রবি ত্রিপুরা
বাংলাদেশে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জোয়ারে দেশ এবং বিদেশে অবস্থানরত কিছু জুম্মর প্ররোচনায় গত ১০ আগস্ট ২০২৪ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম ছাত্ররা পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলদের এক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেইসবুকে লেখালেখি করতে থাকে। এ লক্ষ্যে যোগাযোগের সুবিধার্থে তারা ফেইসবুকে একটি মেসেঞ্জার গ্রুপে ও লেখালেখির গ্রুপে সৃষ্টি করে। উক্ত দুই গ্রুপে তিন পার্বত্য জেলা থেকে হাজারের উপরে শিক্ষার্থী যুক্ত হয়। তবে ফেইসবুক পেইজের নামকরণ নিয়ে নানা মত দেখা দেয়। তীব্র মত বিরোধের পর ফেইসবুক গ্রুপের নাম “আদিবাসী ছাত্র ঐক্য সমাজ” ঠিক করা হয়।
উক্ত পেইজে লেখা পোস্ট করার মাধ্যমে তারা সারাদেশের ছাত্র সমাজের মতো ১২ আগস্ট থেকে তিন পার্বত্য জেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় গ্রাফিতি অংকন করে। খাগড়াছড়ি সদরসহ তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনী কর্তৃক গ্রাফিতি মুছে দেয়া হয় এবং গ্রাফিতি অংকনে বাধা দেয়া হয়। গ্রাফিতি অংকন মুছে দেয়া ও অংকনে বাধা দেয়ার প্রতিবাদে ১৬ আগস্ট খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে একযোগে বিক্ষোভ মিছিল ও ছাত্র সমাবেশ আয়োজন করে। খাগড়াছড়ির ছাত্র সমাবেশ থেকে ৭ দফা দাবি জানানো হয়। খাগড়াছড়িতে প্রায় ১,৫০০ অধিক ছাত্র-ছাত্রী অংশগ্রহণ করে। রাঙ্গামাটির ছাত্র সমাবেশ থেকে গ্রাফিতি মুছে দেয়ার ও অংকনে বাধা দেয়ার তীব্র নিন্দাসহ কল্পনা চাকমার হদিস দেয়া ও ৫% আদিবাসী কোটা পুনর্বহালের দাবি জানানো হয়। কাউখালী থেকে ৩ বাস এবং কুতুকছড়ি থেকে ৫টি বাস যোগে সাধারণ ছাত্ররা সমাবেশে অংশগ্রহণ করে। রাঙ্গামাটির সমাবেশে প্রায় এক হাজারের কাছাকাছি ছাত্র-ছাত্রী অংশগ্রহণ করে।
১৮ আগস্ট ২০২৪ রাঙ্গামাটির জিমনেসিয়ামের “গানে গানে প্রতিবাদ” স্লোগানে বিকাল ৩:৩০ টা থেকে রাত ৭:৩০ টা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক সমাবেশ অনুষ্ঠান চলে। কল্পনা চাকমার স্মরণে ফারাজানা ওয়াহিদ সায়ানের গাওয়া একটি গান দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। রাঙ্গামাটির বিভিন্ন সংগীত শিল্পীরা গান পরিবেশন করেন। এছাড়াও এতে রাঙ্গামাটির ৪ টি ব্যান্ড দল অংশগ্রহণ করে।
১৯ আগস্ট রাত ১০ টায় খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটির সমাবেশে যারা নেতৃত্ব দিয়েছে এমন ৮-১০ জন মিলে অনলাইনে একটি মিটিং বসে। মিটিং-এ বাংলাদেশ থেকে ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী সদস্য ও সাবেক জেএসএস কর্মী বর্তমানে পুলিশে চাকরিরত অশোক কুমার চাকমা, রাঙ্গামাটির ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক হিমেল চাকমা, কানাডা থেকে প্রজ্ঞা তাপস চাকমা, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে সাগর চাকমা এবং অজ্ঞাত স্থান থেকে ফেইসবুক আইডি ‘Amit Hill’ নামে একজন অংশগ্রহণ করে।
উক্ত সভাতে সবার মতামতের ভিত্তিতে “সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন” নামে একটি সংগঠন গঠন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তিন পার্বত্য জেলা থেকে ৫ জন করে ১৫ জনের একটি কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক কমিটি গঠন করার জোর তাগাদা দেয়া হয়। সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০ আগস্ট দুপুরে ফেইসবুকে “সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন” আত্মপ্রকাশ করে। সংগঠনের নামে একটি ফেইসবুক পেইজ চালু করা হয়। উক্ত পেইজ থেকে বলা হয়- “আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের অরাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ ছাত্র সমাজ, পাহাড়ের সকল প্রকার সংঘাত এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে এক ঐতিহাসিক আন্দোলনের যে সূচনা করেছি তারই পরিপ্রেক্ষিতে ‘সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন’ এর নামে একটি দাবিনামার আন্দোলনের ডাক দিলাম। এই ব্যানারের মাধ্যমে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের নাগরিক অধিকারের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ছাত্র আন্দোলন চালিয়ে যাবো।”
