হিল ভয়েস, ২ জুলাই ২০২৪, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আহমদ হোছাইন-এর বিরুদ্ধে ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক জুম্ম নারী শিশু শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি ও তার সাথে আপত্তিকর আচরণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরই পিতা রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার বাসিন্দা সুশীল জীবন চাকমা।
ভুক্তভোগী নারী শিশুর পিতা অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা সহ রাঙ্গামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসকের বরাবরে একটি স্মারকলিপিও পেশ করেছেন আজ (২ জুলাই ২০২৪)। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ২৯৯নং পার্বত্য রাঙ্গামাটি আসনের সংসদ সদস্য, চট্টগ্রামের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক এবং রাঙ্গামাটি জেলার শিক্ষা কর্মকর্তার বরাবরেও স্মারকলিপির অনুলিপি দিয়েছেন তিনি।
ভুক্তভোগীর পিতা স্মারকলিপিতে উল্লেখ করেন- “আমার মেয়ে (…চাকমা) রাঙ্গামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির সকালের শিফটের ক শাখার একজন ছাত্রী..। আমার মেয়ে গত ৪ জুন ২০২৪ তারিখে বাসায় এসে স্কুলে তার সাথে ঘটে যাওয়া কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা শেয়ার করে। মেয়েটি যেহেতু শিশু এবং ছোট; তাই তার সাথে এই অপ্রীতিকর ঘটনাগুলো কোন দিন ঘটেছে, কখন ঘটেছে ঘটনার দিন, তারিখ কিংবা সময় কিছুই স্মরণে রাখতে পারেনি। তার ভাষ্য মতে, আহমদ হোছাইন নামের একজন শিক্ষক বেশ কয়েকবার তার সাথে আপত্তিকর ও যৌন হয়রানিমূলক আচরণ করে।
শিক্ষক আহমদ হোছাইন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষে (যে রুমে তিনি নিয়মিত বসেন) ৪-৫ বার তাকে ডেকে নিয়ে যায় এবং বিনাকারণেই সেখানে বসে থাকতে বলে এবং অপ্রীতিকর কথাবার্তা বলে; যার ফলে অনেক সময় ক্লাস করতে পারে না। শিক্ষক যখন ডাকে তখন তার সাথে বান্ধবী তুনিয়াও প্রায় সময় থাকে। অন্যকোন শিক্ষক রুমে ডুকলেই তবে রুম থেকে যেতে দেয়। একদিন শিক্ষক আহমদ হোছাইন আমার মেয়ে ও তার দুই বান্ধবী..কে তার রুমে ডাকে। এ সময় শিক্ষক সিগারেটে টান দিতে থাকেন এবং একপর্যায়ে শিক্ষক আহমদ হোছাইন তার বান্ধবীদের সামনেই আমার মেয়ের অনিচ্ছায় তার হাত ধরে টানাটানি করে এবং কোমরে হাত দেয়। আকস্মিক ঘটনায় ভয়ে আমার মেয়ে হতভম্ব হয়ে পড়ে যার ফলে চিৎকারও করতে পারেনি এবং হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেও পারেনি। কিছুক্ষণ পর অন্য একজন শিক্ষক রুমে প্রবেশ করায় সে আমার মেয়েকে ছেড়ে দেয়। … এর পরেই সে আমাদের সাথে বিষয়টি শেয়ার করে। শুধু তাই নয়, শিক্ষক আহমদ হোছাইন তাঁর কাছে প্রাইভেট পড়ার জন্য অনেক শিক্ষার্থীকে বলেন এবং আমার মেয়েও যাতে তার কাছে প্রাইভেট পড়ে সেজন্য আমার বড় মেয়েকে (রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজে অধ্যয়নরত) ব্যক্তিগতভাবে মেসেঞ্জারেও নক দিয়েছিলেন যার প্রমাণ রয়েছে।
আমার মেয়ে আরও জানায় যে, শিক্ষক আহমদ হোছাইনের আচরণ আমার কাছে খুবই আপত্তিকর মনে হয় এবং আমার ভালো লাগে না। কারণ তিনি আমাদের সাথে মজা করেন। যদি কোন ছাত্রী ক্লাসে অনুপস্থিত থাকে, তাহলে পরবর্তী ক্লাসে ক্লাস রুমে তাকে ডাকে এবং দাঁড় করিয়ে তার শরীরের দিকে আপত্তিকর অবস্থায় তাকিয়ে থাকে যা আমার একদম ভালো লাগে না। ঘটনাটি বিস্তারিত জানার পর তাকে যখন প্রধান শিক্ষক বরাবর অভিযোগ করতে বলি তখন সে বলে, “যদি আমি প্রধান শিক্ষককে অভিযোগ দিই, তাহলে শিক্ষক ক্লাসে এসে বিষয়টি বলবে এবং স্যার হয়তো আমাকে দোষারোপ করবে ও মারবে, তাই আমি অভিযোগ দিতে ভয় পাচ্ছি।”
তবুও আমার বড় মেয়ে তার কয়েকজন সঙ্গীকে সাথে নিয়ে গত ৮/৬/২০২৪ তারিখে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বরাবর লিখিতভাবে যৌন হয়রানির অভিযোগ দেয়। পরে আমরা জানতে পারি, প্রধান শিক্ষক অভিযুক্ত আহমদ হোছাইনকে মৌখিকভাবে সতর্ক করে দেন।..”
স্মারকলিপিতে নিমোক্ত দাবি নিশ্চিত করার আবেদন জানানো হয়-
১. শিক্ষক আহমদ হোছাইনের যৌন হয়রানি ও আপত্তিকর আচরণের বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
২. শিক্ষক আহমদ হোছাইনের বিদ্যালয় থেকে অতিদ্রুত প্রত্যাহার করা।
৩. শিক্ষক আহমদ হোছাইনের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের তদন্ত চলাকালীন সকল ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা।