হিল ভয়েস, ১২ জুন ২০২০, বিশেষ প্রতিবেদন, বান্দরবান: পার্বত্য চট্টগ্রামে নানা নামে নানা অজুহাতে নানা উন্নয়ন প্রকল্পের দোহাই দিয়ে আদিবাসী জুম্মদের জায়গা-জমি বেদখল, উচ্ছেদ, সংস্কৃতি ধ্বংস, জীবন-জীবিকা বিপন্নকরণের কাজ চলছে। সেনাছাউনি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন ও সম্প্রসারণ, রিজার্ভ ফরেষ্ট ঘোষণা, হর্টিকালাচারের নামে বহিরাগতদের ইজারা প্রদান, পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন, রোহিঙ্গাসহ সেটেলারদের অনুপ্রবেশ ও বসতি স্থাপনসহ নানা উন্নয়ন কার্যক্রমের মাধ্যমে চলছে আদিবাসী জুম্মদের ভূমি বেদখল ও উচ্ছেদের মহোৎসব। এমনকি জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের নামে পার্বত্য চট্টগ্রামে কাজ করতে আসা অনেক এনজিওও এই ভূমি বেদখল ও উচ্ছেদের কার্যক্রম থেকে মুক্ত নয়।
তার মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিয়েটিভ কনজার্ভেটিভ এলাইয়েন্স (সিসিএ) নামে একটি সংগঠনের বিরুদ্ধে এ ধরনের ব্যাপক অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের নামে বান্দরবান জেলার আলিকদম ও থানচি উপজেলায় আদিবাসী জুম্মদের জুমভূমি বেদখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে এই সংগঠন ও সংগঠনের কর্ণধার শাহরিয়ার সিজার রহমানের বিরুদ্ধে। এর ফলে বিগত কয়েক বছর ধরে কষ্টে দিনানিপাত করছে বান্দরবান পার্বত্য জেলার থানচি ও আলিকদম উপজেলার কুরুক পাতা ইউনিয়নের দূর্গম পল্লীর কিছু সাধারণ পরিবারের অসহায় ম্রো জনগোষ্ঠীর মানুষ। হিল ভয়েসের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগের সরেজমিন তদন্ত করা হয়েছে। তদন্তে সিসিএ ও এর কর্ণধার শাহরিয়ার সিজার রহমান সম্পর্কে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।
বন ও বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণের নামে সিসিএ–এর কাজ শুরু
পার্বত্য চট্টগ্রামের বন ও বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণের দোহাই দিয়ে ক্রিয়েটিভ কনজার্ভেটিভ এলাইয়েন্স (সিসিএ) আলিকদম ও থানচিতেকার্যক্রম শুরু করে। সিসিএ ওয়েবসাইট থেকে জানা যায় যে, ২০১১ সাল থেকে সিসিএ সাঙ্গু-মাতামুহুরী রিজার্ভ ফরেস্টের স্থানীয় সম্প্রদায়ের সমস্যাগুলো শুনে ও তাদের বিশ্বাস অর্জন করে তাদের সাথে ঘনিষ্টভাবে কাজ করছে সিসিএ। কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের বিনিময়ে বিকল্প জীবিকা নির্বাহের মাধ্যমে বন্যপ্রাণী শিকার হ্রাস করা এবং বাণিজ্যিক শিকার প্রশমন, বনজ সম্পদের উপর জাতিগত সম্প্রদায়ের নির্ভরতা হ্রাস করার জন্য ঐতিহ্যবাহী বয়নশিল্প দ্রব্যের বিপণন, প্রাক্তন শিকারীদের বন সংরক্ষণের নায়ক হিসাবে ক্ষমতায়ন, এবং বিরল উদ্ভিদের নার্সারি স্থাপন, টেকসই মৌসুমী ফসলের বিপণন এবং সরকারের সর্বোচ্চ স্তরে বিষয়গুলো তুলে ধরা। পার্বত্য চট্টগ্রামে বণ্যপ্রাণী এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষার নামে ২০১৭ সালে ৫০ হাজার ইউরো সমমানের মর্যাদাপূর্ণ ফিউচার ফর ন্যাচার অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছিলেন শাহরিয়ার সিজার রহমান।
