রুমায় বমপার্টি সন্ত্রাসী কর্তৃক অপহৃত লারাম বমের লাশ উদ্ধার

হিল ভয়েস, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বান্দরবান: বান্দরবান জেলাধীন রুমা উপজেলার রুমা সদর ইউনিয়নের বগালেক এলাকা থেকে বমপার্টি খ্যাত কেএনএফ সন্ত্রাসীদের কর্তৃক অপহৃত লালরামচনহ্ বম ওরফে লারাম বমের (৪৩) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

আজ (১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩) শুক্রবার দুপুরের দিকে রুমা সদর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের হারমন পাড়ার পার্শ্ববর্তী একটি ঝর্ণার খাদে লারাম বমের লাশটি পাওয়া গেছে। জায়গাটি দার্জিলিং পাড়া ও কেউক্রাডং এর মাঝামাঝি এলাকায় অবস্থিত বলে জানা গেছে।

রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনির হোসেন এর নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল গলিত অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করে এবং থানায় নিয়ে আসে।

জানা গেছে, অপহরণকারীরা লারাম বমকে তার জিহ্বা কেটে দিয়ে, চোখ ছিদ্র করে এবং গলা কেটে দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে।

স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সন্ধ্যার দিকে বগালেক এলাকায় স্থানীয় গীর্জায় ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলাকালে বমপার্টি সন্ত্রাসীদের একটি সশস্ত্র সেখানে প্রবেশ করে। এসময় সন্ত্রাসীরা সেখান থেকে লালরামচনহ্ বম ওরফে লারাম বম, তার পিতা সাংলিয়াম বম, স্ত্রী নুজিং বম ও তার ছেলেসহ পাঁচজনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে অপহরণকারীরা অন্যান্যদের ছেড়ে দিলেও লারাম বমকে ছেড়ে দেয়নি।

স্থানীয় গ্রামবাসী ও পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজি করেও লারাম বমের খোঁজ পায়নি। তবে আজ সকালে কতিপয় গ্রামবাসী জুমের কাজে জঙ্গলে গেলে লারাম বমের লাশ দেখতে পায়। এরপর তারা বিষয়টি রুমা থানায় অবহিত করলে পুলিশ সেখানে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে।

উল্লেখ্য যে, ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে জুম্ম জনগণের চলমান আন্দোলনের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়ার হীনউদ্দেশ্যে সেনাবাহিনীই মদদ দিয়ে বমপার্টি নামে খ্যাত এই সশস্ত্র গ্রুপটি সৃষ্টি করে। ২০০৮ সালে এটি প্রথমে কেএনডিও নামে এবং পরে ২০১৬ সালে কেএনএফ নাম পরিবর্তন করে আবির্ভূত হয়।

আবির্ভাব হওয়ার সাথে সাথে সেনাবাহিনীর মদদে বমপার্টি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ও জনসংহতি সমিতির বিরুদ্ধে উস্কানীমূলক প্রচারণা শুরু করে এবং সেনাবাহিনী বমপার্টিকে দিয়ে ‘ভাগ করো শাসন করো’ নীতির ভিত্তিতে জুম্মদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্র চালাতে থাকে। অচিরেই এই বমপার্টির সন্ত্রাসীরা বান্দরবানের রুমা ও রোয়াংছড়ি এবং রাঙ্গামাটির রেংক্ষ্যং এলাকায় জুম্মদের উপর ব্যাপক চাঁদাবাজি, মারধর, অপহরণ ও হত্যাসহ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।

কেএনএফ গঠিত হওয়ার পর এক পর্যায়ে ২০২১ সাল থেকে মাসিক ৩০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে তাদের ক্যাম্পে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামক আন্তর্জাতিক ইসলামী সন্ত্রাসী জঙ্গী সংগঠনকে আশ্রয় ও সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদান শুরু করে। ফলে সেনাবাহিনীর মদদ গঠিত হলেও একপর্যায়ে দুর্গম পাহাড়ে ইসলামী জঙ্গীদের আশ্রয় ও সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদানের ফলে কেএনএফ আজ বাংলাদেশের জন্য বুমেরাং হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উল্লেখ্য যে, গত অক্টোবর ২০২২ থেকে ইসলামী জঙ্গী এবং জঙ্গীদের আশ্রয় ও সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদানকারী বমপার্টির বিরুদ্ধে যৌথবাহিনীর অপারেশন শুরু হলে ইসলামী জঙ্গী, বমপার্টি ও সেনাবাহিনীর হুমকি ও উৎপীড়নের ফলে রুমার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বম জনগোষ্ঠীর ২৯৫ জন নিরীহ শিশু, নারী ও পুরুষ শরণার্থী হিসেবে ভারতের মিজোরামের লংত্লাই জেলার চংতে মহকুমার চামদুর প্রজেক্ট এলাকায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।

এরপর আরো কয়েক দফায় আশ্রয় নেয়ার পর মিজোরামে আশ্রিত বম শরণার্থীর সংখ্যা এখন ৩৯০ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জানা যায়।

তবে গত ২৪ জানুয়ারি ২০২৩ জো রে-ইউনিফিকেশন অর্গানাইজেশন (জোরো) কর্তৃক ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে দেয়া এক স্মারকলিপিতে মিজোরামের লংতলাই জেলায় পাঁচটি কেন্দ্রে ৭০০ জনের অধিক বম শরণার্থী রয়েছে বলে জোরো দাবি করা হয়েছে।

More From Author