হিল ভয়েস, ২৬ জুন ২০২০, বান্দরবান: চলমান করোনা (কোভিড-১৯) মহামারীতে সৃষ্ট নানা সংকটের জন্য ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে নানা শ্রেণী পেশার মানুষকে। বিশ্বব্যাপী চলমান এই মহামারীতে অর্থনৈতিক চাকা পুরোপুরি সচল হতে পারছে না । যার ফলে সৃষ্টি হয়েছে খাদ্য সংকটের। এই সংকটে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার সমাজে নানা মানদন্ডে যারা প্রান্তিকতার সীমায় বসবাস করছে তারা। পাহাড়ের প্রত্যন্তে বসবাসকারী আদিবাসীরাও এসংকটে পতিত। এই সংকট থেকে উত্তোরণে বিভিন্ন সংগঠন ও প্লাটফর্ম নানাভাবে উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করেছে যা এখনো অব্যাহত আছে। এদিকে বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড় জুড়ে যে ম্রো আদিবাসীরা বসবাস করছে তাঁরাও এই খাদ্য সংকটে নিপাতিত।
চিম্বুকের বাসিন্দা ও ম্রো আদিবাসীদের বিশিষ্ট লেখক ইয়াঙ্গান ম্রো বলেন, চিম্বুকে বসবাসকারী ম্রোরা অধিকাংশই জুম চাষের উপর নির্ভরশীল। আর জুম চাষের যে উপর নির্ভরশীল মানুষজন প্রতিবছর এই সময়টাতে (এপ্রিল-জুন) নিয়মিত খাদ্য সংকটে পড়ে। জুমে উ ৎপাদিত ফসল এ সময় ফুরিয়ে যায়। আবার নতুন ফসল আসতে আসতে তিন থেকে চার মাস সময় লাগে। যার জন্য এ সময়টা আমাদের জন্য বেশ কষ্টের।
তিনি আরো বলেন, জুমে পাশাপাশি চিম্বুকের ম্রো আদিবাসীরা নানা ধরণের ফলজ বাগান করে এ সময়ের সংকট থেকে একটু কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করে। কিন্তু গেল বারের ঘুর্ণিঝর আম্পানের কারণে চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে এই বাগান চাষীদের। যার ফলে এখন সংকট আরো বেশি তীব্র। করোনা মহামারীর এই্ সংকট আমাদের কাছে মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে এসেছে।
উক্ত সংকটের কথা জেনে চিম্বুকের ম্রো আদিবাসীদের জন্য একটি মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নেন কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা। তিনি বলেন, চিম্বুকের জুম চাষীদের বছরের এই সময়ে দেখা দেয়া নিয়মিত খাদ্য সংকটের কথা আমরা জানি। তার উপর এই যে করোনা মহামারী দেখা দিয়েছে যার জন্য তারা আরো বেশি নাজুক অবস্থার মধ্যে পড়েছে। যার জন্যআমি আমার পরিচিত কন্ঠ শিল্পীদের উদ্ধুদ্ধ করে “চিম্বুকের জন্য গান” নামে আমার পরিচালিত ‘ঝিমিত ঝিমিত জুনি জ্বলে নামের ফেসবুক গ্রুপে একটি লাইভ সেশনের আয়োজন করি। এই সেশন উপভোগ করে দেশ বিদেশের বহু মানবতাবাদী মানুষ সহযোগীতার হাত বাড়িয়েছেন। যার আশানুরূপ সাড়া পেয়ে আমি মুগ্ধ।
হিল ভয়েসকে এই বিশিষ্ট আদিবাসী অধিকার কর্মী আরো বলেন, আমরা উত্তোলিত এ সহায়তা থেকে দু’টি ধাপে চিম্বুকের ছয়টি পাড়ায় মানবিক সহায়তা দিতে সক্ষম হয়েছি। এই ৬ টি পা[ড়ার ৬৫ টি পরিবারকে এ সহায়তা প্রদান করেছি।সহায়তা দেয়া এই ছয়টি পাড়া হলো-মিজা ১ পাড়া, মিজা ২ পাড়া, অশোর পাড়া, বাইট্টা পাড়া, ১নং তংকাবতি ইউনিয়নের রামরি পাড়া, ৪ নং তংকাবতী ইউনিয়নের বলি পাড়া।
উক্ত সহায়তা উত্তোলনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশে বিদেশের যে মানবতাবাদী মানুষরা সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন তাঁদের সকলকে এবং শিল্পীবৃন্দকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছেন এই উদ্যোগের মূল আয়োজক পল্লব চাকমা।
উক্ত উদ্যোগে যে শিল্পীরা গান গেয়ে মানবতার সুর পৌঁছে দিয়েছেন তাঁরা হলেন, বিশিষ্ট শিল্পী কালায়ন চাকমা, দৃপ্ত দেওয়া বাপ্পী, কোয়েল চাকমা, রিংকু চাকমা, পার্কি চাকমা, তিশা দেওয়ান। এছাড়া উক্ত উদ্যোগে অন্যতম সহায়ক হিসেবে ছিলেন আদিবাসী অধিকার কর্মী ও সংস্কৃতি কর্মী চন্দ্রা ত্রিপুরা।