সিসিএ ওয়েবসাইটে আরো বলা হয়েছে যে, সিসিএ পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থানীয় সম্প্রদায়গুলিকে তাদের ভূমি যে ধ্বংসের মুখোমুখি হচ্ছে তা রোধ করার জন্য সোচ্চার ও সক্ষমতা প্রদান করছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সিসিএ কার্যক্রমের মধ্যে ৯টি গ্রামে পাড়াবন সংরক্ষণ, প্রায় ১,২৩৫ একর (৫০০ হেক্টর) পাহাড়ভূমিতে বন সংরক্ষণ, দুইটি বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ স্কুল পরিচালনা করছে। তবে এলাকাবাসীর ধারণা, বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের নামে আদিবাসী ম্রো, ত্রিপুরা ও মারমাদের কয়েক হাজার একর জুম ভূমি দখল করা হয়েছে। এই প্রকল্পের ফলে থানচি ও আলিকদম উপজেলার করুকপাতা ইউনিয়নের পালে ম্রো পাড়া, দাকাটি ম্রো পাড়া, আনুম পাড়া, আন্দালী পাড়া, লাকপাইন ম্রো পাড়া, তাকোয়াইন ম্রো পাড়া, ত্রিপুরা পাড়া, লিক্রি ম্রো পাড়া, লিক্রি ত্রিপুরা পাড়া, মরংওয়া পাড়া, সিমান্ত বুলু পাড়া প্রভৃতি ১১টি পাড়ার আদিবাসী জুম্মরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ম্রো জনগোষ্ঠীর সাথে বন্ধুত্ব
২০১১ সালে সিসিএ-এর কর্ণধার শাহরিয়ার সিজার রহমান প্রথম পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান আসেন। এসময় তিনি মিয়ানমার সীমান্তবর্তী থানচি উপজেলার রেমাক্রি ইউনিয়নের বড় মদক, ছোট মদক, লেক্রি থেকে আলিকদমের করুকপাড়া ও পোয়ামহুরী বেল্ট ঘুরে দেখেন। গহিন অরণ্যের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে আসার পর ঢাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া কিছু আদিবাসী জুম্ম শিক্ষার্থীদের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি করে আলিকদমের ম্রো পাড়ায় আসা-যাওয়া শুরু করেন। এরপর ম্রোদের এলাকায় তার প্রকল্পের কাজ শুরু করার জন্য তিনি ম্রো গ্রামবাসীর সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে তুলতে গিয়ে তিনি ম্রোদের পোষাক-পরিচ্ছদ পরে এবং একসাথে খাওয়া-দাওয়া করে ম্রোদের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে চেষ্টা করেন।
বলাবাহুল্য, ম্রোরা যার বা যাদের সাথে একবার ‘খাংবোয়াই’ বা ‘বন্ধু’ সম্পর্ক গড়ে তোলেন, তাকে বা তাদেরকে জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করেন এবং কোনদিন তার বা তাদের সাথে বেঈমানী করেন না। এটা ম্রো জনগোষ্ঠীসহ অনেক আদিবাসী জাতির চিরায়ত বলিষ্ঠ প্রথা। শাহরিয়ার সিজারকে ‘খাংবোয়াই’ বা বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করার পর অকৃত্রিম আস্থা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে ম্রোরা প্রশ্নহীনভাবে জুমভূমির ব্যবস্থাপনা, পাড়াবন সংরক্ষণসহ সবকিছু ক্ষেত্রে তিনি যেভাবে বলেন সেভাবে তাকে অর্পণ বা সম্মতি প্রদান করতে থাকেন।
এভাবেই তিনি কৌশলে আপন সেজে ম্রোদের জায়গা-জমি নিজের কব্জায় নেয়ার কাজ শুরু করেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণার ফলে জুম জায়গার অভাব দেখা দিলেও যেহেতু একবার তারা তাদের ‘খাংবোয়াই’কে জুমভূমি দিয়ে ফেলেছেন, তাই শাহরিয়ার সিজারের সাথে বেঈমানী করেননি ম্রোরা। বরঞ্চ নিরবে নিভৃতে অন্য জায়গায় চলে গেছেন কিংবা প্রতিবেশী দেশে দেশান্তরী হয়েছেন।
দস্তখত নিয়ে পাড়াবন ও জুমভূমি কব্জা করা
