হিল ভয়েস, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গতকাল ২৩শে সেপ্টেম্বর ২০২৪, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি এবং রাঙ্গামাটিসহ বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় অবৈধ মুসলিম সেটেলারদের দ্বারা জুম্মদের উপর হামলা, হত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করার প্রতিবাদে দিল্লী চাকমা স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (ডিসিএসইউ) কর্তৃক প্রতিবাদ সমাবেশ ডাকা হয়। সমাবেশ শেষে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ভারত সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এস জয়শংকর এর বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
মিঃ পরিতোষ চাকমা এবং ডিসিএসইউ-এর জেনারেল সেক্রেটারী মিঃ তুষিত চাকমার নেতৃত্বে প্রতিবাদ সমাবেশটি পরিচালিত হয়। আর অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন জেএনইউ-এর প্রাক্তন প্রফেসর ও দিল্লী সাংবাদিক ফোরামের সম্পাদক ডক্টর সুবোধ কুমার এবং বক্তব্য রাখেন আরএসএস-এর কেন্দ্রীয় প্রচারক ডক্টর কৃষ্ণ দয়াল জমাতিয়া, দার্জিলিং গোর্খাল্যান্ডের নেতা এডভোকেট প্রমোদ ছেত্রী, বিজেপি কেন্দ্রীয় সদস্য এবং নর্থ-ইস্ট সেলের প্রধান মিসেস খুলনা লাইমায়ুম, পিস কেমপেইন গ্রুপ (পিসিজি)-এর প্রেসিডেন্ট করুনালংকার ভিক্ষু, ডিসিএসইউ-এর প্রেসিডেন্ট মিস মিলনী চাকমা, ভাইস-প্রেসিডেন্ট মিঃ বিপুল চাকমা, মিজোরাম মহিলা সমিতির প্রেসিডেন্ট মিসেস মন্দিরা চাকমা এবং মিঃ উত্তম চাকমা বক্তব্য রাখেন।
ডক্টর সুবোধ কুমার বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সরকার ও সেনাবাহিনীর ভূমিকার কড়াভাষায় সমালোচনা করেন। তিনি অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের দ্বারা পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ভারত সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
ডক্টর কৃষ্ণ দয়াল জমাতিয়া এবং মিসেস খুলনা লাইমায়ুম বক্তব্যে বলেন যে, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশে সংখ্যালঘুর উপর অত্যাচার ও নির্যাতনে তারা চিন্তিত। তারা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টিয়ানদের ভারতে আশ্রয় প্রদান করাসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলটি ভারতে অন্তর্ভুক্তি করার দাবি জানান।
অ্যাডভোকেট প্রমোদ ছেত্রী তাঁর বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে অধিকার আদায়ের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন।
সমাবেশ শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রীর লিখিত স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেন ডিসিএসইউ এর সভাপতি মিলানি চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক তুশিত চাকমা।
স্মারকলিপি নিম্নোক্ত ৫ দফা দাবি জানানো হয়-
১. সম্প্রতি খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে আদিবাসীদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা এবং সামরিক বাহিনীর ভূমিকা বিষয়ে জাতিসংঘের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা;
২. যারা নিরস্ত্র আদিবাসীদের উপর গুলি করেছিল সেইসব সেনা সদস্য সহ সংগঠিত সাম্প্রদায়িক হামলার অপরাধীদের জবাবদিহি ও বিচারের আওতায় আনা;
৩. পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অন্তর্বতীকালীন সরকারকে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে;
৪. অবিলম্বে নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক আদিবাসীদের আটক ও হয়রানি বন্ধ করা;
৫. যাদের বাড়ি পুড়ে গেছে এবং যারা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন তাদের অবিলম্বে পুনর্বাসন করা এবং আশ্রয়, খাদ্য, বস্ত্র ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা;
৬. পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করা;
৭. আদিবাসীদের এবং তাদের অধিকারের সাংবিধানিক স্বীকৃতিতে সম্মত হওয়া এবং
৮. পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ভারত সরকার যথাযথ বিবেচনা করলে যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা।