হিল ভয়েস, ১৮ আগস্ট ২০২৩, বিশেষ প্রতিবেদক: আদিবাসী নেতা আলফ্রেড সরেন হত্যার ২৩ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও বিচার পায়নি ভুক্তভোগী পরিবার। ২০০০ সালের আগষ্ট মাসের এই দিনে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর আদিবাসী গ্রামে ভূমিদস্যুদের হামলায় নিহত হন আলফ্রেড সরেন। দীর্ঘ দিনে বিচার না পাওয়ায় হতাশ তার পরিবার ও আদিবাসী নেতৃবৃন্দ।
২০০০ সালে আলফ্রেড সরেন হত্যার ঘটনায় তার বোন বাদী হয়ে রেবেকা সরেন মহাদেবপুর থানায় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ৪২০/২০০০, তাং-১৮/০৮/২০০০। এই মামলাটি তদন্ত চলাকালীন সময়ে আলফ্রেড সরেনের বড় ভাই জননিরাপত্তা আইনে আরেকটি মামলা দায়ের করেন।
পরবর্তীতে দুটি মামলা এক সঙ্গে তদন্ত করে একটি অভিযোগপত্র দেয়া হয়। চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০১ সালে জননিরাপত্তা আইন বাতিল করলে আসামিরা হাইকোর্টে মামলাগুলো খারিজের আবেদন করেন। হাইকোর্ট তখন জননিরাপত্তা আইনে করা মামলাটি খারিজ করে দেন। ফলে আসামীরা জামিনে বেরিয়ে আসেন।
ওই খারিজের বিরুদ্ধে বাদীপক্ষ আপিল বিভাগে পিটিশন দাখিল করেন। খারিজের আবেদন বাতিল করে আপিল বিভাগ মামলাটি আবার হাইকোর্ট বিভাগে পুনঃশুনানির জন্য পাঠান। বর্তমানে মামলাটি হাইকোর্টে ২৩ বছর ধরে শুনানির অপেক্ষায় ঝুলে আছে।
জানা গেছে, আলফ্রেড সরেন হত্যার এই বিচার কবে শেষ হবে বা বিচার কার্য আসলেই চলবে কি না তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন তার পরিবার এবং আদিবাসী নেতারা।
আসামীরা জামিনে বের হয়ে বাদীপক্ষ ও আদিবাসী গ্রামের লোকজনকে বিভিন্ন হুমকি প্রদান করে চলেছে এবং ভয়ে অনেক পরিবার গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য যে, ১৮ আগস্ট ২০০০ তারিখে আদিবাসীরা ভূমি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশের সকল কাজ শেষ করে আলফ্রেড সরেন খাবার খাওয়ার জন্য বাড়িতে গেলে ভূমিদস্যু সন্ত্রাসীরা তার পিছু নেয়। তিনি তা আঁচ করতে পেরে অন্য একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। আলফ্রেড সরেন যে বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন সেই বাড়িতে সন্ত্রাসীরা আগুন ধরিয়ে দেয় এবং বাড়ির বাইরে আসতে বাধা প্রদান করে। এক পর্যায়ে বেরিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। অপরাপর আদিবাসী নারী শিশুদেরও হামলা করা হয়। এ ঘটনায় ৩০ জনের অধিক আহত হয়।
এই খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে আদিবাসী জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। সরেন হত্যার ঘটনায় যে পরিমাণে প্রতিবাদ হয়েছিল কিন্তু বিচারকার্য সেভাবে আগায়নি। কল্পনা চাকমার অপহরণের বিচার যেভাবে ঝুলে রয়েছে একইভাবে আলফ্রেড সরেন হত্যার বিচার ঝুলে থাকায় এদেশের সরকার, প্রশাসন ও বিচার বিভাগ নিয়ে আদিবাসী জনগণের মধ্যে হতাশা আর সংশয়ের সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানা গেছে।