পাড়াবন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ স্কুল, সাইনবোর্ড টানানো ইত্যাদির অজুহাতে শাহরিয়ার সিজার স্থানীয় ম্রো গ্রামবাসীদের সাথে মিটিং করতেন এবং সেসব মিটিঙের কার্যবিবরণী লিখে নিতেন। অভিযোগ রয়েছে যে, সেসব মিটিং-এর কার্যবিবরণীতে বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের দোহাই দিয়ে সিসিএ-এর হাতে পাড়াবন সংরক্ষণ এবং সাইনবোর্ড টানানোর দায়িত্ব অর্পণ করার বিষয়গুলো কৌশলে লিখে নিতেন।
ফলে সিসিএ-এর উদ্যোগে স্থানীয় আদিবাসীদের জুমভূমি ও মৌজাভূমিতে চৌহদ্দি উল্লেখপূর্বক “সংরক্ষিত এলাকার বাঁশ, গাছ কাটা ও বন্যপ্রাণী শিকার করা সম্পূর্ণ নিষেধ” মর্মে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেয়া হয়। এসব সাইনবোর্ডগুলো যদিও “আদেশক্রমে” সংশ্লিষ্ট পাড়ার নাম উল্লেখ থাকতো, বস্তুত শাহরিয়ার সিজারের সিসিএ সংগঠন থেকে এগুলো টানানো হতো।
ডিবিসি টেলিভিশনে শাহরিয়ার সিজারের সিসিএ কর্তৃক বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষনের উপর একটি সংবাদচিত্র প্রচার করা হয়। সেখানে সিসিএ-এর তথ্যের ভিত্তিতে বলা হয়েছে যে, “‘পাড়াবন সংরক্ষণ’-এর ধারণা তেমন পুরানো নয়।” বস্তুত এটি ছিল একটি সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জুম্মরা যুগ যুগ ধরে প্রথাগত ভিত্তিতে প্রথাগত প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে পাড়াবন পদ্ধতিতে গ্রামীণ বন সংরক্ষণ করে আসছে, যা ভিলেজ কমন ফরেস্ট (ভিসিএফ) নামে সমধিক পরিচিত। আদিবাসীদের বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের এই পুরানো প্রথা বলবত্ আছে বলেই পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেক প্রাকৃতিক বন এখনো টিকে আছে।
দৃশ্যত শাহরিয়ার সিজার আদিবাসী জুম্মদের বন সংরক্ষণের সেই প্রথাগত পদ্ধতি চুরি করে নিজের নামে চালু করার অপপ্রয়াস চালানবলে প্রতীয়মান হয়। নি:সন্দেহে এটা তার ফিউচার ফর ন্যাচার অ্যাওয়ার্ড অর্জনেও ভূমিকা রেখেছিল বলে বলা যেতে পারে।বলাবাহুল্য, প্রথাগত পদ্ধতি চুরি করে নিজের নামে চালু করার অপপ্রয়াসকে অসসতাপূর্ণ এবং মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ আইনেরও সম্পূর্ণ পরিপন্থী বলে বিবেচনা করা যেতে পারে।
আদিবাসী ম্রোদের দেশান্তর
বাংলাদেশে নিরাপত্তাহীনতা, নানা ধরনের বঞ্চনা, জুম চাষযোগ্য ভূমি সীমিত হওয়া, জীবন-জীবিকার অভাব ইত্যাদি কারণে এবং মিয়ানমার সরকারের একটি মহলের নানা প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে ২০১৩-২০১৮ সালে বান্দরবান জেলার আলিকদম, থানচি, নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা ইত্যাদি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে পাঁচ শতাধিক আদিবাসী পরিবার মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পাড়ি দিয়েছিল। দেশান্তরিত আদিবাসী পরিবারদের মধ্যে ম্রো, মারমা ও তঞ্চঙ্গ্যা জাতির লোক ছিল। এছাড়া কয়েক পরিবার ত্রিপুরা জাতির লোকও ছিল বলে জানা গেছে। আলিকদম ও থানচি থেকে যেসব ম্রো পরিবার দেশান্তরিত হয়েছিল, তার অন্যতম একটি কারণ ছিল সিসিএ কর্তৃক সহজ সরল ম্রো জনগোষ্ঠীর নানা কৌশলে সম্মতি নিয়ে তাদের জুমভূমিগুলোকে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণার মাধ্যমে প্রকারান্তরে জুমচাষে বাধা প্রদান।
