হিল ভয়েস, ২৬ জানুয়ারি ২০২৪, রাঙ্গামাটি: সম্প্রতি নতুন করে রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মদদপুষ্ট মগ পার্টি খ্যাত মারমা ন্যাশনালিস্ট পার্টির (এমএনপি) সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বৃদ্ধি, প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন ও হুমকি প্রদানের খবর পাওয়া গেছে। এই মগ পার্টির সন্ত্রাসীদের একাধিক ফেসবুক পেইজ থেকে প্রচারিত ভিডিওর মাধ্যমে প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করে হুমকি প্রদান করতে দেখা গেছে।
সেনাবাহিনীর নাকের ডগায় এভাবে অস্ত্র প্রদর্শন ও হুমকি প্রদানের ফলে স্থানীয় জনগণের মধ্যে যেমন ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি বিভিন্ন নাগরিক সমাজকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করতেও দেখা গেছে।
স্থানীয়দের মতে, সেনা ক্যাম্পের পাশে অবস্থান করেই মগ পার্টির সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে এসব কর্মকান্ড চালাচ্ছে। সেনাবাহিনী দেখেও না দেখার ভান করছে।
গতকাল (২৫ জানুয়ারি) মং শৈ মারমা ( Mong Swe Marma) নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে প্রচারিত এক ভিডিও ক্লিপে মগ পার্টির এক সশস্ত্র সদস্য কর্তৃক প্রকাশ্যে জেএসএস’কে (জনসংহতি সমিতি) উদ্দেশ্য করে যুদ্ধ করার হুমকি দিতে দেখা গেছে। এর আগে একই আইডি থেকে একই ব্যক্তি কর্তৃক অস্ত্র উচিয়ে আকাশের দিকে গুলি ছুঁড়তে দেখা গেছে।
একই দিন ‘এমএনপি কমান্ডো মংথেন’ নামের এক আইডি থেকে নিজেকে ‘এমএনপি গেরিলা যোদ্ধা’ দাবি করে এক সন্ত্রাসী কর্তৃক জনবসতিপূর্ণ এক খোলা মাঠে দাঁড়িয়ে অস্ত্র উঁচিয়ে ধরা অবস্থায় ছবি পোস্ট করতে দেখা যায়।
গত ১৪ ও ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখও উক্ত আইডি থেকে অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র, পিস্তল ও গুলি প্রদর্শন করতে দেখা গেছে।
আজ (২৬ জানুয়ারি) চয়ন চাকমা (Chayan Chakma) নামে এক ব্যক্তি মগ পার্টি সন্ত্রাসীদের তৎপরতা সম্পর্কে তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনীর চোখে ছানি পড়েছে। প্রকাশ্যে মগ পার্টির সন্ত্রাসীরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, বন্দুক নিয়ে নাচানাচি করছে, ছোট ছোট বাচ্চাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছে, জাতিগত বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে, অস্ত্রসহ টহল দিচ্ছে। সেনাবাহিনীর চোখের সামনে এসব হচ্ছে তারপরও তারা দেখে না কেন?’
অপরদিকে একই দিন উমং সিং মারমা ( Umong Sing Marma) নামে এক ব্যক্তি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘একদল উচ্ছৃঙ্খল মারমা যুবক অনলাইনে এসে প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে, অন্য কাউকে হুমকি দিচ্ছে অথচ ওখানকার সেনাবাহিনী কিংবা প্রশাসন একদম চুপ। এদের যেন কেউ দেখে না। প্রতিদিন লাইভে এসে ঘৃণার বিষবাষ্প ছড়ানোই এদের প্রধান কাজ।’
তিনি আরও লেখেন, ‘আমাদের ঐক্যে ফাটল ধরানোর জন্য শাসকগোষ্ঠী ও সেনাবাহিনী তৎপর। আদিবাসী জুম্মদের ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে মরিচা ধরানোর জন্য সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে কিছু উচ্ছৃঙ্খল, অশিক্ষিত তরুণের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে তাদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। তার প্রকৃত উদাহরণ মগ পার্টি বা এমএনপি, বম পার্টি (কেএনএফ)। তিনি লেখেন, ‘মারমা তরুণদের এই মগ পার্টি থেকে সাবধান থাকা দরকার। একজন মারমা শিক্ষার্থী হিসেবে আমিও চাই পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধান হোক। তার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এসব উচ্ছৃঙ্খল সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে প্রতিহত করতে হবে।’
জানা গেছে, বাঙ্গালহালিয়া বাজারের পেছনে সেনা ক্যাম্পের পাশে অবস্থিত মগ পার্টি সন্ত্রাসীদের একটি আস্তানা থেকেই এসব অস্ত্র প্রদর্শন, গুলিবর্ষণ ও হুমকি প্রদানের ভিডিও ও স্থিরচিত্র ধারণ করে প্রচার করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজস্থলীর অধিবাসী এক অধিকারকর্মী জানান, বর্তমানে রাজস্থলী উপজেলায় মগ পার্টি সন্ত্রাসীরা দুটি দলে দুটি আস্তানায় অবস্থান করে সেখান থেকে যাবতীয় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাচ্ছে। এর একটি আস্তানা অবস্থিত বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের বাঙ্গালহালিয়া বাজারের পেছনে নাইক্যছড়া সড়কের পাশে জনৈক তঞ্চঙ্গ্যা গ্রামবাসীর সেমিপাকা বাড়িতে। ঐ বাড়িটি তারা ইতিপূর্বে বাড়ির মালিকের কাছ থেকে জোর করে দখল করে এবং বাড়ির মালিককে বাড়িছাড়া করে। সন্ত্রাসীদের এই আস্তানাটি বাঙ্গালহালিয়া বাজার সেনা ক্যাম্পের মাত্র ২ শত গজের মধ্যে অবস্থিত।
মগ পার্টির অপর আস্তানাটি গাইন্দ্যা ইউনিয়নের পোয়াইতু পাড়ায় অবস্থিত বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য যে, গত ১১ জানুয়ারি ২০২৪ মগ পার্টি সন্ত্রাসীদের একটি দল রাজস্থলীর পার্শ্ববর্তী কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়ন থেকে বিমল তঞ্চঙ্গ্যা (৪২), পীং-চিত্ত রঞ্জন তঞ্চঙ্গ্যা নামে এক নিরীহ জুম্ম গ্রামবাসীকে মুখে গামছা বেঁধে দিয়ে অপহরণ করে। বিমল তঞ্চঙ্গ্যার বাড়ি রাইখালী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ভালুকিয়া গ্রামে। বিমল তঞ্চঙ্গ্যা একজন নিরীহ সাধারণ দিনমজুর ও কৃষক বলে জানা গেছে।
এর আগে ১৪ নভেম্বর ২০২৩ এই মগপার্টি সন্ত্রাসীরা রাইখালী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ভালুকিয়া নিচের পাড়া গ্রাম থেকে কোনো কারণ ছাড়াই প্রকাশ্যে মনা তঞ্চঙ্গ্যা (২৮), পীং- মৃত নির্মল তঞ্চঙ্গ্যা নামে এক ব্যক্তিকে ধরে বেদম মারধর করে এবং মোবাইল কেড়ে নিয়ে যায়। মনা তঞ্চঙ্গ্যা চট্টগ্রাম শহরে ওয়াপডা (বিদ্যুৎ বিভাগে) কর্মরত।