হিল ভয়েস, ৫ নভেম্বর ২০২৪, বান্দরবান: বান্দরবান জেলার লামা উপজেলাধীন সরই ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এমপি কর্তৃক ক্ষমতা অপব্যবহার করে তার স্ত্রী ও আত্মীয়স্বজনের নামে স্থানীয় পাহাড়ি ও বাঙালি জনগণের মালিকানাধীন ও ভোগদখলীয় শত শত একর ভূমি বেদখল করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বর্তমানে তাজুল ইসলাম পলাতক থাকলেও, তার লোকজন ঐ এলাকায় নিয়মিত সশস্ত্রভাবে পাহারা দিচ্ছে এবং স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙালি জনগণকে তাদের ভূমিতে চলাচল ও কাজ করতে বাধা দিচ্ছে।
স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙালি জনগণ তাদের ভূমি ফেরত পেতে চায় এবং ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকার ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
গত ১ নভেম্বর, স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙালি গ্রামবাসীরা নিজেদের ভূমিতে কাজ করতে গেলে, সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের ম্যানেজার সাহাবুদ্দিন, স্থানীয় সন্ত্রাসী জাভেদ, সাহেদ হোসেন এর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী দা, কিরিচ ও লাঠিসোটা নিয়ে গ্রামবাসীদের উপর হামলার চেষ্টা করে। এসময় গ্রামবাসীরা অন্যত্র পালিয়ে বাঁচে।
গতকাল (৪ নভেম্বর) পাহাড়ি-বাঙালি স্থানীয় একাধিক সূত্রে এই ভূমি বেদখল এবং বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে স্থানীয় গ্রামবাসীদের ভূমি ও জীবিকার অধিকার হরণ করার খবর পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বিগত স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম স্থানীয় আইন ও নিয়ম-নীতিকে তোয়াক্কা না করে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে লামার সরই ইউনিয়নের ফুইট্টা ঝিরি এলাকায় ২০১৯ সালে তার স্ত্রী ফোজিয়া ইসলামের নামে ১০০ একর ভূমি ক্রয় করেন। পরে স্ত্রী ফোজিয়া সহ আত্মীয়-স্বজনের নামে আশেপাশের এলাকা থেকে আরো অন্তত ৪০০ একর ভূমি বেদখল করেন। এতে ফুইট্টা ঝিরি ছাড়াও দেরাজ মিয়া পাড়া, টংগঝিরি, পূর্গা খোলা ইত্যাদি এলাকার পাহাড়ি-বাঙালি গ্রামবাসীর জমি বেদখল করা হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৫০০ একর ভূমি তাজুল ইসলামের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা পাহাড়ে দিচ্ছে।
সাবেক মন্ত্রী প্রভাব খাটিয়ে উক্ত ভূমি ইতোমধ্যে রেকর্ডভুক্ত করেছেন বলেও জানা গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের টাকায় ঐ এলাকায় যাতায়াতের জন্য রাস্তা, বৈদ্যুতিক সংযোগ, সীমানা পিলার, মাছের প্রকল্প, গবাদি পশুর খামারসহ তৈরি করা হয়েছে বিশাল বাংলো বাড়ি।
ভুক্তভোগীরা জানান, গত ৫/৬ বছর ধরে তারা তাদের জমিতে চাষাবাদও করতে পারেননি। তারা এখন নতুন সরকারের আমলে তাদের জায়গা ফেরত চান এবং ক্ষতিপূরণের দাবিও জানান।
ভুক্তভোগী এক গ্রামবাসী পাইসা প্রু বলেন, ‘এ জায়গাগুলো আমরা দীর্ঘ বছর ধরে ভোগদখল করে আসছি। এ জমিতে আমরা চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করি। আগেও মন্ত্রীর লোকজন আমাদের এ জায়গা থেকে কয়েকবার সরানোর চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু সরকার পতনের পর কয়েকদিন আমরা শান্তিতে থাকলেও আবার তারা আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে জমি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে।’
আরেক গ্রামবাসী মতিলাল ত্রিপুরা বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘ ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে জুমচাষ করে আসছি। কিন্তু সেই জমিগুলো এখন সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, তার স্ত্রী ফৌজিয়া ইসলাম ও স্বজন শাহ আলম মুকুল মিলে দখল করছে। আমরা আমাদের নিজ জমিতে কাজ করতে গেলে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে হুমকি দেয়। এখন আমরা জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে ভয়ে আছি।’
আরেক স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল হক বলেন, ‘বান্দরবানের স্থানীয় বাসিন্দা না হলে কেউ জায়গা কিনতে পারেন না। তাহলে মন্ত্রী কীভাবে জায়গা কিনলেন? আমরা বান্দরবানে থেকে লিজ পাই না। বাইরে থেকে এসে তারা কীভাবে লিজ নেন।’ বিষয়টি তদন্ত করে তাদের জায়গার দখল বাতিলের দাবিসহ জড়িত সংশ্লিষ্ট কর্তাদের শাস্তির দাবি জানান তিনি।
+ There are no comments
Add yours