স্থানীয় গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেন, এভাবে বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের নামে অত্যন্ত সুকৌশলে শাহরিয়ার সিজার কর্তৃক মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী থানচি ও আলিকদম উপজেলার লাক পাইন ম্রো পাড়া, তাকোয়াইন ম্রো পাড়া, ত্রিপুরা পাড়া, পান ঝিরি ম্রো পাড়া, মালংঙ্গ মারমা পাড়া, ও ম্রো পাড়া, লিক্রে ম্রো পাড়া, ত্রিপুরা পল্লী পাড়ায় তার নেতৃত্বে অবৈধভাবে জায়গা-জমি দখল করা হয়েছে। ফলে অনেক আদিবাসী ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী প্রতিবেশি দেশে দেশান্তরিত হতে বাধ্য হয়েছে বলে জানা যায়।
২০ মার্চ ২০১৮ তারিখের দৈনিক কক্সবাজারে আলিকদম উপজেলার কুরুপপাতা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড থেকে মিয়ানমারে দেশান্তরিত হওয়া ২৪ পরিবারের ১৩২ জন এবং নোয়াপাড়া ইউনিয়ন থেকে ৮ পরিবারের নাম ঠিকানা প্রকাশিত হয়। এছাড়া আদিবাসীদের জাতীয় মানবাধিকার সংগঠন কাপেং ফাউন্ডেশন ২০১৮ সালে ফেব্রুয়ারিতে আলিকদম উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়ন থেকে দেশান্তরিত হওয়া আরো ১৪৮ পরিবারের তালিকা এবং কুরুকপাড়া ইউনিয়নের ১২১ পরিবারের তালিকা প্রকাশ করে।
করুকপাতা ও নোয়াপাড়া ইউনিয়ন থেকে ম্রো পরিবারগুলোর দেশান্তরিত হওয়ার উচ্চ হার দেখে এটা নি:সন্দেহে বলা যায়, স্থানীয় আদিবাসীদের দেশান্তরিত হওয়ার ক্ষেত্রে অন্যান্যের মধ্যে সিসিএ ও শাহরিয়ার সিজার কর্তৃক স্থানীয় ম্রোদের জুমভূমিগুলোকে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা ও জুম চাষের ক্ষেত্র সংকুচিত হওয়ার বিষয়টি প্রবলভাবে কাজ করেছিল।
‘কচ্ছপের বিনিময়ে মুরগী’ ও বন্যপ্রাণী পাচার
বিগত সাত বছর ধরে শাহরিয়ার সিজার রহমান বান্দরবান পার্বত্য জেলার থানচি-আলিকদম উপজেলার মাতামূহুরী রিজার্ভ ফরেস্টে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের নামে বন্যপ্রাণী শিকার ও পাচারের অবৈধভাবে কার্যক্রম শুরু করেন। এ সময় মাতামুহুরি রিজার্ভ বনের বিভিন্ন প্রজাতির বিলুপ্ত প্রায়ই কচ্ছপ, রাজধনেশ পাখি, অজগর সাপ, বনরুই ইত্যাদি শিকারের জন্য মাসিক ৬,০০০ টাকা করে সহায়তা দিয়ে কিছু ম্রো গ্রামবাসীকে কাজে লাগান।
স্থানীয়রা আরো অভিযোগ করেন, ২০১৭-১৮ সালে শাহরিয়ার সিজার পার্বত্য চট্টগ্রামে কচ্ছপ শিকারে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তা হলো একটি কচ্ছপ দিলে একটি মুরগী দেয়া। এভাবে ‘একটি কচ্ছপের বিনিময়ে একটি মুরগী’ দেয়ার কথা বলে এলাকার মানুষের মাধ্যমে রিজার্ভ এলাকা থেকে অনেক কচ্ছপ সংগ্রহ করেন। সেসব কচ্ছপগুলো তিনি ঢাকায় পাচার করেন।
শাহরিয়ার সিজার দাবি করেন যে, সরকারের বন বিভাগের অংশীদারিত্বে বিলুপ্ত প্রায় কচ্ছপ সংরক্ষণের জন্য গাজীপুরে হাওড় ন্যাশনাল পার্কে স্থাপন করা হয়েছে। বন্যকে বন ও প্রকৃতিতে সংরক্ষণের উদ্যোগ না নিয়ে ন্যাশনাল পার্কে সংরক্ষণ করে আদৌ কি বন্যপ্রাণী রক্ষা করা যাবে? রিজুয়ানুল হক নামে একজন ব্যক্তি ব্যক্ত করেন যে, এই সিইও (শাহরিয়ার সিজার) কিছুদিন আগে রিজার্ভ বন থেকে ঢাকায় কচ্ছপ নিয়ে যাওয়ার সময় ধরা পড়েন। কারণ তার কাগজপত্র হালনাগাদ করা ছিল না।
