হিল ভয়েস, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪: আজ ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং আদিবাসীদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণের দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, চবি সংসদের উদ্যোগে এক ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
ক্যাম্পাসের লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নরেশ চাকমা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, চবি সংসদের সভাপতি প্রত্যয় নাফাক, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চবি ২নং গেইট কমিটির সভাপতি সুমন চাকমা, ছাত্র ইউনিয়ন, চবি সংসদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক সোহেল রানা এবং সদস্য নয়ন কৃষ্ণ সাহা প্রমুখ।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক সুদীপ্ত চাকমার সঞ্চালনায় সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি চবি শাখার সদস্য অপূর্ব চাকমা, এবং সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পিসিপি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অন্তর চাকমা।
নরেশ চাকমা বলেন, রাষ্ট্র তার সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী চেতনা থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেনি। বহু জাতির সম-অধিকারের ভিত্তিতে এই রাষ্ট্র রূপ লাভ করতে পারেনি এখনও। এই স্বাধীনতা প্রকৃত অর্থে সকল জাতিসত্তার এবং সকল আদিবাসীদের মাতৃভাষার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে পারেনি। পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক যে আদিবাসী জাতিসমূহের প্রাথমিক পর্যায়ে মাতৃভাষার শিক্ষা প্রদান তা যথাযথভাবে হচ্ছে না, নেই কোনো শিক্ষক। সরকারকে তার জাতীয় স্বার্থে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে সকলকে সাথে নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা ও দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
প্রত্যয় নাফাক বলেন, ভাষার সাথে একটি জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক যে সম্পর্ক রয়েছে সে সম্পর্ককে এদেশের বুদ্ধিজীবী মহল অবহেলার চোখে দেখছে। আদিবাসী ভাষা যদি রাষ্ট্র কর্তৃক যথাযথভাবে সংরক্ষণের পদক্ষেপ নেয়া না হয় তাদের সাংস্কৃতিক অধিকার এবং জীবনচক্র ব্যাহত হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের উপর শাসকগোষ্ঠী তার রাষ্ট্র ব্যবস্থার অন্যতম কাঠামো সেনাবাহিনী দ্বারা শোষণ, ভূমি বেদখল, নিপীড়ন জারি রেখেছে। অধিকারের প্রশ্নে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
সুমন চাকমা বলেন, একটি ভাষা একটি জাতির পরিচয়, ভাষাবিহীন কোনো জাতির অস্তিত্ব ঠিকে থাকতে পারে না। পৃথিবীর ইতিহাসে বাংলার মানুষ প্রথম যারা মায়ের ভাষার জন্য জীবন বিলিয়ে দিয়েছিলো আজ সেই জায়গায় আমরা দেখতে পাই না আদিবাসীদের ভাষা সংরক্ষণে রাষ্ট্রীয় কোনো উদ্যোগ। প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগ করে স্ব ভাষায় পাঠদান এবং আদিবাসী ভাষা গবেষণা ইনস্টিটিউট চালু করার দাবি জানাই।
সোহেল রানা বলেন, স্বাধীনতার যে অসাম্প্রদায়িক ও সম-অধিকারের চেতনা সেই জায়গা থেকে আমরা অনেক দূরে সরে এসেছি। ভাষার শহীদরা এই চেতনায় তো রক্ত দেয় নাই। ভাষা দিবসে জোর দাবি জানাই প্রত্যেক আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর স্ব ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালু করার।
নয়ন কৃষ্ণ সাহা বলেন, যে জাতি ভাষার জন্য জীবন দিয়েছিলো সেখানে প্রদীপের নিচে অন্ধকারের মতো হয়ে আছে আদিবাসীদের মাতৃভাষা। এই রাষ্ট্র সকল ধর্ম, বর্ণের মানুষের সম-অধিকার এখনও প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। আজ স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এসে প্রশ্ন জাগে এই স্বাধীনতার জন্যই কি আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম? অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে সকল আদিবাসী জাতিসমূহের মাতৃভাষার স্বীকৃতি প্রদানের দাবি জানাই।”
স্বাগত বক্তব্যে অপূর্ব চাকমা বলেন, ১৯৫২ সালে পাকিস্তানি শাসকরা বাংলার মানুষের মায়ের ভাষা কেড়ে নিয়ে তাদের ভাষার অধিকারকে ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করেছিলো। ঠিক তেমনি আজ বর্তমান সময়ে আদিবাসীদের উপর ভাষাগত আগ্রাসন চালানো হচ্ছে। এই রাষ্ট্র যদি অসাম্প্রদায়িক ও বহু জাতীয় চেতনার দেশে বিশ্বাসী হতো আদিবাসীদের স্ব স্ব ভাষা সংরক্ষণের পদক্ষেপ গ্রহণ করে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান করতো।
সভাপতির বক্তব্যে অন্তর চাকমা বলেন, একটি জাতির অস্তিত্বের পরিচয় তার ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। বাংলাদেশ বহু জাতির রাষ্ট্র, সেই জায়গা থেকে সকল জাতিসমূহের ভাষার যথাযথ সম্মান ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদর্শন করা রাষ্ট্রের নাগরিক দায়িত্ব। ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী সকল আদিবাসী জাতিসমূহের যে স্ব-স্ব মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালু করার দাবি ছিল তা সরকার যথাযথভাবে পালন করছে না। সকল আদিবাসী জাতিসমূহের ভাষা সংরক্ষণে রাষ্ট্রের পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানাই।