হিল ভয়েস, ২৪ জুন ২০২৪, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে সংস্কারপন্থী দলের শ্রমিক সংগঠন ‘আদিবাসী শ্রমজীবী কল্যাণ সমিতি’র পাঁচ নেতাকর্মী এক জুম্ম নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
গত ২১ জুন, ভুক্তভোগী ওই নারী (২৯) বাদী হয়ে নিজেই চট্টগ্রামের ইপিজেড থানায় উক্ত সংস্কারপন্থী শ্রমিক নেতাকর্মীদের কর্তৃক জোরপূর্বক অপহরণ, মারধর ও গণধর্ষণের শিকার হওয়া এবং মুক্তিপণ আদায় করার অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেন। উক্ত ইপিজেড থানার মামলা নং-০৬, তারিখ-২১/০৬/২০২৪, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সং/২০২০) এর ৭/৮/৯(৩)/৩০ তৎসহ ৩২৩ পেনাল কোড।
চট্টগ্রাম পুলিশ ইতোমধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে জেলে প্রেরণ করেছে বলে জানা গেছে।
অভিযুক্ত ও গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা হলেন- ১। আশীষ চাকমা (২৫), পীং-সবিনয় চাকমা, গ্রাম-বাবুছড়া অতিকায় কার্বারি পাড়া, দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি জেলা, বর্তমান ঠিকানা-সাইদ বিল্ডিং, ৪র্থ তলা, রুম নং-৭, ২নং মাইলের মাথা, বন্দর থানা, চট্টগ্রাম; ২। সুবীর চাকমা (৩৯), পীং-মৃত ত্রিলোচন চাকমা, গ্রাম-ইটছড়ি ভিতর পাড়া, ত্রিলোচন বাড়ি, কমলছড়ি, খাগড়াছড়ি সদর, বর্তমান ঠিকানা-বেগমজান স্কুলের পাশে, সল্টগোলা ক্রসিং, বন্দও থানা, চট্টগ্রাম; ৩। জুয়েল ত্রিপুরা (৩২), পীং-মৃত লোকন্দ্রলাল ত্রিপুরা, গ্রাম-ভৈরফা নোয়াপাড়া, দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি, বর্তমান ঠিকানা-চাকমা বিল্ডিং, সাইফ বিল্ডিং-এর পাশে, ৫ম তলা, ডাস্টবিন গলি, বন্দর থানা, চট্টগ্রাম; ৪। বিনয় তালুকদার (৩৬), পীং-অমিয় কান্তি তালুকদার, গ্রাম-গুইছড়ি মুখ, হিরণ কার্বারি পাড়া, বরকল, রাঙ্গামাটি জেলা, বর্তমান ঠিকানা-আকমল আলী রোড, ইসমাইল সুকানির বাড়ির পেছনে শেষ মাথার নতুন বিল্ডিং, ইপিজেড থানা, চট্টগ্রাম ও ৫। সমর চাকমা (৩৩), পীং-অজ্ঞাত, গ্রাম-রাঙ্গামাটি সদর, বর্তমান ঠিকানা-বড়দীঘির পাড়া, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।
জানা গেছে, মামলার ১নং আসামী আশীষ চাকমা আদিবাসী শ্রমজীবী কল্যাণ সমিতির চট্টগ্রাম মহানগর শাখা’র সহ সাধারণ সম্পাদক, ৩নং আসামী আদিবাসী শ্রমজীবী কল্যাণ সমিতির চট্টগ্রাম মহানগর শাখা’র সাংগঠনিক সম্পাদক। অন্যান্যরাও একই সংগঠনে কাজ করেন বলে জানা গেছে।
বাদীর বাড়ি রাঙ্গামাটি জেলার নান্যাচর উপজেলার সাবেক্ষ্যং মুখ এলাকার মহাজনপাড়া গ্রামে। তিনি বর্তমানে সিইপিজেড এলাকায় স্মার্ট জ্যাকেট পোশাক কারখানায় চাকরি করছেন বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য যে, মামলায় অভিযুক্ত ৪নং আসামী বিনয় তালুকদার ভুক্তভোগী নারীর স্বামী এবং তিনি ধর্ষণের ঘটনার সহযোগী।
মামলার সূত্রে জানা যায়, পারিবারিক বিষয় নিয়ে ভুক্তভোগী নারী ও তার স্বামী বিনয় তালুকদারের মধ্যে বেশ কয়েকদিন ধরে টানাপোড়েন চলছিল। পর পুরুষের সাথে সম্পর্ক আছে-এমন সন্দেহে স্বামী বিনয় তালুকদার প্রায়ই তার স্ত্রী ভুক্তভোগী নারীর সাথে খারাপ আচরণ করত।
গত ১৬ জুন, ভুক্তভোগী নারী তার বান্ধবীদের সাথে বেড়াতে গেলে, সেখান থেকে ফেরার পর রাত ৭:৩০ টার দিকে তার স্বামী বিনয় তালুকদার সন্দেহ পোষণ করলে উভয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। এমন সময় বিনয় তালুকদার এক ব্যক্তিকে ফোন করেন এবং তার স্ত্রীকে উচিত শিক্ষা দেয়ার জন্য লোক আসছে বলে জানায়।
এরপর রাত আনুমানিক ৮:৩৫ টার দিকে ১নং আসামী আশীষ চাকমা, ২নং আসামী সুবীর চাকমা, ৩নং আসামী জুয়েল ত্রিপুরা ও ৫নং আসামী সমর চাকমা ভুক্তভোগী নারী ও তার স্বামীর বাড়িতে আসেন। আসার সাথে সাথে তাদের মধ্য থেকে জুয়েল ত্রিপুরা ভুক্তভোগী নারীকে উপর্যুপরি থাপ্পর ও লাঠি মারে। এসময় ভুক্তভোগী নারীর স্বামী চুপ করে দেখতে থাকে।
এরপর রাত ১০:১৫ টার দিকে স্বামী বিনয় তালুকদারের নির্দেশে উক্ত আসামীরা ভুক্তভোগী নারীকে সেখান থেকে অপহরণ করে ১নং আসামী আশীষ চাকমার বাড়ির একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখে। সেখানেও জুয়েল ত্রিপুরা ভুক্তভোগী নারীকে আরও মারধর করে এবং নারীর ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে ৫০০০ টাকা কেড়ে নেয়।
পরদিন (২০ জুন) সকাল ৭ টার দিকে উক্ত আসামীগণ ভুক্তভোগী নারীকে ৫নং আসামী সমর চাকমার বাসায় নিয়ে যায়। সেখানেই সকাল ৯ টা হতে ১২ টার মধ্যে ১নং আসামী আশীষ চাকমা ও ২নং আসামী সুবীর চাকমা পালাক্রমে ভুক্তভোগী নারীকে ধর্ষণ করে। দুপুর ১২:৩০ টার দিকে ভুক্তভোগী নারীর স্বামী বিনয় তালুকদার ও জুয়েল ত্রিপুরাও সেখানে যায়। এক পর্যায়ে জুয়েল ত্রিপুরা ভুক্তভোগী নারীর ভগ্নীপতি কিশোর চাকমাকে (৩৮) ফোন করে ১৫ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে ভুক্তভোগী নারীকে ছাড়িয়ে নিতে বলে। পরে বিকাল ৩:৩০ টার দিকে ১৫ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করে কিশোর চাকমার নিকট ভুক্তভোগী নারীকে ছেড়ে দেয়া হয়।