হোসেন সোহেল নামে এক সংবাদকর্মী তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেন যে, তথাকথিত গবেষক সিজার ও তার বিদেশী বন্ধু স্কট চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় জানতে পারেন সেখারে বিশেষ একটি কচ্ছপের সফল ব্রিডিং হয়। তারা সেই কচ্ছপের নানান কাজে যুক্ত হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাদের আচরণের কারণে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ তাদেরকে যুক্ত করতে রাজি হয়নি। এরপর ছলে বলে কৌশলে সিজারের পাশে থাকা বিদেশী বন্ধু স্কট সেই কচ্ছপের ডিমের দাম হাকান। সেই সাথে সেই ডিমগুলো দেশের বাইরে নিতে চান। কিন্তু তাতেও চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকে পটানো যায়নি। এ থেকে বুঝা যায় কচ্ছপ সংরক্ষণের নামে একটা বড় ধরনের পাচার বাণিজ্য কাজ করে।
স্কুল নির্মাণ ও আদিবাসী সংস্কৃতি বিরোধী শিক্ষা
সিসিএ-এর উদ্যোগে বন্যপ্রাণী শিকার বন্ধ ও স্থানীয় জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্থানীয়দের সহযোগিতায় থানচির সাঙ্গু রিজার্ভ ফরেষ্টে লিক্রে পাড়া তা-হু বিদ্যালয় ও তা-বু বিদ্যালয় নামে দুটি বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। সিসিএ ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে যে, এই উদ্যোগের মাধ্যমে এই অঞ্চলে স্বাক্ষরতা বৃদ্ধি এবং বিকল্প জীবিকার মাধ্যমে স্থানীয় সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়ন করে আদিবাসী-পরিচালিত অভয়ারণাগুলি তৈরি করতে পারে।
শিক্ষার এই উদ্যোগটা নি:সন্দেহে প্রসংশনীয়। কিন্তু বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংক্রান্ত শিক্ষায় আদিবাসীদের প্রথাগত বন সংরক্ষণ পদ্ধতি ও প্রথাগত জ্ঞান সম্পর্কে মোটেও শেখানো হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। বরঞ্চ এসব স্কুলে উপনিবেশিক ধারনাপ্রসূত বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের শিক্ষা দেয়া হয়, যা আদিবাসী অধিকার পরিপন্থী। যেমন জুম চাষকে পরিবেশ বিরোধী ও বন সংরক্ষণে ক্ষতিকারক বলে প্রায়ই উল্লেখ করা হয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে।
একসময় রিজুয়ানুল হক নামে একজন ব্যক্তির কাছে শাহরিয়ার সিজার জানান যে, “ওখানে বসবাসকারী মানুষগুলোর জুম চাষের দরুন বনের ক্ষতি হচ্ছে, এরা কাঠ কাটছে! বন্য প্রাণী নিধন করছে! তাই জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে স্কুল খোলা হয়েছে।”
বস্তুত পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের বনাঞ্চল উজার হওয়ার পেছনে কী বা কে বেশি দায়ী? আদিবাসী জুম্মরা যুগ যুগ ধরে জুম চাষ করে আসছে কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বনাঞ্চল উজার হয়ে পড়েনি এটা বাস্তব সত্য। বরং জুম চাষে বড় বড় গাছগুলো সংরক্ষণ করা হয়। জুম চাষের পর যে ‘রান্যা’ (চাকমা ভাষায়) সংরক্ষণ করা হয় তাতে খাদ্যের জন্য বন্য পশুপক্ষীর বিচরণ ক্ষেত্র হিসেবে উপযোগী।
পার্বত্যাঞ্চলসহ দেশে বন উজারের জন্য বাণিজ্যিক ভিত্তিক বনজ সম্পদ সংগ্রহ, দুনীতিবাজ বন কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রাকৃতিক বন কেটে বিদেশী সেগুন বাগান সৃষ্টি, শয়ে শয়ে সেনাছাউনি স্থাপন ও পাহাড় ন্যাড়া করা, হটিকালচারের নামে ইজারা প্রদান করে হাজার হাজার একরের জুমভূমি ও মৌজাভূমি থেকে বন উজার করা, পরিবেশ বিরোধী পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন ও ভূমি বেদখল, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য বিরোধী তথা আদিবাসী অস্তিত্ব ও সংস্কৃতি বিধ্বংসী উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন ইত্যাদি বিষয়গুলো প্রধানত দায়ী। যতটুকু জানা যায়, এই মূল বিষয়গুলো শাহরিয়ার সিজারের আলোচনা অনুল্লেখিত থেকে যায়।
