হিল ভয়েস, ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, রাঙ্গামাটি: আজ ১৭ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন কার্যকর করার দাবিসহ জুরাছড়িতে সেটেলার বাঙালি কর্তৃক জুম্ম’র ভূমি বেদখলের চেষ্টা ও সেনাবাহিনী কর্তৃক প্রতিবাদকারীদের মারধরের প্রতিবাদে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ শাখার উদ্যোগে বিক্ষোভ মিশিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সমাবেশের আগে এক দুই তিন চার, সেনাবাহিনী পাহাড় ছাড়; সেটেলার দখল করে, প্রশাসন কি করে? সেনাবাহিনী মানুষ মারে, প্রশাসন কি করে? দখলদার যেখানে, লড়াই হবে সেখানে; আপোষ না সংগ্রাম? সংগ্রাম সংগ্রাম ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে ক্যাম্পাসের বটতলায় এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিবাদ সমাবেশে পিসিপির রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক সজল চাকমার সঞ্চালনায় ও সুনীতি বিকাশ চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সাধারণ শিক্ষার্থী ও পিসিপি, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ।
স্বাগত বক্তব্যে হিল উইমেন্স ফেডারেশন, রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ শাখার সভাপতি সোনারিতা চাকমা বলেন, নতুন বছর শুরু হতে না হতেই জুম্মদের ওপর বিভিন্ন অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন দেখা যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে জুম্মদের নিরাপত্তা কোথাও থাকবে না। জুম্মরা আওয়ামী লীগ—বিএনপি করেও রেহাই পাচ্ছে না। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই ধরনের অবস্থা বিরাজমান থাকবে।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে মেরিন বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, সেনাবাহিনীর সহায়তায় সেটেলার বাঙালিরা জুম্মদের জায়গা বেদখলের প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালাচ্ছে। বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক দেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের জুম্মদের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত বৈষম্য ও সাম্প্রদায়িক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। শাসক গোষ্ঠী উন্নয়নের নামে পাহাড়ের জুম্মদের বিলীন হওয়ার নীল নকশা তৈরি করছে। অস্তিত্ব রক্ষার্থে তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
পিসিপির রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ শাখার সহ-সভাপতি রাসেল চাকমা বলেন, জুম্মরা প্রতিনিয়ত সেনাবাহিনীদের দ্বারা লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে সরকার এগিয়ে আসছে না। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের জুম্মদের এই শোষণ, নির্যাতন, লাঞ্ছনার শিকার হতে হবে।
সংহতি বক্তব্যে হিল উইমেন্স ফেডারেশন, রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক চারুলতা তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, আমাদের বোঝা উচিত আমাদের জুম্মদের উপর বিভিন্নভাবে অত্যাচার, নিপীড়ন, শোষণ, নির্যাতন চালানো হচ্ছে। তিনি শাসকগোষ্ঠীর উদ্দেশ্যে বলেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই জুম্ম জনগণ বসে থাকবে না। তিনি ছাত্র ও যুব সমাজের প্রতি জুম্মদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।
পিসিপি রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সভাপতি জিকো চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল অস্থায়ী সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার করতে হবে, কিন্তু বর্তমান শাসকগোষ্ঠী তা করছে না। যা পার্বত্য চুক্তির লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে এক ধরনের সেনা শাসন জারি রয়েছে, এই সেনা শাসন যদি দীর্ঘ সময় ধরে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে চলমান থাকে তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জুম্ম জনগণের বুকে ৭০ দশকের ন্যায় দাবানলের সৃষ্টি হবে।
তিনি বলেন, শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে যে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তা আমাদের জুম্মদের অস্তিত্ব বিলীন করার নীল নকশা। পার্বত্য চট্টগ্রামে ৫০০ শতাধিক সেনা ক্যাম্প স্থাপনা রয়েছে। চুক্তি মোতাবেক সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করার কথা, কিন্ত চুক্তির ২৬ বছরে মাত্র ১০১টি সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হলেও সেই প্রত্যাহারকৃত সেনা ক্যাম্পগুলিতে সরকার এপিবিএন ক্যাম্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত সরাসরি পার্বত্য চুক্তি লঙ্ঘন। একদিকে উন্নয়নের নামে ভূমি বেদখল, অন্যদিকে সেটেলার কর্তৃক জুম্মদের ভূমি বেদখলের নজির পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত চলমান রয়েছে। তিনি ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান এবং ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন কার্যকর করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।
সভাপতির বক্তব্যে সুনীতি বিকাশ চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বাস্তবতা শুধু জুরাছড়ির ১৩ই জানুয়ারির ঘটনা না, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রতিটি জায়গায় এরকম ঘটনা ঘটেই থাকে। আমরা আশা করেছিলাম ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে স্বাধীন, স্বার্বভৌম রাষ্ট্র পেয়েছি সেই স্বাধীন স্বার্বভৌম রাষ্ট্রে আমরা স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকতে পারবো। শাসকগোষ্ঠীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, জুম্ম জনগণ সংখ্যায় কম হতে পারে কিন্তু জ্ঞান-গড়িমায় এই জুম্ম জনগণ ৭০ দশকের ন্যায় প্রতিরোধের ঝড় তুলবে।