উক্ত পেইজে আরো বলা হয়- “এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত সমন্বয়কবৃন্দ সকলেই যেমন ছাত্রছাত্রী, তেমন কোনো রাজনৈতিক দলের সাথেও সম্পৃক্ত নয়। আমরা চাই পাহাড়ে সংঘাত বন্ধের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা হোক এবং এই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যে একটি গণতান্ত্রিক দেশে নূন্যতম নাগরিক অধিকারের যে প্রয়োজনীয়তা রয়েছে আমরা সেই দাবি জানাবো।” ‘সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন’ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন, আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে ১৮ সেপ্টেম্বর তারিখে খাগড়াছড়ি শহরে বড় সমাবেশ আয়োজন করে। সমাবেশে তারা ৮ দফা দাবি জানান।
উল্লেখ্য, ৮ দফা দাবিনামায় পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের কথাটি উল্লেখ ছিল না। যদিওবা সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়ে থাকে তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন চান। সন্দেহ এখানে সৃষ্টি হয়ে যায়। গত ২৫ সেপ্টেম্বর তারিখে ২০ সেপ্টেম্বরের ঘটনায় পার্টির পক্ষ থেকে সুমন মারমা, পিসিপির সভাপতি নিপন ত্রিপুরা, যুব সমিতির সভাপতি সুমিত্র চাকমা ও পিসিপির জেলা শাখার সভাপতি জিকো চাকমার সাথে মতবিনিময় সভাতে তারা স্বীকার করে নেন যে, সংস্কারপন্থী জেএসএস ও ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিকদের চাপের মুখে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের কথাটি ব্যানারে উল্লেখ করতে বাধ্য হয়েছে। তা না হলে সহযোগিতা ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না বলে বলে দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা বাজারে জুম্মদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে “সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন” রাত ৮ টায় মশাল মিছিল আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। রাঙ্গামাটির বাস্তবতা ও পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে পিসিপি ও যুব সমিতির তরফ থেকে সেদিন মশাল মিছিল না করার জন্য আহ্বান জানানো হয়। মিছিলের উপর সেটেলাররা হামলা করলে দীঘিনালার ইস্যু ঢামাচাপা পড়ে যাবে। নানা যুক্তি পাল্টা যুক্তির পর তারা সেদিন কর্মসূচি না করার আহ্বান মেনে নিয়ে চলে যান। সংগঠনের তরফ থেকে শুক্রবার পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার আহবান জানানো হয়। এই আহ্বানেও তারা একমত পোষণ করে স্থান ত্যাগ করে চলে যার যার বাসায় ফিরে যান।
পরের দিন ২০ সেপ্টেম্বর সকালে রাঙ্গামাটির সমন্বয়ক জেটিশন চাকমা হঠাৎ পিসিপির কেন্দ্রীয় সভাপতিকে ফোন দেন। ফোন দিয়ে আহুত মিছিলে পিসিপির সাংগঠনিকভাবে সহযোগিতা চান। পিসিপির তরফ থেকে মিছিল ডিসি অফিস পর্যন্ত গিয়ে সেখানে সমাবেশ আয়োজন করার পরামর্শ দেয়া হয়। মিছিল শুরুর আগে প্রায় ২০০ জন মত অচেনা ছাত্র রাজবাড়ী পেট্রোল পাম্প এলাকায় পুলিশের গাড়িতে হামলা চালায় (সমন্বয়ক জেটিশন তাদের চিনেন না)। তারা মিছিলের অগ্রভাগে থাকে। মিছিল নিয়ে পার্বত্য জেলা পরিষদের সামনে সেনাবাহিনীর এসএসডি গেইটে গিয়ে লাঠি মারতে শুরু করে এবং ইট পাটকেল ছুড়ে মারে। পার্বত্য জেলা পরিষদের দিকেও ইট পাটকেল ছুড়ে মারে। মিছিলটি ডিসি অফিস পর্যন্ত যাওয়ার কথা থাকলেও তা চলে যায় বনরূপায়।