বন ও বনপ্রাণী সংরক্ষণের উদ্যোগ নি:সন্দেহে ভালো উদ্যোগ। কিন্তু আদিবাসী জুমভূমিতে প্রথাগত জুম চাষ নিষিদ্ধ করে বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের উদ্যোগ আদিবাসী প্রথাগত ভূমি অধিকার ও প্রথাগত চাষবাদের অধিকারের পরিপন্থী। একতরফাভাবে সরাসরি জুম চাষ বন্ধ করে আদিবাসীদের জীবন-জীবিকাকে বিপন্ন করার অধিকার কারোরই নেই। এটা বাস্তবসম্মত ও যুক্তিসঙ্গত হতে পারে না। আদিবাসী জুম্মদের সহজ সরলতাকে কাজে লাগিয়ে তাদের জীবনজীবিকা ও সংস্কৃতি বিধ্বংসী কার্যক্রম কখনোই পরিবেশ ও জন-বান্ধব হতে পারে না।
পরিবেশ সংরক্ষণে সিসিএ বা শাহরিয়ার সিজার আদিবাসীদের জুমভূমি, মৌজাভূমি ও পাড়াবনকে বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি আলিকদম, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়িতে হর্টিকালচারের নামে বহিরাগতদের দেয়া ইজারা ভূমিতে প্রকৃতি ফিরিয়ে আনা বা প্রাকৃতিক বন সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টি দেননি, যে ভূমিতে সবচেয়ে বন সম্পদ ও বন্যপ্রাণী ধ্বংস করা হয়েছে।
কেননা এসব ভূমি বেদখলকারীরা হচ্ছে তার মতো বাঙালি মুসলিম, যাদের সাথে হয়তো তিনি ক্ষমতায় পেরে উঠবেন না কিংবা আদিবাসীদের মতো সহজে তাদেরকে ভুলাতে পারবেন না। হয় তো এমনও হতে পারে যে, এসব ভূমি তো আদিবাসীদের কাছ থেকে ইতিমধ্যে প্রায় কেড়ে নেয়া হয়েছে কিংবা ভূমি থেকে আদিবাসীরা প্রায় উচ্ছেদ হয়ে গেছে, তাই সেই ভূমি বেদখল করার কিংবা আদিবাসীদেরকে উচ্ছেদ করার প্রয়োজনীতা নেই আর। তাই শাহরিয়ার সিজার দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে ম্রো-ত্রিপুরা অধ্যুষিত জুমভূমিতে।
নীল ও কাউপি চাষ
বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের নামে সাইনবোর্ড টানিয়ে কোন কোন এলাকায় নীল ও কাউপি চাষ শুরু করেন শাহরিয়ার সিজার। জুম চাষের পরিবর্তে নীল ও কাউপি চাষের মাধ্যমে জীবিকানির্বাহের উত্সাহ দিতেন জুম্ম গ্রামবাসীদেরকে। অথচ নীল ও কাউপি চাষের সাথে স্থানীয় আদিবাসী জনগণ মোটেও অভ্যস্ত নন।
অধিকন্ত যতটুকু জানা যায়, নীল ও কাউপি চাষ পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য উপযোগী ও অর্থনৈতিকভাবে লাজনক নয়। যে নীল চাষের মাধ্যমে একসময় ব্রিটিশরা ভারতবর্ষের কৃষকদের অবর্ণনীয় শাসন-শোষণ করতো সেই নীল চাষ সিসিএ-এর মাধ্যমে শাহরিয়ার সিজার পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম চাষীদের উপর চাপিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
ইতিমধ্যে নীল রং উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করাসহ প্রশিক্ষণও প্রদান করা হয়েছে বলেও জানা গেছে। অবৈধভাবে জায়গা দখল করে, নীল চাষ ও বন্য প্রাণী শিকার যেন নিত্য প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে শাহরিয়ার সিজার রহমানের কর্মকান্ডে।
ইউএনও’র নিকট অভিযোগ পেশ
