শ্রী অমরজিৎ
ভূমিকা:
স্মরণাতীত কাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে ১১টি আদিবাসী জাতি বসবাস করে আসছে। সেসব জাতি হল- চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, ম্রো, খিয়াং, চাক, খুমি, তঞ্চগ্যা, বম, লুসাই ও পাংখো । এই আদিবাসী জাতিসমূহের বসবাস পাহাড়ে এবং সেকারণেই এসব জাতির মানুষেরা সকলেই জুম চাষের সাথে সম্পৃক্ত ছিল এবং এখনো আছে। এইজন্য এই আদিবাসী জাতিসমূহকে ‘জুম্ম’ হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। এই আদিবাসী জাতিগুলি অতীতে স্ব স্ব অঞ্চলে পৃথকভাবে বসবাস করতো। গ্রামগুলি ছিল পৃথক। এক একটি জাতির এক একটি গ্রাম তাদের নিজস্ব অঞ্চলে। এটি শুধুমাত্র পৃথক জাতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তা নয়, একই জাতির বিভিন্ন গোত্রের (clan) ক্ষেত্রেও একইভাবে প্রযোজ্য ছিল। একই জাতির হলেও অতীতে স্ব স্ব গোত্রের মানুষেরা মিলে গ্রাম গড়ে তুলতো। বিভিন্ন গোত্রের মানুষেরা একই গ্রামে বসবাস করতো না। এমন কী এক সময় একই জাতির বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতো না। তবে সমাজ বিকাশের সাথে সাথে এক গোত্রের সাথে অপর গোত্রের মধ্যেকার বিবাহের প্রচলন শুরু হয়। পাকিস্তান আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামের কতিপয় আদিবাসী জাতির মধ্যে জাতিভিত্তিক সংগঠন গড়ে উঠে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল জাতি ও সকল শ্রেণীর মানুষকে নিয়ে সংগঠন (রাজনৈতিক সংগঠন) করার প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করে জুম জনগণের প্রিয় নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা, সংক্ষেপে এম এন লারমা। তাঁর উদ্যোগে ১৯৭২ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি গঠিত হয়। এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হলেন বীরেন্দ্র কিশোর রোয়াজা এবং প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হলেন মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা।
স্মরণাতীত কাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে ১১ আদিবাসী বসবাস করে আসলেও ব্রিটিশের সময়কালে আরও ৩টি আদিবাসী জাতি যুক্ত হয়। তারা হলেন- অহমীয়া, গুর্খা ও সাঁওতাল। এদেরকে ব্রিটিশরাই পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়ে আসে তাদের বিভিন্ন কাজ সম্পাদনের স্বার্থে। ব্রিটিশ চলে যাবার পর এই আদিবাসী জাতির মানুষেরা স্ব স্ব অঞ্চলে ফিরে যায়নি। তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকে এবং বর্তমানেও তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এদিকে এ অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে বাঙালী জনগোষ্ঠীর মানুষেরাও বসতি শুরু করে। ব্রিটিশ আমলে যারা এসেছে তাদেরকে স্থায়ী বাঙালী আর এর পরে বিশেষত জিয়াউর রহমান কর্তৃক পর পর যে চার লক্ষাধিক সেটেলার পার্বত্য চট্টগ্রামে বসতি করা হয় তাদেরকে অস্থায়ী বাসিন্দা বা সেটেলার বলা হয়। জিয়াউর রহমান ও অন্যান্য শাসনামলে পার্বত্য চট্টগ্রামে পরবর্তীতে আরও সেটেলার বসতিস্থাপন করা হয়। বেশ কিছু রোহিঙ্গাও পার্বত্য চট্টগ্রামে