হিল ভয়েস, ১৫ অক্টোবর ২০২২, বিশেষ প্রতিবেদক: সেনাবাহিনী ও র্যাপিড একশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)-এর রেইংখ্যং ভ্যালীর বিলাইছড়ি, রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলা ব্যাপী কম্বিং অপারেশন আজ শনিবার (১৫ অক্টোবর) ১৩ দিনে পদার্পণ করেছে। বাহ্যত গোড়াতেই এই অভিযানের মূল টার্গেট ছিল রেইংখ্যং ভ্যালী অন্তর্গত তিন উপজেলার জুম্মদের গ্রাম এবং ব্যাপক জনপদ, যেগুলো জনসংহতি সমিতির সুদৃঢ় সাংগঠনিক এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু ৬ অক্টোবর র্যাবের সংবাদ ব্রিফিং-এর মাধ্যমে পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়’ নামক জঙ্গীদের প্রশিক্ষণ ও আশ্রয় প্রদানের তথ্য প্রকাশিত হলে অপারেশনের মোড় ইসলামী জঙ্গীদের বিরুদ্ধে ঘুড়ে দাঁড়ায়।
ফলে অভিযানের এক পর্যায়ে বর্তমানে মূলত রামেত্তং পাহাড়ে প্রতিষ্ঠিত বমপার্টি ও ইসলামী জঙ্গীদের মূল আস্তানাকে (সদর দফতর) টার্গেট করে অভিযানটি কেন্দ্রীভূত হয়েছে। তবে এটা অত্যন্ত রহস্যজনক যে, ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়’ কিংবা ‘জামায়াতে আরাকান’ নামক সশস্ত্র ইসলামী জঙ্গী এবং জঙ্গীদের আশ্রয়দাতা বমপার্টি খ্যাত কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)-এর সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের টার্গেট করে অপারেশন পরিচালিত হলেও এখনো ইসলামী জঙ্গী ও বমপার্টির মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে।
সেনাবাহিনী ও র্যাব রনিন পাড়া সংলগ্ন রামেত্তং পাহাড়ে অবস্থিত বমপার্টি ও ইসলামী জঙ্গীদের মূল আস্তানা ঘেরাও করে রাখলেও রহস্যজনকভাবে বমপার্টির সভাপতি নাথান ও সামরিক শাখার প্রধান ভাঙচুংলিয়ান বম অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ও শামীম মাহফুজসহ ইসলামী জঙ্গীদের সাথে নিয়ে উক্ত আস্তানা থেকে পালিয়ে গেছে বলে জানা যায়।
অপারেশনের এক পর্যায়ে বমপার্টি সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের সাথে সেনাবাহিনী এক সশস্ত্র সংঘর্ষে সেনাবাহিনীর তিনজন সদস্য নিহত ও ৭ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া সেনাবাহিনী একটি এলএমজি ও একটি সিআর হারিয়েছে। অন্যদিকে এ সংঘর্ষে বমপার্টির দুইজন সন্ত্রাসী সদস্য নিহত হয়েছে এবং সেনাবাহিনী বমপার্টির একটি পয়েন্ট টুটু রাইফেল ও তিনটি এসবিবিএল বন্দুক হস্তগত করেছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ৩ অক্টোবর সকাল থেকে বান্দরবান জোন, রুমা জোন ও বিলাইছড়ি জোনের প্রায় ১,০০০ সেনা সদস্য এবং র্যাব সদস্য এই অপারেশন শুরু করে। এসময় কয়েকদল সেনা সদস্য রোয়াংছড়ি উপজেলার রনিন পাড়া সংলগ্ন রামেত্তং পাহাড়ে (সিপ্পি পাহাড়) অবস্থিত বমপার্টি ও ইসলামী জঙ্গীদের মূল আস্তানা ঘেরাও করে।
রামেত্তং পাহাড়কে ঘিরে সেনাবাহিনীর এমন উপস্থিতি ও তৎপরতায় বমপাটির্র মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। তারা রামেত্তং পাহাড়ে অবস্থিত তাদের মূল আস্তানায় (হেডকোয়ার্টারে) কোনক্রমেই সেনাবাহিনীকে প্রবেশ করতে দিতে রাজী নয় বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। এমনকি ঐ এলাকার ৬০০ মিটারের মধ্য ড্রোন উড়ানো ও সশস্ত্র লোকেদের আনাগোনাকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না বলে বমপার্টি এলাকাবাসীদেরকে জানিয়ে দেয়।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বমপার্টির সভাপতি নাথান বমের সাথে দেখা করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু নাথান বম দেখা করতে রাজী হননি। তার প্রতিনিধি হিসেবে বমপার্টির সামরিক শাখার প্রধান ভাঙচুনলিয়ান বম ও মুন্ট্রিয়াল বমকে পাঠাতে রাজী হন।