জানা যায় যে, সিসিএ-এর এরূপ কর্মকান্ড ও আগ্রাসন থেকে রেহাই পাওয়ার উদ্দেশ্যে পার্বত্য বান্দরবানের সকল মানবাধিকার সংগঠনের সহযোগিতা চেয়েছিলেন অনেক ম্রো পাড়া কার্বারী। উপরন্তু সমস্যার প্রতিবিধান চেয়ে ২০১৮ সালে ম্রো সম্প্রদায়ের লোকজন আলিকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট অভিযোগ পেশ করেছিলেন।
কিন্তু ইউএনও’র পক্ষ থেকেও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বরঞ্চ এর বিনিময়ে উপকারের পরিবর্তে আরো ক্ষতি সাধিত হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। এতে করে বুঝা যায়, স্থানীয় প্রশাসনের তরফ থেকেও শাহরিয়ার সিজারের এসব অপকর্মে পরোক্ষভাবে মদদ রয়েছে। বস্তুত পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব ও সংস্কৃতি বিধ্বংসী কার্যক্রমে প্রশাসন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয়-অরাষ্ট্রীয় সকল কর্তৃপক্ষ পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ অঘোষিত আঁতাত গড়ে তোলে।
আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন লঙ্ঘন
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে এবং চুক্তি অনুযায়ী প্রণীত পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন ১৯৯৮ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন ১৯৯৮ অনুসারে ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, বন (রিজার্ভ বন ব্যতীত), পরিবেশ, এনজিও কার্যক্রম ইত্যাদি কার্যাবলী এসব পরিষদের এখতিয়ারাধীন বিষয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের যে কোন এলাকায় এনজিও কার্যক্রম পরিচালনা করতে হলে এনজিও ব্যুরোর পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। কিন্তু সিসিএ তার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আঞ্চলিক পরিষদ কাছ থেকে অনুমোদন নিয়েছে বলে শোনা যায়নি।
অপরদিকে ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, বন (রিজার্ভ বন ব্যতীত), পরিবেশ ইত্যাদি পার্বত্য জেলা পরিষদের আওতাধীন বিষয়। জুম ভূমি ও মৌজা ভূমি হচ্ছে আদিবাসী জুম্ম জনগণের সামাজিক মালিকানাধীন এবং রাজা-হেডম্যান-কার্বারী সমন্বয়ে গঠিত প্রথাগত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রথাগত আইন অনুসারে ভূমি ব্যবস্থাপনা, জুমভূমি ও মৌজাভূমি ভোগদখল, পাড়াবন সংরক্ষণ, খাজনা আদায়, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি ইত্যাদি সম্পন্ন হয়ে থাকে। কিন্তু শাহরিয়ার সিজার রহমান বা সিসিএ বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ কিংবা প্রথাগত প্রতিষ্ঠানকে উপেক্ষা করে তার প্রকল্প কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য ও প্রাণীজগত সম্পর্কে অজানা থাকার পেছনে শাহরিয়ার সিজার সচতুরভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অস্থিরতা দায়ী করেছেন, যা ছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে তার একটি অতি সুক্ষ্ম বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রকাশ করেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, পার্বত্য জেলা পরিষদ, বোমাং সার্কেল ইত্যাদি পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রশাসনিক ও প্রথাগত প্রতিষ্ঠানের কাউকে সম্পৃক্ত না করে তাদের কাছ থেকে কোন প্রকার অনুমোদন না নিয়ে সেসব এলাকায় শাহরিয়ার সিজার মার্কিন নাগরিক নিয়ে আসেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। তিনি খুব সম্ভবত তার প্রকল্পের আর্থিক স্বার্থে তাদেরকে এনে প্রকল্প এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখান। এভাবে বিদেশী নাগরিকদের নিয়ে দুই’একবার মাতামুহুরি রিজার্ভ গহীন বনেও প্রবেশ করেন শাহরিয়ার সিজার।
