হিল ভয়েস, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বিকাল ৪ টার দিকে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ উদ্বাস্তু উন্নয়ন সংসদ কর্তৃক বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনজাতিদের উপর হামলার প্রতিবাদে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে উক্ত ঘটনার আন্তর্জাতিক নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিও জানানো হয়েছে।
এসময় পিস কেমপেইন গ্রুপের সভাপতি করুণালংকার ভিক্ষু কর্তৃক সাংবাদিকদের সামনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে লিখিত বিভিন্ন দাবি সম্বলিত একটি চিঠিও পাঠ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনের বিষয়বস্তু ছিল- “ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে ইসলামিক মৌলবাদীদের দ্বারা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিষ্টিয়ানদের বাড়িঘরে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, মন্দির ধ্বংস, সংখ্যালঘু মা-বোনদের ধর্ষণ ও খুন, ধর্মান্তরিত করাসহ দেশত্যাগে বাধ্য করা তথা বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক ভারত বিরোধীতাসহ ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি ও পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনজাতি গোষ্ঠিকে নির্মূল করার প্রতিবাদে এবং আন্তর্জাতিক নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবি।”
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ডক্টর প্রদীপন চৌধুরী। এতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ উদ্বাস্তু উন্নয়ন সংসদ-এর সভাপতি মিঃ বিমল মজুমদার, আইনজীবী শংকরলাল দাস, বাংলাদেশের মানবাধিকারকর্মী আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ, পিসিজি (Peace Campaign Group)-এর প্রেসিডেন্ট করুনালংকার ভিক্ষু এবং CAAMB (Campaign Against Atrocities on Minorities in Bangladesh) এবং হিন্দু সংহতি সমিতিসহ বিভিন্ন সংস্থার শতাধিক বিশিষ্টজন ও বুদ্ধিজীবী।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ উদ্বাস্তু উন্নয়ন সংসদ-এর সভাপতি মিঃ বিমল মজুমদার বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরার পাশাপাশি নিম্নোক্ত দাবি তুলে ধরেন:
১) অতি দ্রুত সংখ্যালঘুদের উপর সব ধরনের নির্যাতন বন্ধ করা;
২) ক্ষতিগ্রস্ত সংখ্যালঘুদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরনের ব্যবস্থা করা;
৩) সংখ্যালঘু হত্যার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা করা;
৪) বৈষম্য দূর করে সর্বত্র সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার নিশ্চিত করা; এবং
৫) অনতিবিলম্বে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল সরকার গঠন করা ।
আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ ও আইনজীবী শংকরলাল দাস বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের কাহিনী তুলে ধরেন এবং সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টীয়ানসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী জুম্মজাতি গোষ্ঠি নিধন বন্ধ করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানান।
সভাপতি ডক্টর প্রদীপন চৌধুরী তাঁর ভাষণে সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টীয়ানসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী জুম্মজাতি গোষ্ঠি নিধন বন্ধ করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান করার পাশাপাশি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টীয়ানসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী পাহাড়িদেরকে রক্ষা করার জন্য ভারত সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
অপরদিকে, করুণালংকার ভিক্ষু তাঁর চিঠিতে বাংলাদেশের অন্তর্বতীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে: জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, দীঘিনালা ক্যান্টনমেন্টের কমান্ডার, খাগড়াছড়ি সেনা জোনের কমান্ডার ও রাঙ্গামাটি ক্যান্টনমেন্টের কমান্ডারকে অবিলম্বে অপসারণ; হামলার ঘটনা তদন্তের জন্য আদিবাসী ও অ-আদিবাসী বিচারক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের ও স্বাধীন বিচারিক তদন্ত কমিটি গঠন; আইন অনুযায়ী হামলায় জড়িত অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি; পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণসহ ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ; সেটেলারদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে তাদের স্ব স্ব অঞ্চলে পুনর্বাসন; সেনা ক্যাম্প ও সেনাশাসন প্রত্যাহার, পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় শাসনব্যবস্থার ক্ষমতায়ন, সেটেলারদের কর্তৃক বেদখলকৃত ভূমি ফেরতদান সহ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মূল ধারাগুলো বাস্তবায়ন ইত্যাদি দাবি জানানো হয়।