হিল ভয়েস, ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, বিশেষ প্রতিবেদন: বম পার্টি খ্যাত কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)-এর একের পর এক হঠকারী ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড এবং কেএনএফ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মধ্যেকার যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার জেরে পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম আদিবাসী বম জনগোষ্ঠী আজ অত্যন্ত দুরবস্থার মধ্যে রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। শুরুতে সেনাবাহিনীর মদদে বম পার্টির সৃষ্টি হলেও, পরে অর্থ ও অস্ত্রের বিনিময়ে ইসলামী মৌলবাদী জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্যদের সাথে বম পার্টির সম্পর্ক এবং বম পার্টি কর্তৃক জঙ্গিদের সামরিক প্রশিক্ষণের প্রমাণ পাওয়া গেলে আন্তর্জাতিক চাপে বাধ্য হয়ে সেনাবাহিনী বম পার্টির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘাতের সৃষ্টি হয়। এতে বম পার্টি যেমন সাধারণ বমদের তাদেরকে নানাভাবে সহযোগিতা, চাঁদা প্রদান, গবাদি পশু, খাদ্যসামগ্রী দিতে বাধ্য করে ও নানাভাবে হয়রানি করতে শুরু করে, তেমনি অপরদিকে সেনাবাহিনীর নানা হয়রানি, নিপীড়ন ও ভয়ভীতির কারণে বম জনগোষ্ঠী আজ অনিশ্চিত জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে ২০২২ সালের শেষ দিকে শান্তিপ্রিয় ও সুশৃঙ্খল সামাজিক জীবনের অধিকারী বম জনগোষ্ঠীর অনেক গ্রামবাসী স্ব স্ব ঘরবাড়ি ও গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যেতে বাধ্য হতে থাকে। এতে প্রায় দুই হাজার বম নরনারী দেশ ছেড়ে প্রতিবেশী ভারতের মিজোরাম রাজ্যে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। অপরদিকে আরও কয়েক হাজার মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে উদ্বাস্ত হয়ে নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতদের কাছে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পার্বত্য চুক্তির সমর্থক বম জনগোষ্ঠীর এক অধিকার কর্মী বলেন, কেএনএফ বা কুকি-চিনদের সঠিক রাজনৈতিক চিন্তার অনুপস্থিতি ও অদূরদর্শী চিন্তা এবং ভুল পদক্ষেপের কারণে আজ বম জনগোষ্ঠী বিপদগ্রস্ত। যার ফলে আজকে সাধারণ বম জনগোষ্ঠীকে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে এবং আজ তারা অনেকটা নিরুপায় ও দুর্দশাগ্রস্ত। তারা কেএনএফ-এর কবল থেকে মুক্তি পেতে চায়।
তিনি আরও বলেন, একদিকে কেএনএফ-এর তান্ডব, অপরদিকে সেনাবাহিনী ও সরকারের প্রশাসনের সাথে একপর্যায়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টির কারণে এ পর্যন্ত ১৩টি (তের) বম গ্রাম আজ জনশূন্যে পরিণত হয়েছে। এছাড়া আরো ১৫টি গ্রাম নিভু নিভু অবস্থায় রয়েছে, যাদের মধ্যে ইতোমধ্যে তিনভাগের দুইভাগ মানুষ গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। কিছু সংখ্যক এখনও রয়ে গেছে মাত্র। পরিস্থিতি যদি আরও জটিল হয়ে যায় তাহলে ঐ ১৫টি গ্রামও হয়ত খালি হয়ে যাবে।
