হিল ভয়েস, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গতকাল (২৭ সেপ্টেম্বর) ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাব্রুম শহরে বৌদ্ধ ভিক্ষু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী চাকমা ও মগ (মারমা) সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণে সম্প্রতি বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি জেলায় আদিবাসী জুম্ম জাতি ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের উপর হামলা, হত্যা, বাড়ি ও দোকানে অগ্নিসংযোগ এবং বৌদ্ধ বিহারে হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুর এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দুদের উপর হামলার প্রতিবাদে এক মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। মিছিল শেষে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাবরে একটি স্মারকলিপিও প্রেরণ করা হয়েছে।
গতকাল এসময় শত শত বৌদ্ধ ভিক্ষু ও হাজারো বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষ মিছিলে অংশগ্রহণ করেন বলে স্থানীয় সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। এসময় তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে সংখ্যালঘু জনগণের উপর হামলা এবং বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলার ঘটনার দৃপ্তকন্ঠে প্রতিবাদ জানান।
এসময় বৌদ্ধ ভিক্ষুরা সাংবাদিকদের জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনজাতির উপর ক্রমাগত যে আক্রমণ চলছে তা নজিরবিহীন এবং মানবতাবিরোধী। তারা অবিলম্বে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনজাতিদের উপর এই আক্রমণ বন্ধ করার আহ্বান জানান।
একটি বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সংগঠন ‘ত্রিপুরা ভিক্ষু সংঘ রক্ষিত এসোসিয়েশন’ এবং চারটি মগ সম্প্রদায়ের সংগঠন মগ সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, মহামুনি ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি, মগ যুব সংগঠন ও সোসাইটি ফর ওয়েলফেয়ার অব মগ স্টুডেন্টস এর উদ্যোগে এই মিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি আয়োজিত হয়।
ইন্টারন্যালশাল বৌদ্ধ কনফেডারেশনে চেয়ারম্যান ও প্রখ্যাত বৌদ্ধ ভিক্ষু ড. ধম্মপ্রিয়, এমএলএ মিলাপ্রু মগ, থিংকিং মগ প্রমুখ এই মিছিলে নেতৃত্ব দেন বলে জানা গেছে। পরে নেতৃবৃন্দ সাব-ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এর বরাবরে স্মারকলিপিটি প্রেরণ করেন।
এসময় ইন্টারন্যালশাল বৌদ্ধ কনফেডারেশনে চেয়ারম্যান ও প্রখ্যাত বৌদ্ধ ভিক্ষু ড. ধম্মপ্রিয় সাংবাদিকদের সামনে বাংলাদেশের জনগণ ও সেনাবাহিনীকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সংখ্যালঘু জনজাতি, বিশেষ করে বৌদ্ধদের উপর হামলা বন্ধ এবং তাদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার জন্য মানবিক পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, সংখ্যালঘু জনজাতি, বিশেষত বৌদ্ধরা প্রতিনিয়ত সাম্প্রদায়িক হামলার সম্মুখীন হচ্ছে।
তিনি আইনগত প্রক্রিয়ায় সকল ক্ষোভ মোকাবেলা করার আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, গত ১৮-১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খাগড়াছড়ি সদর ও দীঘিনালায় এবং ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ রাঙ্গামাটি সদরে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সেটেলার বাঙালিরা জুম্ম জনগণের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা এবং জুম্মদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা সংঘটিত করে। উক্ত সাম্প্রদায়িক হামলায় ৫ জন জুম্ম নিহত হয় (সেটেলার বাঙালি কর্তৃক দীঘিনালায় একজন জুম্ম, খাগড়াছড়ি সদরে সেনাবাহিনীর গুলিতে ৩ জন জুম্ম এবং রাঙ্গামাটি সদরে সেটেলার বাঙালি কর্তৃক একজন)। এছাড়া এই সাম্প্রদায়িক হামলায় শতাধিক জুম্ম আহত হয়, অগ্নিসংযোগে ভস্মিভূত হয় শতাধিক ঘরবাড়ি ও দোকানপাট।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, মামুন (৪০) নামের এক ব্যক্তি মোটরবাইক চুরির চেষ্টাকালে গণপিটুনির শিকার হওয়ার পর হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করলে, পরে সেটেলার বাঙালিরা একতরফাভাবে জুম্মরা মেরেছে বলে প্রচার করে এবং সাম্প্রদায়িক উস্কানি সৃষ্টি করে।