হ্যাপি মোড়ে পৌঁছালে চম্পকনগর এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা বাঙালিদের ধাওয়া দিয়ে চম্পকনগর এলাকায় প্রবেশ করে। মিছিলের খন্ডিত অংশ ফরেষ্ট কলোনী হয়ে বনরূপা কবর স্থান ঘুরে এসে বনরূপাতে যুক্ত হয়। মিছিলটি বনরূপায় পৌঁছালে বিলাসবিপনীর ছাদ থেকে এক সেটেলার ইট ছুঁড়ে মারে। সেসময় কতিপয় শিক্ষার্থী বিএম মার্কেটের মসজিদের দিকে ইট পাটকেল ছুড়ে মারে। বনরূপা পেট্রোল পাম্পে ভাঙচুর চালায়। সুযোগ বুঝে মসজিদে অবস্থান করা মৌলভী সাহেব মসজিদের উপর হামলা হয়েছে বলে মাইকে ঘোষণা করে। কিছু কিছু ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, হামলাকরী সেটেলাররা ট্রাকে করে এসে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীদের সাথে মিশে যাওয়া ইউপিডিএফের ক্যাডাররা শেভরণ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ভাঙচুর চালাতে চেষ্টা করে। ছাত্রীদের নিষেধের মুখে তারা ভাঙচুর থামায়। শেভরণের পাশে আরেক জুম্মর দোকানেও তারা ভাঙচুর চালাতে চেষ্টা করে।
মিছিলে হামলার খবর জানার পর পিসিপির তরফ থেকে প্রতিরোধ ও উদ্ধারের তৎপরতা এগিয়ে যাওয়া হয়। তখন সমন্বয়ক কিকো দেওয়ানকে পিসিপির সভাপতি ফোনে ছাত্রীদের বাসায় ফেরত পাঠানোর জন্য বার বার বললেও কিন্তু কর্ণপাত করেনি। ডিসি অফিসের সামনে সমাবেশ চলছিল। এক পর্যায়ে সেটেলাররা নিউমার্কেট এলাকায় কালিন্দীপুরের প্রবেশ পথে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। দক্ষিণ কালিন্দীপুরে হামলা চালিয়ে অনিক কুমার চাকমাকে পিটিয়ে হত্যা করে। অন্যদিকে পালাতে না পেরে বিজন সরণি, হ্যাপি মোড় ও কালিন্দীপুর এলাকায় ৩০০-৪০০ শিক্ষার্থী আটকে পড়ে। নানা কলাকৌশল প্রয়োগ করে পিসিপির কর্মীরা হ্যাপি মোড়, বিজন সরণি, কালিন্দীপুরে আটকে থাকা শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে।
বিশেষ তথ্য উপাত্ত থেকে জানা গেছে, সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের কতিপয় সমন্বয়ক ইউপিডিএফের রাজনীতির সাথে যুক্ত অথবা তাদের পরিবার, পিতা যুক্ত। তৎমধ্যে কেন্দ্রীয় সমস্বয়ক ফুটন্ত চাকমার বাবা শান্তিময় চাকমা ইউপিডিএফের একজন সক্রিয় সমর্থক এবং ইউপিডিএফের সমর্থন নিয়ে ভাইবোনছড়া ইউপির সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বিগত ইউপি নির্বাচনে। অপরদিকে রাঙ্গামাটির সমন্বয়কদের মধ্যে বিকাশ চাকমা ইউপিডিএফ পিসিপির সাথে যুক্ত ছিলেন। তার বাবা ইউপিডিএফের কুতুকছড়ি অঞ্চলের সাবেক পরিচালক। আরেক সমন্বয়ক রিপুল চাকমার বাবা ইউপিডিএফের কাউখালী অঞ্চলের সাবেক পরিচালক।
সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের শুরুর দিকের উপদেষ্টাদের মধ্যে ফেইসবুক নাম অমিত হিল একজন ইউপিডিএফ পিসিপির প্রাক্তন কর্মী। প্যারিস চাকমা ইউপিডিএফের সক্রিয় অর্থদাতা এবং ফেইসবুকে প্রতিনিয়ত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও শ্রী জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমাকে নিয়ে বিদ্বেষমূলক লেখালেখি করে থাকে। আরেক উপদেষ্টা সাগর চাকমা দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থানরত ইউপিডিএফ সমর্থিত বুদ্ধিজীবী রনেল চাকমা ননিকে সমর্থন ও সহযোগিতা করে থাকে।