বসতিস্থাপন করা হয়। মোঘল আসার আগে বর্তমান চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম ত্রিপুরা রাজা ও আরাকান রাজার অধীনে শাসিত হয়ে আসছিল। মোঘল আসার পর চট্টগ্রাম ছিল ত্রিপুরা রাজা, আরাকান রাজা ও মোঘল সম্রাটের মধ্যেকার ত্রিমুখী লড়াই ক্ষেত্র। তখন চট্টগ্রাম কখনো ত্রিপুরা রাজা, কখনো আরাকান রাজা, কখনো মোঘল সম্রাটের অধীনে ছিল। ১২০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে চাকমা রাজা বান্দারবান জেলার বর্তমান আলিকদম উপজেলায় রাজধানী স্থাপন করেন। পরবর্তীতে রাঙ্গুনিয়া (শুকবিলাস) ও রাউজানে রাজধানী স্থানান্তর করেন। বাস্তবতার কারণে চাকমা রাজা শেষত বর্তমান রাঙ্গামাটিতে স্থায়ীভাবে রাজধানী স্থাপন করেন।
বিভেদ ও ঐক্য প্রসঙ্গে:
ইউপিডিএফ অপপ্রচার করে চলেছে- তারা এগত্তর বা ঐক্য চায়, কিন্তু জেএসএস চায় না। কিন্তু ইতিহাস কী বলে? ইতিহাস বলে- পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জাতি ও শ্রেণীর মানুষকে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি গঠিত হয়েছিল। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জাতি ও শ্রেণীর মানুষকে জেএসএস-ই প্রথম জুম্ম জাতীয়তাবাদ ও প্রগতিশীল আদর্শের ভিত্তিতে একই সংগঠনের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ করতে সম্ভব করে তুলেছিল। এর আগে পার্বত্য চট্টগ্রামের সংগঠন ছিল জাতিভিত্তিক এবং তখন জুম্ম জাতিসমূহের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ কোনো সংগঠন ছিল না। অপরদিকে ইউপিডিএফ সংগঠনের জন্ম- বিভেদ সৃষ্টি করার মধ্য দিয়ে। কিন্তু জেএসএস এর জন্ম ঐক্য প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। প্রসিত-রবি গং পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, পাহাড়ি গণপরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনকে ভেঙে এর একাংশকে নিয়ে ১৯৯৮ সালে ইউপিডিএফ নামক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে।
এই চিত্র থেকেই পরিষ্কার যে, বিভেদের মধ্য দিয়েই ইউপিডিএফ-এর জন্ম। ইউপিডিএফ এই বিষয়টিকে লুকানোর জন্য এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য তাদের সুবিধামত করে সময়ে সময়ে এগত্তর বা ঐক্য স্লোগান তুলে ধরে। প্রকৃতপক্ষে ঐক্য হওয়ার লক্ষ্যে তারা এই স্লোগান তুলে ধরে না। জনগণের দৃষ্টি ফেরানোর জন্য তারা গোয়েবলসের নীতি অনুসরণ করে বার বার ঐক্য এর কথা প্রচার করতে থাকে। ঐক্য এর বিপরীতে বিভেদ সৃষ্টি হলে একটি জাতির শক্তি ক্ষয় হয়- এটি যদি তারা আগেভাগে ভাবতো এবং জাতির ভবিষ্যৎ কল্যাণ সম্পর্কে চিন্তা করতো তাহলে কখনো তারা ইউপিডিএফ-এর জন্ম দিত না। ‘United we stand, divided we fall’- এই কথা তারাও ভাল করে জানে। তথাপি তারা দেশি-বিদেশী ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে এবং ক্ষমতা ও অর্থের প্রতি মোহগ্রস্ত হয়ে পড়ার কারণে তারা জেনে শুনে বিষ করেছে পান। সেজন্যে ইউপিডিএফ প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের অনেক সংগঠক বিষয়টি বুঝতে পেরে পার্টি ছেড়ে চলে গেছে। এদের কেউ কেউ জেএসএস এর সাথে যুক্ত হয়েছে, আবার কেউ কেউ বিদেশে চলে গেছে, কেউ কেউ নিষ্ক্রীয় হয়ে গেছে।