বম জনগোষ্ঠীর একাধিক সূত্র জানায়, বর্তমানে সাধারণ বম জনগণ যে অবস্থায় রয়েছে, বিশেষ করে মিজোরামে যারা আছে, লংত্লাই জেলায় যারা আছে, যারা শরণার্থী হিসেবে রয়েছে তারা যে ভালো অবস্থায় রয়েছে তা মোটেই নয়। তারাও কোনোমতে বা মানবেতর অবস্থায় জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। প্রথমদিকে যারা প্রথম শরণার্থী হিসেবে মিজোরামে যান তখন কেএনএফ-এর নেতারা বম শরণার্থীদেরকে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, শরণার্থীদেরকে প্রয়োজনীয় দলিলপত্র তৈরি করিয়ে দেওয়া হবে, বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হবে। বিনামূল্যে খাবার ও শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে এমন কথা বলা হয়েছিল।
কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, অনেকেই বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। বিগত কয়েক মাস আগেও চিকিৎসার অভাবে ফারবা-৩-এ ম্যালেরিয়া ও কলেরা অসুখে ৩-৪ জন মারা গেছে। তারপর মংবু ভিলেজ, বুংত্লাং ভিলেজ, ফাঠোয়ামপুই ভিলেজ ইত্যাদি যেসব এলাকাতে বম জনগোষ্ঠীর শরণার্থী আছে তারা ঠিকমত চিকিৎসা পাচ্ছে না। চিকিৎসা না পাওয়ার ফলে তারা এমনকি ম্যালেরিয়া হলেও মারা যাচ্ছে, ডায়রিয়া হলেও মারা যাচ্ছে। এ পর্যন্ত শরণার্থীদের মধ্যে শিশুসহ অন্তত ১৫/১৬ জন মারা গেছে।
সূত্রগুলো আরও জানায়, বর্তমানে বম জনগোষ্ঠীর এই শরণার্থীরা অত্যন্ত অমানবিক ও মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। প্রথমদিকে শরণার্থীদের পরিবার প্রতি ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হতো। বর্তমানে তাদেরকে সেই জায়গায় দেওয়া হচ্ছে মাত্র ৫ কেজি চাল। যেখানে ২০ কেজি চাল দিয়ে এক পরিবারের একমাস চলে না, সেখানে মাত্র ৫ কেজি চাল দেওয়া মানে সেখানে পরিবারগুলোর কী দুরবস্থা হতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়। নিজেরা যে উপার্জন বা উৎপাদনের জন্য কিছু করবে সেই বাস্তবতা ও সুযোগও নেই। কারণ শরণার্থীরা যে এলাকায় রয়েছে, সেগুলো এমনিতেই অত্যন্ত প্রত্যন্ত এলাকা বা দুর্গম। ফলে সেখানে কোনোখানে উপার্জনের জন্য মজুরি খাটবে এমন বাস্তবতাও নেই। এদিকে শরণার্থীদের ছেলেমেয়েরা শিক্ষা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। কোনো স্কুলেই এই ছেলেমেয়েরা ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পাচ্ছে না। কারণ তাদের বৈধ কোনো দলিল বা কাগজপত্র নেই।
জানা গেছে, ২০২২ সালের নভেম্বর থেকেই বম জনগোষ্ঠীর মানুষ শরণার্থী হিসেবে ভারতে প্রবেশ করতে শুরু করে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এই শরণার্থী আসার তারিখ নির্ধারণ করা হয় ডিসেম্বরের ১২ তারিখ। প্রথমদিকে মিজোরামের কর্তৃপক্ষ শরণার্থীদের কয়েক দফা পুশব্যাক করে। পরে ওয়াইএমএ (ইয়ং মিজো এসোসিয়েশন) এর দাবির প্রেক্ষিতে শরণার্থীদের গ্রহণ করা হয়। বর্তমানে কাগজে কলমে শরণার্থীর সংখ্যা ১২০০ এর মত, কিন্তু এর বাইরেও ৭-৮ শ শরণার্থী রয়েছে। তাই বর্তমানে এই শরণার্থীর সংখ্যা প্রায় ২০০০ জন।
অপরদিকে বান্দরবানে থাকা বম জনগোষ্ঠীর একাধিক সূত্র জানায়, দেশে বম জনগোষ্ঠীর যারা রয়েছে তাদের অবস্থা শরণার্থীদের মত না হলেও বর্তমানে তাদের অবস্থাও অত্যন্ত করুণ, অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়ে তাদের অনেকের অবস্থাও শরণার্থীদের মত হয়েছে। তাদের যারা মিজোরামে যেতে চায় না, বা যেতে পারে নাই, তারা হয়তো পুশব্যাক হয়ে বা নানা বাস্তবতার কারণে বান্দরবান সদরের কাছাকাছি যেসকল বম পাড়া রয়েছে সেখানে আশ্রয় নিয়েছে বা মিজোরাম সীমান্তে রয়েছে তাদের অবস্থাও শরণার্থীদের থেকে কোনো অংশে ভালো নয়।
বান্দরবান সদরের আশেপাশে আট থেকে নয়টি বম পাড়া রয়েছে, সেখানে অনেকে আত্মীয়-স্বজনের ঘরে বা পরিচিত কারো ঘরের আশ্রয়ে রয়েছে। রুমা সদরের আশেপাশে যে বমপাড়া রয়েছে, সেখানেও অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে এবং রোয়াংছড়ি সদরের আশেপাশের বম পাড়াগুলোতে কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছে।
সূত্রগুলো জানায়, পরিস্থিতির অবনতি হলে আরও যে গ্রামগুলো শূন্য হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে, সেগুলো হলো- মুননোয়াম পাড়া, যে পাড়ার তিন ভাগের প্রায় দুই ভাগ ইতোমধ্যে অন্যত্র চলে গেছে। তারপর আর্থা পাড়া, বাসত্লাং পাড়া, হেপিহিল বা পুনর্বাসন পাড়া, রোনিন পাড়া বা ফিয়াংপুদুং পাড়া, মুয়ালপি পাড়া, সুনসং পাড়া, রুমনা পাড়া, দার্জিলিং পাড়া, থাইখিয়াং পাড়া, রোয়াংছড়ির দুর্নিবার পাড়া, পানখিয়াং পাড়া, গিলগাল বা অবিচলিত পাড়া, জুরফরং পাড়া, রামথার পাড়া- এই ১৫ টি গ্রাামের অবশিষ্ট জনগণও অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে।
অপরদিকে, যে গ্রামগুলো জনশূন্য হয়েছে, সেগুলো হলো- প্রথমে সাইজাম পাড়া, এরপর সিপ্পি পাড়া, এই দুই গ্রাম বান্দরবানের সীমান্তবর্তী রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নে অবস্থিত। সেনাবাহিনীর কম্বিং অপারেশনের ফলে এই দুটি গ্রাম জনশূন্য হয়ে যায়। এদের অনেকেই রোয়াংছড়ি পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে, অনেকেই মিজোরামে চলে গেছে। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর সামরিক অভিযানের কারণে ১২০ পরিবার অধ্যুষিত পানখিয়াং পাড়াটাও জনশূন্য হয়। এরপর আর্থা পাড়া ও মুননোয়াম পাড়ার মাঝখানে বাসত্লাং পাড়া নামে যে গ্রামটি রয়েছে, সেটাও এখন জনশূন্য। অপরদিকে থানচিতে যেখানে সীমান্ত সড়ক করা হয়েছে, সেখানে প্রথমত বাকত্লাই পাড়া এবং পারাতা পাড়া, এরপর তাজিংডং পাড়ার পাশে শিমত্লাংপি পাড়া, তারপর তিন সীমানা এলাকা সংলগ্ন পাইনোয়াম পাড়া, লুংমোয়াল পাড়া, এরপর একেবারে তিন সিমানা বা মিজোরাম সীমান্তবর্তী থিংদলতে পাড়া, সিলৌপি পাড়া, চাইখিয়াং পাড়া, নিউ রুমনা পাড়া- এই সমস্ত গ্রামগুলো বর্তমানে সম্পূর্ণ জনশূন্য।