হিল ভয়েস, ১১ জুন ২০২৪, চট্টগ্রাম: নিম্ন আদালতে কল্পনা অপহরণ মামলা খারিজের প্রতিবাদে এবং ঘটনার অভিযুক্ত লেঃ ফেরদৌস, মোঃ সালেহ আহম্মেদ, মোঃ নুরুল হক এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আজ ১১ জুন ২০২৪ (মঙ্গলবার) বিকাল ৩:০০ ঘটিকায় চট্টগ্রাম নগরীর চেরাগী মোড়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ও চট্টগ্রাম মহানগর শাখা, পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরাম ও আদিবাসী মহিলা ফোরামের উদ্যোগে এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সভাপতি শ্রী তাপস হোড়, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান, পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জগৎ জ্যোতি চাকমা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি সুদীপ্ত চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য আবৃত্তি দেওয়ান, পিসিপি, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আদর্শ চাকমা প্রমুখ।
সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অন্তর চাকমার সভাপতিত্ব করেন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক অন্বেষ চাকমার সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি, চট্টগ্রাম পলিটেকনিক শাখার সভাপতি উকিং সাই মারমা।
শ্রী তাপস হোড় বলেন, আদিবাসী মানুষের মুক্তির জন্য কল্পনা চাকমারা মাঠে নেমেছেন। তার সংগ্রামী আদর্শকে ধারণ করে বর্তমান প্রজন্মকে এগিয়ে যেতে হবে। দীর্ঘ ২৮ বছরেও এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার করতে না পারা রাষ্ট্রের জন্য লজ্জাজনক। পাহাড়ের সমস্যাকে রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই সমাবেশ থেকে বলতে চাই ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে সমাধানের লক্ষ্যে যে চুক্তি করা হয় সেই চুক্তি অনতিবিলম্বে বাস্তবায়ন করবেন, না হয় পাহাড়ি জনগণ তাদের করণীয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে।
শরীফ চৌহান বলেন, ২৮ বছর ধরে কল্পনাকে খোঁজার জন্য পাহাড়ের মুক্তিকামী মানুষ লড়ে যাচ্ছে। তিনি শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামের নয় বাংলাদেশের সকল মুক্তিকামী অধিকারহারা মানুষের নেত্রী। রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক অপহরণের শিকার কল্পনা চাকমার দ্রুত বিচারের দাবি জানাই। শান্তিকামী আদিবাসীদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে এবং অনতিবিলম্বে সরকারকে পার্বত্য চুক্তি পাহাড়ি মানুষের মুক্তির সনদকে যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবি জানাই।
জগৎ জ্যোতি চাকমা বলেন, পাহাড়ের বীর কন্যা কল্পনা চাকমা। যার প্রতিবাদী কন্ঠে শাসকের ভিত প্রকম্পিত হয়। পাহাড়ের নারীদের কল্পনা চাকমার আদর্শিক চেতনায় জাগ্রত হয়ে মুক্তির আন্দোলনে এগিয়ে আসতে হবে। নিম্ন আদালত কর্তৃক ২৮ বছর পর এই মামলা খারিজের তীব্র নিন্দা জানাই। এভাবে দোষীরা নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াচ্ছে, রাষ্ট্র নির্লজ্জ। অবিলম্বে দোষীদের বিচারের আওতায় এনে শান্তির দাবি জানাই।
সুদীপ্ত চাকমা বলেন, কল্পনা চাকমার প্রতিবাদী কন্ঠস্বরকে শাসকগোষ্ঠী কখনও মুছে ফেলতে পারবে না। বর্তমান প্রজন্ম তার চেতনা, আদর্শকে লালন করে এগিয়ে যাবে। দীর্ঘ ২৮ বছরেও এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হওয়া প্রমাণ করে দেশের বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে কল্পনাকে অপহরণ করা হয়। কল্পনা চাকমার নাম, ইতিহাস আমরা ভুলে যেতে দিতে পারি না। আমরা সুষ্ঠু বিচার চাই।
আবৃত্তি দেওয়ান বলেন, কল্পনা চাকমা আমাদের নারীদের জন্য এক তেজময়ী বীর প্রতিবাদী কন্ঠ। তিনি পাহাড়ের মানুষের মুক্তির কথা বলেছেন, এই কি তার দোষ ছিল? তার প্রতিবাদী কন্ঠকে শাসকগোষ্ঠী ২৮ বছরেও মুছে দিতে পারেনি। আমরা তার আদর্শকে ধারণ করে এগিয়ে যাবো।
আদর্শ চাকমা বলেন, ২৮ বছরেও আমার বোন কল্পনার হদিস এই নির্লজ্জ রাষ্ট্র দিতে পারেনি। দোষীদের বিচার না করে রাষ্ট্র এই মামলাকে ধামাচাপা দিয়ে রাখতে চায়, যার কারণে নিম্ন আদালত কর্তৃক দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে চলমান এই মামলা খারিজ করা হয় যা অত্যন্ত নিন্দিত। অপারেশন উত্তরণের নামে সেনাশাসন জারি করে রাখা হয়েছে। ক্রমাগত সেনা দ্বারা পাহাড়ে নারীরা নিপীড়নের শিকার হচ্ছে।
সভাপতির বক্তব্যে অন্তর চাকমা বলেন, ২৮ বছরেও একটি অপহরণের বিচার না হওয়া রাষ্ট্রের জন্য লজ্জাজনক বিষয়। নিম্ন আদালত কর্তৃক এই মামলা খারিজের তীব্র নিন্দা জানাই। অবিলম্বে দোষীদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করতে হবে এবং ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
সমাবেশ শেষে চেরাগী মোড় থেকে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব প্রদক্ষিণ করে চেরাগী মোড় পর্যন্ত একটি বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
+ There are no comments
Add yours