হিল ভয়েস, ১০ নভেম্বর ২০২২, চট্টগ্রাম: আজ ১০ই নভেম্বর ২০২ রোজ বৃহস্পতিবার মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকী ও জুম্ম জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আয়োজনে নানা কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্বশান্তি প্যাগোডায় আজ বিকেলে অনুষ্ঠিত কবিতা আবৃত্তি, প্রতিবাদী গান, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও ফানুস উত্তোলন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পিসিপি’র কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও বন্ধু প্রতীম বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল (বিএমএসসি) এর চবি শাখার নেতৃবৃন্দ ও রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠীর নেতৃবৃন্দসহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার অস্থায়ী বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং উপস্থিত সকলেই এম এন লারমাসহ জুম্ম জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনে এযাবৎ সকল শহীদদের স্মরণ ও শ্রদ্ধার উদ্দেশ্যে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ডচেংনু চৌধুরী ও এনতেস চাকমার অংশগ্রহণে বিপ্লবী কবিতা পাঠের মধ্য দিয়ে মূল আলোচনা সভা শুরু হয়।
সাধারণ সম্পাদক নরেশ চাকমার সভাপতিত্বে ও তথ্য ও প্রচার সম্পাদক অন্বেষ চাকমা সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত স্মরণ সভাতে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন সংগঠনের সংগ্রামী সদস্য সুভাষ চাকমা।
স্মরণসভায় স্বাগত বক্তব্যে সুভাষ চাকমা বলেন, সামন্ত ঘুণেধরা সমাজকে পরিবর্তনে এম.এন. লারমা আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। শ্রেণিবিভক্ত সমাজকে পরিবর্তন করে এম এন লারমার আদর্শে উজ্জীবিত হতে হবে। বর্তমান প্রজন্মকে এম এন লারমাকে জানতে হবে। তিনি একক গোষ্ঠীর নেতা নয়, তিনি সমগ্র অধিকারহারা গণমানুষের নেতা।
স্মরণ সভায় সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, জুম্ম জাতির কাছে এম এন লারমার অবদান অনস্বীকার্য। তিনি পাহাড়ের সমগ্র জাতিসত্তার মুক্তি সংগ্রামের রূপক, তাঁর আদর্শ আমাদের সমগ্র জুম্ম জাতীয় চেতনাবোধের প্রতীক। তাঁর অবাস্তবায়িত স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য আত্মত্যাগের মাধ্যমে নিজেদের উৎসর্গ করতে হবে।
ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি প্রত্যয় নাফাক তার আলোচনায় বলেন, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা পাহাড়ের প্রত্যেকটি জনগোষ্ঠীর নেতা তিনি এবং তাঁর চেতনা ছাত্র সমাজের মধ্যে সম্প্রসারণ করে বিস্তৃত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সরকারের অপশাসন ও উন্নয়নের নামে যে আগ্রাসন তা প্রতিহত করে আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে যেতে হবে কষ্টসাধ্য কঠিন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে। আগামী দিনের নতুন উদ্যমে আন্দোলনের শপথ নিতে হবে সকলকে।
বিএমএসসি, চবি শাখার সাধারণ সম্পাদক উসাগ্য মারমা তার সংহতি বক্তব্যে বলেন, পাহাড়ি গণমানুষের জাতীয় শোক দিবস আজ। কুচক্রী বিভেদপন্থীরা হয়তো এম এন লারমাকে হত্যা করেছে, কিন্তু তার আদর্শিক বিপ্লবী চেতনাকে হত্যা করতে পারেনি। জাতির বৃহত্তর স্বার্থে সকলকে জাতীয় ঐক্য গঠন করতে হবে।
পিসিপি, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার দপ্তর সম্পাদক অম্লান চাকমা বলেন, মেহনতি মানুষের পরম বন্ধু এম এন লারমা। চার কুচক্রী মহল এম এন লারমাকে হত্যা করে আজ জাতীর কাছে ঘৃণিত।
এছাড়াও মেনপং ম্রো তার আলোচনায় উল্লেখ করে বলেন, কাপ্তাই বাধের মরণ ফাঁদ থেকে পাহাড়িদের সচেতন করার চেষ্টা করেন এম এন লারমা। উগ্রজাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে মেহনতি, অধিকারহারা মানুষের মুক্তির জন্যে সংগ্রাম করেন তিনি।
রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠীর সাংগঠনিক সম্পাদক সজীব তালুকদার বলেন, এম এন লারমার প্রবর্তিত জুম্ম জাতীয়তাবাদকে ধারণ করে সমগ্র জাতিগোষ্ঠীসমূহকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে হবে।
আয়োজিত অনুষ্ঠানের সভাপতি নরেশ চাকমা বলেন, ‘শিক্ষিত সমাজ গ্রামে ফিরে চলো’ এম এন লারমার এই নীতিকে ধারণ করে বর্তমান তরুণ সমাজকে পাহাড়ে গিয়ে আলো ছড়াতে হবে। সমগ্র সমাজকে প্রগতিশীল ধারায় প্রগতির দিকে নিয়ে পরিবর্তন করতে হবে। এছাড়াও তিনি আহ্বান জানান, মহান নেতা এম এন লারমাকে হৃদয়ে ধারণ করে তরুণদের শক্তিরূপে উজ্জীবিত হয়ে ভবিষ্যতের আন্দোলনকে বেগবান করতে হবে।
স্মরণসভার পরবর্তীতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও ফানুস ওড়ানোর মাধ্যমে বিপ্লবী নেতা এম এন লারমাসহ জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনে নিবেদিত সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কর্তৃক গৃহীত কর্মসূচীর মধ্যে এছাড়াও ছিল ১০ই নভেম্বর প্রথম প্রহরে এম এন লারমার শহীদ বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও স্মরণসভা।