হিল ভয়েস, ১০ আগস্ট ২০২৪, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গতকাল ৯ আগস্ট নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদরদপ্তরের সামনে আদিবাসী সম্প্রদায় এর ব্যানার নিয়ে আদিবাসীরা জুম্মরা ‘সিএইচটি রেগুলেশন-১৯০০’ বাতিলের ষড়যন্ত্র এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে হত্যা, জোরপূর্বক গুম ও গণহত্যা বন্ধ করা এবং আদিবাসী জুম্মদের আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করার দাবিতে এক বিক্ষোভ সমাবেশের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালন করেছেন।
সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অধিকারকর্মী সুশীল জীবন চাকমা। তিনি বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী জুম্মদের অধিকার নিশ্চিত করার উপর জোর দেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন অধিকারকর্মী মং এ প্রু মারমা। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে পাহাড়ে কল্পনা চাকমা অপহরণের শিকার হন, কিন্তু কেউ জানে না তিনি কোথায়। পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘাত শুরুর পর থেকে সকলেই জানেন জুম্মদের উপর কী ধরনের মানবাধিকার লংঘন হয়েছে। এমনকি ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের পরও, এখনও পর্যন্ত মানবাধিকার লংঘনের ধারা অব্যাহত রয়েছে। অথচ রাষ্ট্রীয় বাহিনীর চাপের কারণে মানবাধিকার লংঘনের সংবাদ জাতীয় দৈনিকসমূহ ও ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে প্রকাশিত হয় না।
তিনি আরও বলেন যে, সম্প্রতি যশোর ও খুলনা জেলায় হিন্দুরা আক্রমণের শিকার হয়েছেন এবং তাদের ঘরবাড়ি তছনছ করা হয়। সম্প্রতি সরকারের আদিবাসী চাকরির কোটার ক্ষেত্রে ৫% ভাগ থেকে ১% ভাগে কমানোর প্রতিবাদ জানিয়ে, তিনি আদিবাসীদের জন্য চাকরিতে ৫% ভাগ কোটা সংরক্ষণের দাবি জানান।
নারী অধিকার আন্দোলনের নেত্রী চঞ্চনা চাকমা তার বক্তৃতায় বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী জুম্মদের অস্তিত্ব আজ কঠিন অবস্থায় রয়েছে। সেখানে জুম্ম জনগণের কোনো অধিকার, কোনো নিরাপত্তা নেই। তিনি রাষ্ট্রের সকল প্রকার অপকর্ম ও অনাচারের নিন্দা জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র কখনোই আদিবাসী জুম্মদের পক্ষে কথা বলে না। বরং তারা আদিবাসীদের অধিকার কিভাবে ক্ষুণœ করা যায় তারই ষড়যন্ত্র চালায়। তিনি বাংলাদেশে আদিবাসী ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার দাবি জানান।
তিনি আরও বলেন যে, রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধানের জন্য ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু সেই চুক্তি এখনও পর্যন্ত যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হয়নি। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করার জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন উচিংমং চৌধুরী। তিনি এই বছর আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের প্রতিপাদ্য “Protecting the Rights of Indigenous Peoples in Voluntary Isolation and Initial Contact” এর আলোকে সকল আদিবাসী ও তাদের অধিকারের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি তুলে ধরেন।
অংশগ্রহণকারীরা প্ল্যাকার্ডে তাদের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলি হল- ‘বাংলাদেশে আমাদেরকে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিন’, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন কর’, ‘১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন বিলুপ্তির ষড়যন্ত্র বন্ধ কর’, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার কর’, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি কমিশন কার্যকর করা’, ‘আদিবাসীদের জন্য ন্যূনতম ৫% কোটা সংরক্ষণ করুন’ ইত্যাদি।
বিশেষ অতিথি সুপ্তা চাকমা তাতু সমাপনী বক্তব্য প্রদানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
+ There are no comments
Add yours