ইউপিডিএফ-এর নেতারা হলেন গোয়েবলস-এর ভক্ত। তারা বিশ্বাস করেন- অনবরত প্রচারের মধ্য দিয়ে মিথ্যাকে সত্যে পরিণত করা সম্ভব। কিন্ত তারা ভুলে জান যে, জনগণ বোকা নয়। তাছাড়া মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে কোনো কিছুকে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায় না। মিথ্যাকে প্রতিনিয়ত প্রচার করে কিছু দিনের জন্য মানুষকে বিশ্বাসের মধ্যে জোর করে আটকে রাখা যায়, তবে চিরকালের জন্য সম্ভব নয়। সূর্য যেমনি অন্ধকার ভেদ করে পৃথিবীকে আলোকিত করে তেমনি মিথ্যার আঁধার ভেদ করে সত্য একদিন উদ্ভাসিত হয়- এটিই চিরন্তন নিয়ম।
জেএসএস, ইউপিডিএফ-এর সাথে বহুবার বৈঠক করেছে ঐক্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। কিন্ত তারা (ইউপিডিএফ) কথা দিয়ে কথা রাখে না। তারা একটু শক্তিশালী হলে এবং সেনাদের সহযোগিতা পেলে বৈঠক ভেঙে দেয় এবং দুর্বল হলে খারাপ সময় পার করার জন্য জেএসএসকে বৈঠকের প্রস্তাব দেয় এবং এই বৈঠকের প্রস্তাব জেএসএস-এর নিকট পৌঁছে দেওয়ার জন্য একে ওকে হাত পা ধরে- এই হল তাদের চরিত্র। বর্তমানেও তারা এগত্তর বা ঐক্য-এর কথা বলছে, অপরদিকে নতুন চুক্তির কথা বলছে। তারা একদিকে জেএসএস-এর সাথে ঐক্যের কথা বলে, অপরদিকে সুযোগ পেলে সেনাদের সাথে ঐক্য গড়ে তোলে। তাহলে তাদের সাথে কিভাবে ঐক্য গড়ে তোলা সম্ভব? গত ১৪ অক্টোবর ২০২৪ তারিখেও ইউপিডিএফ এর সশস্ত্র দল সেনা সহযোগিতায় জুরাছড়িতে গিয়েছিল এবং সেনা সহযোগিতায় এখনো অবস্থান করছে।
২০০৭-২০০৮ সালেও ইউপিডিএফ সেনা সহযোগিতায় রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অবস্থান নিয়েছিল। জন্মলগ্ন হতে সেনাদের সাথে ইউপিডিএফ-এর গভীর সম্পর্ক। সেজন্যে তারা তাদের দাবীনামা তাদের মুরুব্বী মেজর এমদাদের (অব.) কাছে পেশ করেছিলো এবং তাদের দাবীনামায় চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটিতে মেজর জেনারেলের প্রতিনিধি রাখার প্রস্তাব রেখেছিল। এদিকে তাদের মুরুব্বী মেজর এমদাদ এক টিভি টকশোতে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়- পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনা ও সেটেলার কোনোভাবে প্রত্যাহার করা হবে না। একই সুরে ইউপিডিএফ এর নেতা মাইকেল চাকমাও বলেন- সেটেলারদের সাথে তাদের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। এখন ইউপিডিএফ-এর প্রতি জনগণের প্রশ্ন হল- গত ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বরে দীঘিনালা ও রাঙ্গামাটিতে পাহাড়িদের দোকান ও ঘর বাড়ীতে কে আগুন দিয়েছিল? লোগাং ও লংগদু হত্যাকা- কে সংঘটিত করেছিলো? এসব প্রশ্নের উত্তর ইউপিডিএফকে দিতে হবে।
ইউপিডিএফ বহুবার দুই সংগঠনের চলমান সংলাপকে বাতিল করে দিয়েছে। সে কারণে জেএসএস তাদের এগত্তর বা ঐক্যের আহ্বানকে আর বিশ্বাস করে না। জেএসএস এখনো এগত্তরের পক্ষে। তবে এবার তাদের ঘোষণা দিয়ে আসতে হবে যে, “আমরা চুক্তি সমর্থন করি, চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আমরা আপনাদের সাথে একীভূত হবো”। এগত্তর বিষয়ে গ্রামের এক মুরুব্বীর উক্তি আমার খুব মনপুত হয়েছে। তিনি বলেছেন- “পো যদি বেচল চলে, মদ-জুয়া হায়, সালে দ পো-বরে