মূলত সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং ব্যবহার করার হীনউদ্দেশ্যে খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি জেলার কর্মসূচিতে ইউপিডিএফের পক্ষ থেকে জমায়েত ও আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া ইউপিডিএফ তাদের পিসিপি ও যুব ফোরামের ছাত্র-যুবদের সদলবলে উক্ত বিক্ষোভ সমাবেশে পাঠিয়ে দেয়, যাতে মিছিল ও সমাবেশকে তাদের অনুকূলে ব্যবহার করতে পারে। এভাবে ব্যবহার করে পরিস্থিতিতে উত্তেজিত করার উদ্দেশ্যে ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সমাবেশে একটি হ্যান্ড মাইক নিয়ে ইউপিডিএফের একজন কর্মী শ্লোগান দিয়েছিল “সেনাবাহিনীর গালে গালে, জুতা মারো তালে তালে”, যা সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের কোনো শ্লোগান ছিল না।
১৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ গাছবান ও পেরাছড়া থেকে অনন্ত মাষ্টার পাড়ায় একদল ছাত্র-যুবককে পাঠিয়ে দেয়। উক্ত ছাত্র-যুবকদের সাথে সেনাবাহিনী মুখোমুখী হয় এবং সামান্য দূর থেকে উভয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডা ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। রাত পৌনে ১১:০০ টার দিকে ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি স্বনির্ভর এলাকার দিকে যাচ্ছিল। গাছবান ও পেরাছড়া থেকে আসা ইউপিডিএফের উক্ত ছাত্র-যুবকরা সেনাবাহিনীর সেই গাড়িটি রাস্তায় অবরোধ করে। সেনাবাহিনীর সাথে বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে। তারা কান্তা-গুলতি ব্যবহার করে। এক পর্যায়ে সেনাবাহিনী সেখানে গুলিবর্ষণ করে।
আরো উল্লেখ্য যে, ২০ সেপ্টেম্বর সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের রাঙ্গামাটির মিছিলে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী ইউপিডিএফের দুই শতাধিক ছাত্র-যুবক অংশগ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে। জেলা শিক্ষা অফিসের সামনে পৌঁছলে অন্যান্য শ্লোগানের সাথে “পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন কর, করতে হবে” শ্লোগানটি তুলে ধরলে অধিকাংশ ছাত্র “বাস্তবায়ন কর, করতে হবে” বললেও ইউপিডিএফের সেই ছাত্র-যুবকরা “ভূয়া, ভূয়া” বলে চিৎকার করে। মিছিলটি জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে শিল্পকলা একাডেমির কাছে পৌঁছলে সেখান থেকে প্রায় ২০০ জন অপরিচিত ছাত্র-যুবক মিছিলে সামিল হয়, যাদেরকে সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের সংগঠকরা চিনেন না বলে জানিয়েছেন।
বলাবাহুল্য যে, সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সাথে পিসিপি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির তরফ থেকে বারংবার আলাপ-আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনায় তাদের সংগঠনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তারা উত্তর দিতে চেষ্টা করেছিলেন। তাদের সকল দাবিনামা যা লেখা আছে সবই পার্বত্য চুক্তিতে আছে তাই আলাদা আলাদা করে দল গঠন করে বিচ্ছিন্ন আন্দোলন না করে পার্টির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। তা সত্ত্বেও সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা পার্টির আহ্বানে কর্ণপাত না করে ইউপিডিএফের সাথে পরামর্শ করে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যেতে থাকে। গত ১৬ অক্টোবর সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের তরফ থেকে পার্বত্য অঞ্চলের রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সংঘাত থামানো ও ঐক্য গড়ার জন্য ৭ দফা সম্বলিত একটি চিঠি লেখা হয়। চিঠির দাবিনামা সবগুলোই ইউপিডিএফ ঘেষা।
বান্দরবান জেলার সমন্বয়ক টিম আজ অবধি গঠন করতে পারেনি। তবে অনেকবার চেষ্টা চালিয়েছে বলে জানা গেছে। কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ফুটন্ত চাকমা সেপ্টেম্বর মাসে স্থানীয় ছাত্র সংগঠনের সাথে মিটিং করে। মিটিং-এ বান্দরবান জেলায় সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন গঠন করার প্রস্তাব দিলে উপস্থিত বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ তা নাকচ করে দেয়।