৯ অক্টোবর ডিজিএফআইয়ের একজন কর্মকর্তা বমপার্টির তথাকথিত ফিল্ড কমান্ডার ভাঙচুংলিয়াম বমকে রনিন পাড়ায় ডেকে নিয়ে তার সাথে কথা বলেন। সেই সময় ডিজিএফআই কর্মকর্তা ভাঙচুংলিয়াম ওরফে লেফটেন্যান্ট কর্নেল সলোমনকে তাদের গোপনীয়তা রাখতে তাদের অক্ষমতার বিষয়ে তিরস্কার করেন এবং তাকে বলেন যে, বমপার্টির ক্যাম্পে ইসলামী জঙ্গিদের আশ্রয় প্রদান এবং তাদের সাথে কেএনএফের সম্পর্ক বিষয়ে সবাই জানতে পেরেছে বলেই এখন এসব ঘটনা ঘটছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বমপার্টির একজন সদস্য সালেম বম যিনি মিজোরামের ঠেনজল থেকে Va te Kuki নামে একটি ফেসবুক পেইজ পরিচালনা করেন, তার ফেসবুক পেইজে হুমকি দিয়ে তিনি উল্লেখ করেন, “আমরা যদি চাই এক্ষুনি যতজন অপারেশনে আছেন, সবাইকে শেষ করতে পারি। কি পেয়েছেন আমাদেরকে? আমরা কুকি-চিন, বুঝছেন কাঁচা খাওয়া আমাদের জন্মগত অভ্যাস। আমাদের কেএনএফ নেতা কর্মীদের ধরার বৃথা চেষ্টা চালাবেন না।এতে করে সরকারের উল্টো ক্ষতি হবে। আমি বলতে চাই যতো দ্রুত সম্ভব রৌনিন পাড়া ত্যাগ করুন। তা না হলে আমাদের পদক্ষেপটা কঠিনভাবে নিতে হবে। যা সরকার জীবনেও ভেবে দেখেনি। আমাদের সাহস হয়তো নিজ চোখে দেখেন নাই। যদি দেখে থাকেন আমাদের হিংস্রতা তবে জীবনে কুকি-চিন শব্দটা মুখে আনার সাহসটুকু পাবেন না।”
সেনাবাহিনীর ঘেরাও থেকে বমপার্টির শীর্ষস্থানীয় সদস্য ও ইসলামী জঙ্গীদের পলায়ন:
যদিও সেনাবাহিনী ও র্যাব রনিন পাড়া সংলগ্ন রামেত্তং পাহাড়ে অবস্থিত বমপার্টি ও ইসলামী জঙ্গীদের মূল আস্তানা ঘেরাও করে রেখেছিল, কিন্তু একসময় সেই ঘেরাও ভেদ করে বমপার্টির সভাপতি নাথান ও সামরিক প্রধান ভাঙচুংলিয়ান বম অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ও শামীম মাহফুজসহ ইসলামী জঙ্গীদের সাথে নিয়ে উক্ত আস্তানা থেকে পালিয়ে যায়।
অবস্থা দৃষ্টে এটা প্রতীয়মান হয় যে, যদিও বমপার্টির ক্যাম্প ঘিরে রাখা হয়েছিল, কিন্তু সেনাবাহিনী কৌশলে নাথান বমকে ইসলামী জঙ্গীসহ পালিয়ে যেতে সুযোগ দিয়েছিল। ফলে তারা নির্বিঘ্নে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
তবে নাথান বম উক্ত আস্তানায় বমপার্টির ১৫/২০ জন সশস্ত্র সদস্য রেখে যায়। বিশ্বস্থসূত্রে জানা যায় যে, পালিয়ে যাওয়ার সময় নাথান বম উক্ত সদস্যদেরকে নির্দেশ দিয়ে যান যে, “সেনাবাহিনী যদি তোমাদেরকে আক্রমণ না করে, তাহলে তোমরাও ফায়ার করবে না। যদি তোমরা আক্রান্ত হও, তাহলে তখনই তোমরা পাল্টা আক্রমণ করবে।”
বিশ্বস্থ সূত্রে জানা গেছে যে, ৯ অক্টোবর নাথান বম ইসলামী জঙ্গীদের সহ রনিন পাড়া থেকে বের হয়ে হ্যাপি হিল পাড়া হয়ে মুয়ালপি পাড়া সংলগ্ন জঙ্গলে অবস্থান করেছিলেন। মুয়ালপি পাড়া (বম পাড়া) থেকেই তাদের জন্য সমস্ত রেশনপত্রের ব্যবস্থা করা হয়েছিল বলে জানা যায়। নাথান বমরা আবারো পুরাতন জায়গা রুমার সিলৌপি পাড়ার দিকে যেতে পারে ধারনা করা হয়।