এক্কা-উক্কো হয়া পরিবো। সিয়ানলোই যদি পোবো ঘর ছাড়ি যায়, সিয়ান দ ঠিক ন অল। ওয়ে আই, ইক্কু যদি এবার চায়- এজোক না। বাপ্পো দ নএচ নহর। হালিক এলে দ বাবো হদা শুনা পরিবো”। (ছেলে যদি উচ্ছৃঙ্খলভাবে চলে, মদ খায়, জুয়া খেলে তাহলে পিতা তো পুত্রধনকে একটু আধটু বলবে। তার জন্য যদি ছেলে বাপের বাড়ি ছেড়ে চলে যায় তাহলে তো ঠিক হল না। যাই হোক তারপরও যদি ছেলে বাপের বাড়ি ফিরে আসতে চায়, আসুক না। বাপ তো না আসার জন্য বলছে না। তবে বাপের কাছে ফিরে এলে বাপের কথা শুনতে হবে)।
ইউপিডিএফ ও সেনা সখ্যতা:
প্রসিত ছাত্র জীবনেও খুবই চতুর ও ধূর্ত লোক হিসেবে ছাত্র সমাজে বেশ পরিচিত ছিল। ছাত্র জীবনে তিনি জেএসএস এর সহযোগিতা নিয়ে তার নেতৃত্বকে পাকাপোক্ত করে তোলে। যখন তিনি ছাত্র সমাজে এবং কিছু মাত্রায় জনসমাজে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন, তখন তিনি অহংকারী ও ক্ষমতালোভী হয়ে উঠেন। ছাত্রজীবন থেকেই প্রসিত বিকাশ খীসা অহংকারী বলে জানা যায়। তিনি এক পর্যায়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হবার জন্য পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র আঁটতে থাকেন। তিনি জেএসএস-এর সাথে ধীরে ধীরে সম্পর্ক ছিন্ন করা ও ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য নূতন সংগঠন গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন এবং সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য যাবতীয় আয়োজন করতে থাকেন। এ লক্ষ্যে তিনি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্যক্তি, সংস্থা ও সংগঠনের সাথে গোপন সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তার মধ্যে অন্যতম একটি ছিল- সেনা কর্মকর্তাদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা। জন্মলগ্ন থেকেই তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো এবং এই সম্পর্ক অদ্যাবধি বজায় রয়েছে। যদিও বা মাঝেমধ্যে নানা স্বার্থগত কারণে তাদের সম্পর্কের মধ্যে ভাটা পড়েছিল কিন্তু তাদের সে সম্পর্ক কখনো ছিন্ন হয়নি।
জেএসএস এর সাথে ইউপিডিএফ এর সম্পর্ক কিছুটা উন্নতি হলে তখন তাদের সাথে সেনাদের সম্পর্কের ভাটা পড়ে। তখন সেনা-ডিজিএফআই সংস্কারপন্থী জেএসএস ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) গ্রুপকে কাছে টেনে নেয় এবং ইউপিডিএফ-কে জেলা ও উপজেলা সদর থেকে বের করে দিয়ে সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) গ্রুপকে সে শূন্যস্থান পুরণ করে নেয়। এমনতর উদ্ভূত পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে ইউপিডিএফ-এর মধ্যে মতের দ্বিধাবিভক্তি সৃষ্টি হয়। একটি অংশ মনে করে- জেএসএস-এর সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার কারণে সেনা-ডিজিএফআই-এর সাথে ইউপিডিএফ-এর সম্পর্ক শিথিল হয়েছে এবং এতে ইউপিডিএফ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অপর অংশটি মনে করে- জুম্ম জনগণের সামগ্রিক স্বার্থে জেএসএস-এর সাথে সম্পর্ক রাখতে হবে এবং ধীরে ধীরে জেএসএস সাথে একীভূত হয়ে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু যে বাঘ একবার মাংসের স্বাদ পায় সে কি মাংস খাওয়া ছাড়তে পারবে?