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বম সম্প্রদায়ের একজন মুরুব্বি জানান, এসমস্ত গ্রামবাসীর অনেক ছেলেমেয়ে দেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম এলাকায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে। উদ্ভুত পরিস্থিতি এবং আর্থিক দুরবস্থার কারণে সেসব ছেলেমেয়েদের লেখাপড়াও বর্তমানে বন্ধ হয়েছে। ফলে বম সম্প্রদায়ের যে তরুণ, শিশু রয়েছে সেই তরুণ বা নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যত এখন অন্ধকার হয়ে গেছে। এভাবে একটা প্রজন্ম যদি শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় তাহলে গোটা বম জাতির জন্য ক্ষতিকর।
তিনি বলেন, বস্তুত কেএনএফ সৃষ্টি না হওয়ার আগে, বম জনগোষ্ঠী মোটামুটি একটা সুশৃঙ্খল অবস্থায় ছিলো, অর্থনৈতিক দিক দিয়েও নিজেদের উৎপাদন দিয়ে একটা বাঁচার ভিত্তি ছিলো। বম জনগোষ্ঠীর প্রায় সবাই ফলমূলের বাগান চাষ করে থাকে, এতে তাদের উপার্জনও ভালো এবং তা দিয়ে পরিবারের ভরন-পোষণ পূরণ করা সম্ভব হয়। ফলমূল বাগানের পাশাপাশি তারা জুম, আদা-হলুদের চাষও করে থাকে। এছাড়া প্রায় পরিবারের নারীরা নিজেদের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন কাপড়-চোপড় বুনে ও বিপনন করেও আয়-উপার্জন করে থাকে। বম সমাজে সরকারি বা বেসরকারি চাকরিজীবী অত্যন্ত কম।
তিনি আরও বলেন, উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে ইতোপূর্বে বম সমাজের মধ্যে যে একটা সামাজিক সংহতি ছিলো সেটা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বম সমাজের মধ্যে মুরুব্বিদের নিয়ে যে বম সোস্যাল কাউন্সিল (বিএসসিবি), যুবদের নিয়ে যে ইয়াং বম এসোসিয়েশন (ওয়াইবিএ), ছাত্রদের নিয়ে যে বম স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন (বিএসএ) এবং মহিলাদের জন্য যে বম মহিলা দল (বিএনএম), এগুলির যে একটা সুশৃঙ্খল কাঠামো ছিল এবং সামাজিক একটা প্রভাব ছিল, কেএনএফের কারণে আজকে সেগুলো প্রায় ভেঙে গেছে বা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। কেএনএফ কর্তৃক বিভিন্ন গ্রামে ডিভিশন কমিটি করা হয়েছে, এখন সামাজিক কোনো সমস্যা বা বিষয় নিয়ে মীমাংসা করতে গেলেও কেএনএফরা হস্তক্ষেপ করে থাকে। ফলে সামাজিক যে একটা ব্যবস্থা ও সংহতি ছিল সেটা আজ মুখ থুবরে পড়ছে। এই অবস্থায় বম সোস্যাল কাউন্সিলও উদ্যোগ নিয়ে কোনো কাজ করতে পারছে না। ফলে এক ধরনের সামাজিক বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে।
