হিল ভয়েস, ২১ মে ২০২৩, রাঙামাটি: আজ ২১ মে ২০২৩ রবিবার, রাঙামাটির সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে “পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলনে ছাত্র-যুব সমাজ অধিকতর সামিল হউন” এই স্লোগানকে সামনে রেখে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই-সংগ্রামের অগ্রগামী ও জুম্ম ছাত্র সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী একমাত্র প্রগতিশীল ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের দিনব্যাপী প্রতিনিধি সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি শ্রী ঊষাতন তালুকদার। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি, রাঙ্গামাটি জেলার সাধারণ সম্পাদক শ্রীমতি সুবীণা চাকমা।
কাউন্সিল অধিবেশনে সংগঠনের সামগ্রিক প্রতিবেদন পাঠ করেন বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিপন ত্রিপুরা এবং আর্থিক প্রতিবেদন পাঠ করেন অর্থ সম্পাদক মিলন কুসুম তঞ্চঙ্গ্যা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রী ঊষাতন তালুকদার বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতির শত প্রতিকূলতার মধ্যে থেকেও পিসিপি’র প্রত্যেক নেতা কর্মী জুম্ম জনগণের অধিকারের জন্য লড়াই করে চলেছে এটাই আমাদের আশা-ভরসার জায়গা। কিন্তু শাসকগোষ্ঠী এমন আচরণ করছে যেন জনসংহতি সমিতি বা পিসিপি নিষিদ্ধ কোন সংগঠন।”
তিনি আরও বলেন, “অধিকারের প্রশ্নে আমরা কতটুকু অসহায় তা আমাদের অনুধাবন করতে হবে। বাস্তবতা বিশ্লেষণ করার মধ্য দিয়ে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের প্রবীণ নেতারা ছাত্র অবস্থা থেকেই প্রগতিশীলতার সঙ্গে জুম্ম সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করেছেন। বর্তমান সময়ের ছাত্র সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে।”
শ্রী তালুকদার আরও বলেন, “ছাত্র সমাজ প্রত্যেক সমাজের সচেতন অগ্রগামী শ্রেণী, তাই যেকোন আন্দোলন সংগ্রামে তারা অন্যতম ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্য রাখতে হবে। সততা, একাগ্রতা, জ্ঞানে গুণে প্রমাণ করে তবেই এই ছাত্র সমাজ সবার কাছে পৌঁছাতে সক্ষম। অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্যে সততা, জ্ঞান ও সাহসিকতার সাথে কাজ করলেই জনগণের আস্থা অর্জন সম্ভব।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুবীণা চাকমা বলেন, “আমরা বাঙালি নই, আমাদেরকে কেন বাঙালি বানাতে চায় সরকার। আমাদের পূর্বপুরুষের জমি-ভূমি বহিরাগতদের হাতে চলে যাবে কেন! আমরা নিজ নিজ অধিকার নিয়ে শান্তিতে বেঁচে থাকতে চাই। জন্মলগ্ন থেকেই আমি এই পাহাড়ে সেনাশাসন দেখে আসছি। এখনো পর্যন্ত জুম্মদের নানা অনিরাপত্তার মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করতে হচ্ছে। শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক প্রতিনিয়ত ধরপাকড়, হয়রানি, অত্যাচারে এই জুম্ম জনগণ আজ অতিষ্ঠ।
জুম্ম জনগণের মুক্তির এই আন্দোলনে পাহাড়ের জুম্ম নারী সমাজকে আরও এগিয়ে আসতে হবে।”
বিদায়ী কমিটির পক্ষ থেকে সহ-সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, “পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ একটা শিক্ষা ভান্ডার, পাঠশালা ও কান্ডারি সংগঠন। এই সংগঠন প্রগতিশীলতার মাধ্যমে সমাজে পরিবর্তন আনতে নীতি ও আদর্শকে ধারণ করে জুম্ম জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই সংগ্রামে মূখ্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।”
সম্মেলনের সমাপনী বক্তব্য সংগ্রামী সভাপতি শ্রী সুমন মারমা তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের পথচলা স্মৃতিচারণ করে বলেন, “একটি সংগঠন কাজে-কর্মে যদি কৌশলী হতে না পারে তবে সে সংগঠন নিষ্প্রাণ হয়ে থাকে। নেতৃবৃন্দকে ত্যাগ-শ্রমের মধ্য দিয়ে তত্ত্ব ও প্রয়োগের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেই সংগঠনের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সাংগঠনিক শৃঙ্খলা মেনে চলে এবং নীতি আদর্শের কথা আমাদের বাস্তবে প্রয়োগ করতে হবে। আগামীতে নানা সৃজনশীল উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে জুম্ম ছাত্র সমাজের মাঝে পার্টির বার্তা পৌঁছিয়ে দিতে হবে। রাজনৈতিক অধ্যয়ন ছাড়া একজন মানুষ পরিপূর্ণভাবে বিকাশ লাভ করতে পারে না।
জুম্ম জনগণের অস্তিত্বের এই ক্রান্তিলগ্নে নীতি আদর্শকে ধারণ করে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই সংগ্রাম করতে হবে।”
কাউন্সিল অধিবেশনে প্রতিনিধি, পর্যবেক্ষকদের আকুন্ঠ সমর্থনে নিপন ত্রিপুরাকে সভাপতি, থোয়াইক্য জাই চাককে সাধারণ সম্পাদক এবং সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট ২৭তম কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। নবগঠিত কেন্দ্রীয় কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান বিদায়ী কমিটির সংগ্রামী সভাপতি সুমন মারমা।
উল্লেখ্য যে, উক্ত প্রতিনিধি সম্মেলন ও কাউন্সিলে পিসিপি’র বিভিন্ন কলেজ, পলিটেকনিক, থানা, শহর, ইউনিয়ন, জেলা, মহানগর, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এবং জনসংহতি সমিতি, মহিলা সমিতি, যুব সমিতি, হিল উইমেন্স ফেডারেশন থেকে তিন শতাধিক প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষক অংশগ্রহণ করে।