হিল ভয়েস, ২৯ আগস্ট ২০২৪, বিশেষ প্রতিবেদক: রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার সদ্য অপসারিত ৯টি উপজেলা পরিষদের জুম্ম চেয়ারম্যানগণ (স্বতন্ত্র) তাদেরকে স্ব-পদে পুনর্বহালের আবেদন জানিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নিকট চিঠি দিয়েছেন।
গত ২৭ আগস্ট, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে প্রেরিত এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেন রাঙ্গামাটি জেলার রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অন্ন সাধন চাকমা, বরকল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিধান চাকমা, বিলাইছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীরোত্তম তঞ্চঙ্গ্যা, বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা, নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অমর জীবন চাকমা এবং খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিমল কান্তি চাকমা, দীঘিনালা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ধর্ম জ্যোতি চাকমা, পানছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দ্র দেব চাকমা, লক্ষীছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুপার জ্যোতি চাকমা।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘ভৌগলিক কারণে বাংলাদেশের অপরাপর ৬১ জেলার চেয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার প্রেক্ষাপট একেবারেই ভিন্ন। পার্বত্য চট্টগ্রামে নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য যেমন রয়েছে, ঠিক তেমনি প্রকৃতির বৈরিতাও কম নয় এখানে। এখানকার মানুষের জীবনধারা, কৃষ্টি এবং সংস্কৃতিতেও রয়েছে অনন্য বৈচিত্র্যতা। পাহাড়ি এই জনপদের পদে পদে শঙ্কা, বাধা ও নানাবিধ সংকট রয়েছে। হাজারো প্রতিবন্ধকতা নিয়ে যাপিত হয়ে পার্বত্য তিন জেলার বাসিন্দাদের জীবন। তার উপর সারাদেশের ন্যায় সদ্য বিগত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার ও তার দোসরদের অত্যাচার, অনিয়ম এবং নানাবিধ অপতৎপরতাও ১৬ বছর ধরে অতিষ্ঠ করে তুলেছে আমাদের। ..সবক্ষেত্রে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার, বলপ্রয়োগ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে রেখেছিল আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।’
এতে আরও বলা হয়, ‘জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার পরিষদের সকল নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করেছে তারা। এতো এতো বাধা, ভয়ভীতি ও নির্যাতন উপেক্ষা করে খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার ৯টি উপজেলার মানুষ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমাদের বারবার নির্বাচিত করে এসেছে। গত ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-২৪ এ খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার সবকটি উপজেলায় জোর করে বিজয় ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। সেসব সংবাদ তখনকার অনেক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সর্বোচ্চ বলপ্রয়োগ করার পরও জনগণের বিজয় তারা ছিনিয়ে নিতে পারেনি। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আওয়ামী সরকারের শত বাধা-বিপত্তি ও প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে বিজয় অর্জন করার মাত্র দুই-তিন মাসের মাথায় সারাদেশের সকল উপজেলা পরিষদে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের অপসারণ করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পানছড়ি, দীঘিনালা, লক্ষীছড়ি, মহালছড়ি উপজেলা এবং রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার রাঙ্গামাটি সদর, বিলাইছড়ি, নানিয়ারচর, বরকল ও বাঘাইছড়ি উপজেলা। এই নয়টি উপজেলার চেয়ারম্যানদের মধ্যে অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জনতার রায়ে দুই দুই বার এবং অনেকে হ্যাট্রিক বিজয় অর্জন করেছেন। যা ছিল স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে সাধারণ জনতার ক্ষোভের প্রকাশ।”
চেয়ারম্যানগণ তাদের চিঠিতে জনতার রায়কে সমুন্নত রাখতে অপসারণকৃত উক্ত ৯ উপজেলার স্বতন্ত্র চেয়ারম্যানদেরকে স্ব স্ব পদে পুনঃবহাল করার জোর আবেদন জানান। এতে ‘আওয়ামীলীগের শক্তির বিরুদ্ধে ঝুঁকি নিয়ে ভোট দেওয়া সাধারণ ভোটারদের মাঝেও স্বস্তি ফিরবে, তাদের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটবে’ বলে উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নিকটও চিঠির অনুলিপি প্রেরণ করা হয়।
+ There are no comments
Add yours