হিল ভয়েস, ১২ মে ২০২০, রাঙ্গামাটি: কোভিড-১৯ মহামারীতেও পাহাড়ের জনজীবনে অচলাবাস্থার সৃষ্টি হলেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের সিজকছড়ায় বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ থেমে নেই।এতে কমপক্ষে ১০৫ পরিবার আদিবাসী গ্রামবাসী ক্ষতির মুখোমুখী হবে।
গত ১০ মে ২০২০ খাগড়াছড়ির ডেপুটি কমিশনার প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাসের আহ্বানে এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ারের সভাপতিত্বে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে এ বিষয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা বলে খবর পাওয়া গেছে।
সরকারের একাধিক দপ্তর বা মন্ত্রণালয় এই উদ্যোগে সম্পৃক্ত থাকলেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীই এর মূল উদ্যোক্তা বলে জানা যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে যে, বিগত ৩-৪ মাসের মধ্যে সেনাবাহিনীর সদস্যরা বেশ কয়েকবার জায়গাটি পরিদর্শন করেছেন এবং প্রকৌশলী দিয়ে বাঁধের পরিমাপও নিয়েছেন।
এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর, পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, সেনাবাহিনীর চট্টগ্রামের ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি এবং রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি ব্রিগেড কম্যান্ডারসহ অনেকেই প্রস্তাবিত জায়গাটি পরিদর্শনে এসেছিলেন।
অনেকটা স্থানীয় জনগণ ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অগোচরে এবং জনগণের স্বাধীন পূর্বাবহিত পূর্বক সম্মতি ও অধিকারকে বিবেচনা না করে, একতরফাভাবে সাজেক ইউনিয়নের ব্রিজপাড়া সংলগ্ন সিজকছড়ার উপর এই বাঁধ নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিকে সম্ভাব্য উক্ত বাঁধ নির্মাণ নিয়ে এলাকার জুম্ম জনগণের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে নানা দুশ্চিন্তা ও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা।
একদিকে সেনাবাহিনী কর্তৃক চুক্তিবিরোধী ভূমিকা, জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী নানা কর্মকান্ড, পার্বত্য চুক্তি সমর্থনকারী অধিকার কর্মীদের উপর দমন-পীড়ন, গ্রামে গ্রামে সাধারণ মানুষের বাড়ি তল্লাশী, হয়রানি, আটক; অপরদিকে তাদের দ্বারাই এই বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ জনগণের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
এছাড়া এই উদ্যোগের পূর্বে এ বিষয়ে স্থানীয় জুম্ম জনগণকে অবহিত করা হয়নি এবং তাদের সাথে আন্তরিকভাবে ও স্বচ্ছতার সাথে আলোচনা করা হয়নি। জনগণের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কোন জরিপ করা হয়নি এবং তা বিবেচনায়ও আনা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর হিসাব অনুযায়ী, এই বাঁধ নির্মাণ করা হলে এতে অন্তত ১০৫ আদিবাসী জুম্ম পরিবারের ২৫৩ একর ভূমি ও বসতভিটার ক্ষতির শিকার হবে। তাদের অনেক জায়গা বাঁধের পানিতে ডুবে যাবে।
সংশ্লিষ্ট একটি সুত্রে জানা গেছে, মূলত সাজেকের পর্যটনের সৌন্দর্য্য ও সুবিধা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যেই সেনাবাহিনী এই বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। তাদের ধারণা, এই বাঁধ নির্মাণ করা হলে বাঁধের পানি পর্যটন স্থাপনার কাছাকাছি যাবে এবং বাঁধের পানি থেকে পর্যটন রিসোর্টগুলোতে পানি সরবরাহ করা সহজতর হবে।
বিপরীতভাবে বলা যায়, নিজেদের পর্যটন ব্যবসা ও চলাচলের সুবিধার পাশাপাশি, স্থানীয় জুম্মদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার হীন উদ্দেশ্যেই সেনাবাহিনী কর্তৃক জনবিচ্ছিন্ন ও একতরফাভাবে এই বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
অনেকের আশঙ্কা, এই বাঁধ নির্মাণের ফলে স্থানীয় আদিবাসী জুম্ম জনগণের জীবন-জীবিকাকে ধ্বংস করবে এবং নিজ বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ করবে।