হিল ভয়েস, ২ জুলাই ২০২৩, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে ‘মনাই ত্রিপুরা’ পল্লী। সেই ত্রিপুরা পাড়ায় ‘আমার জেলা আমার শহর’ মডেল উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে জেলা পর্যায়ে সাধারণ (প্রাতিষ্ঠানিক) ক্যাটাগরিতে ‘জনপ্রশাসন পদক ২০২০’ পেয়েছিলো হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কার্যালয়। আজ সেই ত্রিপুরা পল্লীতে শিক্ষার আলো জ্বালানো একমাত্র প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়টি গত চার মাস বন্ধ থাকলেও বিষয়টি জানা নেই বলে দাবি পুরস্কারের কৃতিত্ব নেওয়া উপজেলা প্রশাসনের।
দুর্গম এলাকাটিতে বিদ্যালয় না থাকায় শিশুরা ছিল শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। উপজেলা প্রশাসনের চেষ্টায় ২০১৮ সালে ‘আমার জেলা আমার শহর’ প্রকল্পের আওতায় প্রতিষ্ঠা করা হয় এলাকার প্রথম ও একমাত্র বিদ্যালয়টি। মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় নিয়োগ দেওয়া হয় শিক্ষক। অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনা নিয়মিত রাখতে শিক্ষার্থীদের জন্য চালু করা হয় ‘শিক্ষা বৃত্তি’। শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে ইউনিফর্ম প্রদান সহ যাবতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার উদ্যোগ নেয় তৎকালীন উপজেলা প্রশাসন।
কিন্তু গত দেড় বছর ধরে বেতন পাচ্ছিলেন না স্কুলশিক্ষিকা বিরণ বালা। ফলে চলতি বছরের শুরুতে তিনি বিদ্যালয় থেকে পদত্যাগ করেন। যার কারণে গত চারমাস ধরে স্কুলটির শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এ নিয়ে উপজেলা প্রশাসন ও মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমে জড়িত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও স্কুলটি চালু করা যায়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
স্কুলের সাবেক শিক্ষিকা বিরণ বালা বলেন, ‘আমাদের যে সম্মানি দেওয়া হতো, সেটা দিয়ে জীবন চলে না। তারপরেও এলাকার সন্তানদের শিক্ষার কথা ভেবে অভাবের মধ্যেও দেড়টা বছর স্কুল চালিয়েছি। কিন্তু পেট তো মনের কথা বোঝেনা, সে খাবার কেনার টাকা চায়। তাই বাধ্য হয়ে রিজাইন দিয়েছি।’
মনাই ত্রিপুরা পাড়ার সভাপতি সচিন ত্রিপুরা বলেন, ‘কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে গেলেও উপজেলা প্রশাসন থেকে এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমি নিজে কয়েকবার স্কুল চালুর জন্য মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষার কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু তারা নতুন করে কোনো শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছে না। স্কুল বন্ধ থাকায় মনাই ত্রিপুরা পল্লীর প্রায় ৫০ জন শিশুর শিক্ষা জীবন এখানেই শেষ হবার উপক্রম হয়েছে।’
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহিদুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “স্কুলটি বন্ধ নাকি খোলা বিষয়টি আমার জানা নেই।” কেন বন্ধ আছে তার কোনো স্পষ্ট কারণ জানাতে পারছে না।
এদিকে, মনাই ত্রিপুরা পাড়ার সভাপতি সচিন ত্রিপুরা বলেন, ‘স্কুল বন্ধের বিষয়টি বেশ কয়েকবার উপজেলা প্রশাসন ও মন্দির ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমে জড়িত সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। আমরা বলেছিলাম বর্তমান শিক্ষিকা না হলে আমাদের সন্তানদের মধ্যে অনেকে স্কুল-কলেজে পড়ালেখা করেছে তাদের নিয়োগ দিন, কিন্তু তা করা হয়নি।’
উল্লেখ্য, এর আগেও গত ফেব্রুয়ারী মাসে বন্ধ হয়ে যায় সীতাকুণ্ডের দক্ষিণ সোনাইছড়ি ত্রিপুরাপাড়া প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। সেখানেও শিক্ষকের বেতন বন্ধ থাকায় পদত্যাগ করেন বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক।