরো নাম “জুম একাডেমি—ফ্রি কোচিং ফর ইন্ডিজেনাস স্টুডেন্টস।”

বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিবাসী শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে এবং স্বল্পমূল্যে “নার্সিং ও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি কোচিং” পরিচালনা করছেন। মূলত প্রান্তিক আদিবাসী শিক্ষার্থী ও আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য এই কোচিং প্রোগ্রামটি পরিচালিত হয়। জুম একাডেমির মূল উদ্যোক্তারা হলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের সাবেক শিক্ষার্থী রুমেন চাকমা, ব্যাংকিং এন্ড ইন্সুরেন্স বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের সাবেক শিক্ষার্থী শ্রাবণ চাকমা এবং ভুগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের সাবেক শিক্ষার্থী নবোদয় চাকমা।

পার্বত্য চট্টগ্রামের পিছিয়ে পড়া আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উচ্চশিক্ষার সারথী হওয়া এবং সবুজ পাহাড়ে শিক্ষার আলো ছড়ানোর প্রত্যয়ে জুম একাডেমি কাজ করে যাচ্ছে। কোচিং প্রোগ্রামের পাশাপাশি প্রান্তিক পাহাড়ের এলাকায় উচ্চশিক্ষা বিষয়ক সেমিনার এবং শিক্ষাসামগ্রী বিতরণসহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে জুম একাডেমি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত জুম একাডেমির সাবেক শিক্ষার্থী ও শুভাকাঙ্খীরা ভলান্টিয়ার হিসেবে এতে যুক্ত রয়েছেন।

চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে জুম একাডেমি পথচলায় পাঁচ বছরে পদার্পণ করেছে। চার বছরের সফলতা ও ব্যর্থতায় অর্জনের ঝুলিতে অনেক কিছু যুক্ত হয়েছে। এক ঝাঁক মেধাবী আদিবাসী শিক্ষার্থীর স্বপ্নের সারথী হয়ে উঠেছে জুম একাডেমি। চার ব্যাচের অসংখ্য কৃতি শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার লক্ষ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। তারই ধারাবাহিকতায়, জুম একাডেমির পঞ্চম ব্যাচের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি কোচিং প্রোগ্রাম চলমান রয়েছে। জুম একাডেমির প্রথম ব্যাচ থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউটে ৩৩ জন, ২য় ব্যাচ থেকে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯ জন, ৩য় ব্যাচের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০ জন এবং ৪র্থ ব্যাচ থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০ জন ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এছাড়াও চার ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বেসরকারি নার্সিং কলেজে ভর্তি যোগ্যতা অর্জন করে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করছেন।

জুম একাডেমির ৩য় ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একাউন্টিং ও ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী টিংটিংউ রাখাইন বলেন, “জুম একাডেমি শুধুমাত্র একটি প্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি পরিবার। আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার স্বপ্ন পূরণে জুম একাডেমি অনেক সহায়তা প্রদান করেছে। এজন্য আমি জুম একাডেমির মেন্টরদের কাছে কৃতজ্ঞ।”

জুম একাডেমির প্রাক্তন মেন্টর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী এঞ্জেলা আকাঙ্খা থিগিদি বলেন, “জুম একাডেমি আমাদের ভালোবাসার নাম। ২০২০ সালে বন্ধু রুমেন চাকমার আহ্বানে একটি অনলাইন আড্ডায় মিলিত হয়ে ভাবতে থাকি কিভাবে পাহাড়ের আদিবাসী শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির ক্ষেত্রে সহায়তা করা যায়! সেই ভাবনা থেকে জুম একাডেমির পথচলা শুরু হয়।”

জুম একাডেমির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী রুমেন চাকমা বলেন, “জুম পাহাড়ের প্রান্তিক পর্যায়ের অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল ও মেধাবী আদিবাসী শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা লাভে সহায়তা করার জন্য জুম একাডেমির যাত্রা শুরু হয়। আমাদের এই প্লাটফর্মের উদ্দেশ্য হচ্ছে আদিবাসী শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে যেন দেশ, সমাজ ও জাতিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য ভূমিকা রাখতে পারে সে লক্ষ্যে সহায়ক ভূমিকা পালন করা। উচ্চ শিক্ষিত আদিবাসী তরুণেরা প্রান্তিক অঞ্চলে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়ে পাহাড়কে আলোকিত করবে সেটা আমরা প্রত্যাশা করি।”

জুম একাডেমি পরিচালক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের শিক্ষার্থী অন্তর চাকমা বলেন, “জুম একাডেমি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি কোচিং এর পাশাপাশি জুম পাহাড়ের প্রান্তিক অঞ্চলে শিক্ষা সেমিনার, শিক্ষা ক্যাম্পেইন সহ শিক্ষামূলক নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। একটি সমাজ ও জাতিকে এগিয়ে নিতে শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই প্রান্তিক অঞ্চলের আদিবাসী শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা লাভে উৎসাহিত করতে এবং সহায়তা প্রদানে জুম একাডেমি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।” তিনি জুম একাডেমির পথচলায় যারা সবসময় সহায়তা প্রদান করে এসেছেন তাদের সকলের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

More From Author

+ There are no comments

Add yours