আদিবাসী বিষয়ক আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন
বাংলাদেশ কর্তৃক অনুস্বাক্ষরিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার ১৯৫৭ সালের আদিবাসী ও ট্রাইবাল জনগোষ্ঠী বিষয়ক ১০৭নং কনভেনশন অনুসারে আদিবাসীদের বন ও বনভূমির উপর অধিকার রয়েছে। এই কনভেনশনে প্রথাগত ভূমি অধিকার ও নিজস্ব প্রথাগত প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে প্রথাগত ভূমি ব্যবস্থাপনার অধিকারের স্বীকৃতি রয়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার অধিকতর উন্নত কনভেনশন ১৯৮৯ সালে আদিবাসী ও ট্রাইবাল জাতিগোষ্ঠী বিষয়ক ১৬৯নং কনভেনশন এবং ২০০৭ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্রেও আদিবাসীদের বন ও বনভূমির উপর অধিকারকে আরো জোরালোভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। জীববৈচিত্র্য কনভেনশনেও আদিবাসীদের অধিকার স্বীকৃত রয়েছে। দেশের ১৯২৭ সালের বন আইনেও আদিবাসীদের বন ও বনভূমির উপর প্রথাগত অধিকারের স্বীকৃতি রয়েছে।
দৃশ্যত মনে হয়, শাহরিয়ার সিজার এসব আঞ্চলিক (পার্বত্য চট্টগ্রাম), জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তিপত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন। রিজুয়ানুল হক যখন শাহরিয়ার সিজারকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, ১০৭ ও ১৬৯নং আইএলও কনেভেনশনে আদিবাসীদের ভূমির অধিকার এবং বনজসম্পদ ব্যবহারের অধিকারের কথা বলা হয়েছে তা নিয়ে অবগত আছেন কিনা? শাহরিয়ার সিজার হেসেই উড়িয়ে দিয়েছিলেন এই বলে যে, বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এসব খাটে না!
অথচ বাংলাদেশ সরকারের ৬ষ্ঠ ও ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় জাতিসংঘের আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের অঙ্গীকার এবং আইএলও’র ১৬৯নং কনভেনশন অনুস্বাক্ষরের প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক এসব আইনে ও চুক্তিপত্রে আদিবাসীদের আইনী অজ্ঞতা ও সরলতার সুযোগ নিয়ে আদিবাসীদের অধিকার হরণ করার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে এবং এধরনের অপকর্ম দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
এলাকাবাসীর দাবি
আলিকদম উপজেলা হতে বিলুপ্ত প্রায় বন্যপ্রাণী শিকার করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ঢাকায় পাচার করা হয় বলে জানান স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। দেশের স্বার্থ নষ্ট করে অবৈধভাবে সম্পদ পাচার করা অসাধু ব্যবসায়ী শাহরিয়ার সিজার এর বিরুদ্ধে তদন্তের মাধ্যমে প্রশাসন যাতে প্রয়োজনীয় ও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়, সেটি জোর দাবি জানিয়েছেন বান্দরবান জেলার থানচি ও আলিকদম উপজেলার মাতামুহুরী রিজার্ভ অংশের সাধারণ জনগণ।