ওই বম মুরুব্বি আরও বলেন, এই অবস্থায় সেনাবাহিনীও বিশেষ করে রুমা উপজেলায় বমদের কাছ থেকে কৃষিপণ্য ক্রয় না করার জন্য বিভিন্ন বাঙালি ও পাহাড়ি ব্যবসায়ীদেরকে চাপ দিচ্ছে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। যেমন, সম্প্রতি একাধিকবার বম বাগানচাষীরা বাজারে কলা বিক্রি করতে নিয়ে গেছে, কিন্তু তাদের কাছ থেকে কেউ কিনেনি, এমনকি দরাদরি করতেও আসেনি। অর্থনৈতিকভাবে বমদের পঙ্গু করার জন্য সেনাবাহিনী এটা করেছে। সাধারণ বমরা কেএনএফকে সহযোগিতা করে- এমন অজুহাত তুলে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করার জন্য সেনাবাহিনী এটা করছে। তাদের ধারণা নাকি এই যে, সাধারণ বমদের অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করলে কেএনএফরা বেকায়দায় পড়বে। এতে হয়ত তারা সেনাবাহিনীর শরণাপন্ন হতে বাধ্য হবে।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, মুনলাই পাড়া, লাইরুনপি পাড়া, ইডেন পাড়া, ইডেন রোড পাড়া, জাইঅন পাড়া, হিপ্পি হিল পাড়া, আর্থা পাড়া, মুননোয়াম পাড়া, বাসত্লাং পাড়া ও বেথেল পাড়া- ইত্যাদি বম গ্রাম যেগুলো রুমা সদর এলাকার কাছাকাছি রয়েছে, যারা মূলত বাগানের উপর নির্ভরশীল, তাদের কৃষিপণ্য, উৎপাদিত যে ফলমূল, সেগুলো তারা বাজারজাত করতে পারছে না। গতবারের আমের মৌসুমেও অনেক ব্যবসায়ী বমদের কাছ থেকে আম কিনতে এলে, বাগান থেকে আম ছেঁড়ার পরও তারা ঐ আমগুলো নিয়ে যেতে পারে নাই সেনাবাহিনীর নিষেধের কারণে। এতে বম গ্রামবাসীরা ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এই অবস্থায় বমদের কাছ থেকে কোনো কৃষিপণ্য কিনে নিয়ে যেতেও ভয় পাচ্ছে ব্যবসায়ী বা ফলের ব্যাপারীরা। ফলে শুধু রুমা এলাকায় নয়, অন্যান্য বম বাগানচাষীদের কাছ থেকেও কিনতে ভয় পাচ্ছে বা বিরত রয়েছে ব্যবসায়ীরা। বান্দরবান সদর, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় যেখানে বম রয়েছে, তাদের এলাকায়ও এর প্রভাব পড়েছে এবং তারাও নিজেদের পণ্য বিক্রিতে ব্যাপক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। অপরদিকে, পরিস্থিতির কারণে পর্যটকের আগমন অনেক কমে যাওয়ার ফলে বমদের হস্তশিল্প বা ঐতিহ্যবাহী কাপড়-চোপরের ব্যবসার ক্ষেত্রেও অত্যন্ত মন্দাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু হওয়ার পর প্রশাসনের কাছ থেকে কয়েকদিন কিছু সহযোগিতা বা ত্রাণ দেওয়া হলেও তৎপরবর্তীতে আর কারো কাছ থেকে তারা সহযোগিতা পায়নি বলে জানা যায়।
বম সম্প্রদায়ের সাবেক এক ছাত্রনেতা বলেন, বস্তুত বম সমাজের যারা শিক্ষিত ও সচেতন সমাজ রয়েছে তারা কেউই কেএনএফকে সমর্থন করে না শুধু নয়, তারা ঘোর বিরোধী। তারা কোথাও প্রকাশ্যে নিজেদের মতামত প্রকাশ না করলেও তারা কেএনএফের কর্মকান্ডের সমর্থন করেন না। যারা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বা অনুষ্ঠানাদির দায়িত্বে রয়েছেন বা ধর্মীয় গুরু রয়েছেন তারাও কেএনএফের কর্মকান্ডকে সমর্থন করতে পারেন না। ২০২২ সালের জুন বা জুলাই মাসে কেএনএফ’রা এক ধর্মীয় গুরু পালক বা পাস্তুরকে মারধর করে আহত করে। ওই পাস্তুরকে চিকিৎসাও নিতে হয়েছিল। এছাড়াও কুকি-চিনরা বিভিন্ন অভিযোগ এনে বিভিন্ন বম গ্রামের কার্বারিদেরকে শারীরিক নির্যাতন করে যাদের অনেককেই দীর্ঘ চিকিৎসা নিতে হয়েছে। এমন অবস্থায় চলতে থাকলে বম জনগণ ধ্বংস হয়ে যাবে।