হিল ভয়েস, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, রাঙ্গামাটি: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক রাঙ্গামাটি জেলার জুরাছড়িতে এক নিরীহ জুম্মর বাড়িতে হয়রানিমূলক তল্লাসী এবং রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার বালুখালিতে স্থানীয় মুরুব্বিদের হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ রাত আনুমানিক ৮ টার দিকে জুরাছড়ি উপজেলার বনযোগীছড়া সেনা জোনের অধীন যক্ষাবাজার সেনা ক্যাম্প থেকে সেনাবাহিনী ও ডিজিএফআই’এর একটি দল ১নং জুরাছড়ি ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের বালুখালীমুখ গ্রামে গিয়ে প্রীতিপূর্ণ চাকমা, পীং-কামিনী রঞ্জন চাকমা নামে এক নিরীহ জুম্মর বাড়িতে ব্যাপক তল্লাসী চালায়। তল্লাসীর সময় সেনা ও ডিজিএফআই’এর সদস্যরা বিভিন্ন অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করে বাড়ির লোকদের হয়রানি করে। এসময় সেনা সদস্যরা প্রীতিপূর্ণ চাকমাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ‘বিকেলে সন্ত্রাসীরা তোমার দোকানে যে টাকা জমা দিয়ে গেছে সেই টাকাগুলো কোথায়?’ বলে প্রশ্ন করে হয়রানি করেছে এবং বিভিন্ন হুমকিমূলক কথা বলেছে বলে জানা গেছে।
তবে পুরো বাড়িতে তল্লাসী করেও অবৈধ কোনো কিছু না পেয়ে সেনা ও ডিজিএফআই’এর সদস্যরা এক পর্যায়ে সেখান থেকে চলে যায় বলে জানা গেছে।
অপরদিকে, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ বিকাল আনুমানিক ৩ টায় রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার বালুখালী ইউনিয়নের মরিচ্যাবিল সেনা ক্যাম্পের কম্যান্ডার জনৈক ক্যাপ্টেন ও সার্জেন্ট মোঃ লোকমানের নেতৃত্বে ২০ জনের একটি সেনাদল পার্শ্ববর্তী কাইন্দ্যা এলাকায় টহল অভিযানে যায়। এসময় সেনাদলটি ঐ এলাকার একটি প্রত্যাহারকৃত ও পরিত্যক্ত সেনা ক্যাম্পের জায়গায় প্রায় দুই ঘন্টা অবস্থান করে। উল্লেখ্য, কাইন্দ্যা পাড়ার এই সেনা ক্যাম্পটি পার্বত্য চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ১৯৯৭ সালের পরে প্রত্যাহার করা হয়।
ঐ রাতে সেনাদলটি বসন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থান করে বলে জানা যায়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সকালে উক্ত সেনাদলটির কম্যান্ডার স্থানীয় গ্রামের মুরুব্বিরা যাতে এইদিন সকাল ১০/১১ টার মধ্যে বসন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এসে তার সাথে দেখা করে তার নির্দেশ পাঠান।
সেনা কম্যান্ডারের নির্দেশ অনুযায়ী, ওই এলাকার প্রাক্তন ইউপি সদস্য সঞ্চয় চাকমা, মহেন্দ্র লাল কার্বারি (গ্রাম প্রধান) ও সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য শেফালী চাকমা বসন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সেনা কম্যান্ডারের সাথে দেখা করতে যান। এসময় সেনা কম্যান্ডার ‘ওই এলাকায় আসে কিনা, চাঁদা সংগ্রহ করে কিনা, অবস্থান গ্রহণ করে কিনা’ ইত্যাদি নানা প্রশ্ন করে এইসব জুম্ম মুরুব্বিদের হয়রানি করার চেষ্টা করেন।
এসময় সেনা কম্যান্ডার ‘উক্ত পরিত্যক্ত সেনা ক্যাম্পে ২০২১ সালে সেনাবাহিনী কর্তৃক যে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে সেটি যাতে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া না হয়’ তার নির্দেশ দেন। এরপর গতকাল ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সকাল ৭:১৫ টার দিকে সেনাদলটি সেখান থেকে চলে যায় বলে জানা যায়।
বিলাইছড়িতে টহল অভিযান
ইতোমধ্যে রাঙ্গামাটি জেলাধীন বিলাইছড়ি উপজেলার বিভিন্ন জুম্ম গ্রামে ও পাহাড়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একাধিক দল টহল অভিযান পরিচালনা করেছে বলে জানা গেছে। এসময় সেনাবাহিনী কর্তৃক কোনো নির্যাতনের ঘটনা না ঘটলেও অনেক গ্রামবাসী সেনাবাহিনীর হয়রানিমূলক জিজ্ঞাসাবাদের শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া বিভিন্ন দিকে তল্পিতল্পাসহ ২/৩টি সেনাদলের টহল অভিযানের আয়োজন দেখে জনগণের মধ্যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সকাল আনুমানিক ৯ টার দিকে বিলাইছড়ি সেনা জোন হতে বীর ৩২ বেঙ্গলের জনৈক মেজরের নেতৃত্বে ৪০ জনের একটি সেনাদল প্রথমে কেংড়াছড়ি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের বাঙালহাবা গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থান গ্রহণ করে। এরপর সেখান থেকে ২০ জনের একটি সেনাদল পরিহলা মোনে (পাহাড়) গিয়ে অবস্থান গ্রহণ করে। এছাড়া ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সকালের দিকে বিলাইছড়ি সেনা জোন হতে ২০ জনের আরো একটি সেনাদল বাঙালহাবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে যোগ দেয়। এরপর সেখান থেকে খাদ্যসামগ্রী, কিছু শ্রমিক নিয়ে আরো একটি সেনাদল পরিহলা মোনের দিকে যায় বলে জানা যায়। অপরদিকে, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ মেরাংছড়া সেনা ক্যাম্প থেকে ২০ জনের একটি সেনাদল তাগলকছড়া মোনে গিয়ে অবস্থান গ্রহণ করে বলে জানা যায়।
এসময় সেনা সদস্যরা যেদিকে গেছে সেখানে স্থানীয় গ্রামবাসীদের থামিয়ে জেএসএস সন্ত্রাসীরা কোথায়, তারা চাঁদা চাইতে আসে কিনা, তারা কোথায় অবস্থান করে ইত্যাদি নানা প্রশ্ন করে হয়রানি করে।
জানা গেছে, মেরাংছড়ি সেনা ক্যাম্প থেকে বের হওয়া সেনাদলটি বিভিন্ন জুম্ম এলাকায় ঘুরে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ আবার নিজেদের সেনা ক্যাম্পে ফিরে আসে। অপরদিকে, বিলাইছড়ি সেনা জোন হতে বের হওয়া সেনাদলগুলো বিলাইছড়ি ও জুরাছড়ি সীমান্তবর্তী বিভিন্ন জুম্ম গ্রামে ও পাহাড়ে টহল অভিযান চালিয়ে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ আবার সেনা জোনের ফিরে আসে বলে খবর পাওয়া গেছে।