ইউপিডিএফ-এর ক্ষমতালোভী অংশ ইউপিডিএফকে জেএসএস-এর সাথে একীভূত করার পক্ষপাতী নয়। তাদের কারণে জেএসএস ও ইউপিডিএফ-এর মধ্যেকার সম্পর্ক স্থাপনের মধ্য দিয়ে একমুখী আন্দোলন গড়ে তোলার যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল এই ক্ষমতা লোভী অংশের অনমনীয়তার কারণে সে সম্ভাবনা আলোর মুখ দেখতে পায়নি। ধীরে ধীরে তারা আবার সেনা-ডিজিএফআই এর সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলছে। এই সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য পানছড়ি ও খাগড়াছড়িতে সেনা-ইউপিডিএফ এর মধ্যে বহুবার মিটিং অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই মিটিংগুলিতে বহু বিষয়ে তাদের মধ্যে সমঝোতা স্থাপিত হয় বলে জানা যায়। সমঝোতাগুলি হল- ১) ইউপিডিএফ-এর সাথে সরকারের সংলাপ ও চুক্তি প্রক্রিয়ায় সেনাবাহিনীর বলিষ্ঠ ভূমিকা থাকবে, ২) সেটেলারদের অন্যত্র পুনর্বাসন করা হবে অর্থাৎ পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে নয়; বরং পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যত্র পুনর্বাসন করা হবে, ৩) চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটিতে জিওসি বা তাঁর প্রতিনিধিকে রাখা হবে, ৪) পার্বত্য জেলা পরিষদে বাঙালীদের জন্য ভাইস চেয়ারম্যান পদ সৃষ্টি করা হবে ইত্যাদি।
উপসংহার:
জেএসএস চায়- ১৯৯৭ সালে সম্পাদিত পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়ন আর ইউপিডিএফ চায়- নূতন চুক্তি করতে। জেএসএস তার দাবীনামা পেশ করেছিলো- সরকার কর্তৃক গঠিত কমিটির কাছে আর ইউপিডিএফ তাদের দাবীনামা (চুক্তি?) পেশ করেছিলো একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তার কাছে (মেজর এমদাদ)। জেএসএস-এর চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি গঠিত হয়েছে তিনজনকে নিয়ে- ১) প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি, ২) জেএসএস সভাপতি ও ৩) টাস্কফোরসের চেয়ারম্যান। অপরদিকে ইউপিডিএফ তাদের চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটিতে রেখেছে- জিওসির প্রতিনিধি। এ হল তাদের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের রূপরেখা। ১৯৯৭ সালে চুক্তি সম্পাদনের সময় পার্বত্য চুক্তিকে তারা আপোষচুক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলো। বলেছিল- অসম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন। সংগ্রামী ছাত্র-জনতা এবার তুলনা করে দেখুন- ১৯৯৭ সালে সম্পাদিত পার্বত্য চুক্তি শক্তিশালী না তাদের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দাবীনামা শক্তিশালী। জেএসএস প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন দাবী করে পেয়েছে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন। আর ইউপিডিএফ শুরুতেই সেনা ও সেটেলারদের সাথে আপোষ করে ফেলেছে। এবার তাদের দাবীনামাকে আপোষ চুক্তি (উল্লেখ্য যে, ইউপিডিএফ তাদের দাবীনামাকে চুক্তি বলে উল্লেখ করেছিলো। আমরা কনফিউজড- তারা যে দাবীনামা পেশ করেছিলো, সেটি দাবীনামা না চুক্তি?) বলবো না আপোষহীন চুক্তি বলবো?