হিল ভয়েস, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বান্দরবান: প্রতি পরিবার থেকে ৫০০ টাকা করে চাঁদা আদায়ের জন্য বান্দরবানের রুমার কয়েকটি মারমা পাড়ায় বম পার্টি খ্যাত কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সন্ত্রাসীরা চড়াও হয়েছে৷ তবে গ্রামবাসীদের প্রতিরোধের মুখে দুইটি ফাঁকা গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায় কেএনএফ সন্ত্রাসীরা৷
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে যে, বিগত ২/৩ দিন ধরে কেএনএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা রুমা উপজেলার পাইন্দু ও সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে হুমকি দিয়ে পরিবার পিছু ৫০০ টাকা করে চাঁদা দাবি করে আসছে৷ কিন্তু হুমকি উপেক্ষা করে গ্রামবাসীরা চাঁদা প্রদানে বিরত রয়েছে৷
তার প্রেক্ষিতে এসবিবিএল বন্দুকসহ ৬ জনের একদল কেএনএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসী রাগান্বিত হয়ে গতকাল বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাত ৭:৩০ ঘটিকায় দুইটি মারমা পাড়ায় চড়াও হয়৷ তারা প্রথমে ১নং পাইন্দু ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের নিয়াংক্ষ্যং পাড়ায় ঢুকতে চেষ্টা করে৷ কিন্তু গ্রামবাসীর প্রতিরোধের মুখে নিয়াংক্ষ্যং গ্রামে ঢুকতে সাহস করেনি বম পার্টির সন্ত্রাসীরা।
এরপর কেএনএফ সন্ত্রাসী ৩নং ওয়ার্ডের পলিতং পাড়ায় হানা দেয়৷ সেখানে গ্রামবাসীদের কাছ থেকে দুই দিনের মধ্যে ২০,০০০ টাকা চাঁদা দাবি করে৷ টাকা নিতে দুই দিন পর তারা আবার পলিতং পাড়ায় আসবে বলে হুমকি দিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা৷
তারপর কেএনএফ সন্ত্রাসী রাত ৮টার দিকে চাইয়াগ্র পাড়ায় চড়াও হয়৷ পাড়ায় ঢুকে গ্রামবাসীদের গালিগালাস ও হুমকি দিয়ে হুংকার দিতে থাকে৷ এ সময় ৪০/৫০ জন গ্রামবাসীরা বাড়ি থেকে বের হয়ে চারদিকে সন্ত্রাসীদের ঘিরে ধরে৷
এতে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা ভয় পেয়ে যায়৷ একপর্যায়ে গ্রামবাসীদের ভয় দেখানোর জন্য সন্ত্রাসীরা দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে৷ এরপর দ্রুত গ্রাম ছেড়ে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়৷ যাওয়ার সময় বিনামূল্যে গ্রামবাসীদের কাছ থেকে দুইটি হাঁস জোর করে ছিনিয়ে নেয়৷
এর ঘন্টা খানেক পরে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা চাইয়াগ্র পাড়ার কার্বারীকে ফোন করে বলে যে, “তোমরা তো আমাদেরকে আক্রমণ করতে চেয়েছিলে৷ তোমাদের এত সাহস কেন?” হুমকি দিয়ে সন্ত্রাসীরা কার্বারীকে আরো বলে যে, “আগামী কাল বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) আমরা আবার আসবো৷ প্রত্যেক পরিবার থেকে ৫০০ টাকা করে তুলে রাখো৷ না হলে চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে৷”
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কেএনএফ সন্ত্রাসীরা চাইয়াগ্র পাড়ায় আবার চড়াও হয়েছে কিনা নিশ্চিত করে জানা যায়নি ৷ তবে এ নিয়ে এলাকায় চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে৷ অন্যদিকে সেনাবাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানালেও তাদের পক্ষ থেকে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না৷
জানা গেছে যে, বর্তমানে রুমা ও রোয়াংছড়ি এলাকায় কেএনএফ সর্ত্রাসীদের তিনটি গ্রুপ অবস্থান করে৷ তারা এলাকায় ঘুরাফিরা করে থাকে৷ কেএনএফ ও সেনাবাহিনীর উৎপীড়নে রুমা ও রোয়াংছড়ির বম পাড়া থেকে গ্রামবাসীরা উচ্ছেদ হয়ে পড়ায় গ্রামবাসীরা এ বছর জুম চাষও করতে পারেনি৷
ফলে বর্তমানে প্রত্যন্ত অঞ্চলে খাদ্য সংকট চলছে৷ কেএনএফ সন্ত্রাসীদের মধ্যেও চরম খাদ্য সংকট চলছে৷ এর ফলে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা মারমা পাড়াগুলোর উপর চড়াও হচ্ছে৷
এক সময় মিয়ানমার বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান লিবারেশন পার্টি (এএলপি)-এর দলছুট কতিপয় সদস্য বান্দরবানে ৫০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করতো বলে ‘৫০০ টাকার পার্টি’ বলে অভিহিত করা হতো৷ আজকে বমপার্টি খ্যাত কেএনএফ সন্ত্রাসীরাও ‘৫০০ টাকার পার্টি’তে রূপান্তরিত হচ্ছে বলে অনেকে অভিমত প্রকাশ করেছে৷