১১ অক্টোবর বমপার্টির ২২ জনের একটি দল রামেত্তং ঝিড়ি-পাইন্দু ঝিড়ি হয়ে মুয়ালপি পাড়া গেছে বলে অনেকে প্রত্যক্ষ করেছে। সেখান থেকে প্রাংসা ঝিড়ি হয়ে তারা বথি পাড়া অভিমুখে চলে যায়। স্থানীয়দের ধারণা, ঐ গ্রুপটি আবারো পুরাতন জায়গা রুমার সিলৌপি পাড়ার দিকে যাচ্ছিল বলে ধারণা করা হয়।
বমপার্টির সন্ত্রাসী গ্রেফতার এবং অপারেশনে ড্রোন ও হেলিকপ্টার ব্যবহার:
১০ অক্টোবর গঙ্গাছড়াতে তিনটি ড্রোন উড়ানো হয়েছে। সেদিন বিলাইছড়ির বড়থলী পাড়াতে হেলিকপ্টার এসে পর পর তিন বার ঘুরে গেছে এবং রামেত্তং পাহাড়ে তিন বার চক্কর দিয়ে গেছে। একইভাবে সন্ধ্যার সময়ে রনিনপাড়াতে তিন বার হেলিকপ্টার চক্কর দেয়।
১২ অক্টোবর ২:০০ টার দিকে সেনাবাহিনীর ও র্যাব রামেত্তং পাহাড়ে স্থাপিত বমপার্টি ও ইসলামী জঙ্গীদের মূল আস্তানায় প্রবেশ করে কোন প্রকার গোলাগুলি ছাড়াই। কেবল র্যাবের পক্ষ থেকে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। আস্তানায় প্রবেশ করে সেনাবাহিনী ও র্যাব বমপার্টির তিনজন সদস্যকে আটক করে, কয়েকজনকে মারধর করে এবং কিছু নথিপত্র উদ্ধার করে। তবে ইসলামী জঙ্গীদের কাউকেই পাওয়া যায়নি।
আটককৃত বমপার্টির সদস্যরা হচ্ছেন (১) বমনুন বম, পীং লালতনকুং বম, সাং চৈক্ষ্যং পাড়া, রেমাক্রি প্রাংসা, রুমা; (২) বমপার্টির খাদ্য বিভাগের প্রধান রাম্ময় বম, সাং বাকতলাই পাড়া, থানচি এবং (৩) সুনসং পাড়া জুনিয়র হাই স্কুলের সাবেক শিক্ষক এবং বমপার্টির স্বঘোষিত লে: কর্ণেল লালমুন্ট্রিয়াল বম, সাং:-সুনসং পাড়া।
১৩ অক্টোবর রাতে নাথান বমের বড় ভাই লালজাজু বমকে (৫৮) র্যাব-১৫-এর একটি দল রুমার ইডেন রোডস্থ তার বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গেছে। তিনি সোনালী ব্যাংকের রুমা শাখায় ক্যাশিয়ার হিসেবে চাকরি করতেন।
১৪ অক্টোবর আইদুম বম নামে একজন বম গ্রামবাসীকে সেনাবাহিনী গ্রেফতার করেছে। তাকে কি জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে, এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তা জানা যায়নি।
সেনাবাহিনীর উপর বমপার্টি সন্ত্রাসীদের গুলিবর্ষণ:
১২ অক্টোবর বড়থলির সাইজাম পাড়ায় বমপার্টির সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনীর উপর সশস্ত্র হামলা করে। সেদিন সেনা সদস্যরা প্রথমে ফাঁকা গুলি ছুঁড়লে জঙ্গলের ভেতর থেকে হঠাৎ করে আচমকা সেনাবাহিনীর উপর বমপার্টির সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা গুলিবর্ষণ করে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন সেনাসদস্য গুরুতর আহত হয়। তাদেরকে হেইঙ্গোছড়াতে আনা হয় এবং সেখান থেকে হেলিকপ্টার যোগে চট্টগ্রাম সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
অন্য আরেকটি সূত্রে জানা গেছে যে, এ ঘটনায় সেনাবাহিনীর তিনজন সদস্য নিহত ও ৭ জন আহত হয়েছে এবং দুইজন নিখোঁজ রয়েছে। এছাড়া সেনাবাহিনী একটি এলএমজি ও একটি সিআর হারিয়েছে এবং এ্যামুনিশন বক্স থেকে প্রায় কয়েক হাজার এ্যামুনিশন গায়েব হয়েছে। অপরপক্ষে বমপার্টির দুইজন সদস্য নিহত হয়েছে। এছাড়া সেনাবাহিনী বমপার্টির দুইজন সদস্যকে আটক করেছে বলে জানা গেছে। সেনাবাহিনী বমপার্টির একটি পয়েন্ট টুটু রাইফেল হস্তগত করেছে। এই ঘটনায় বড়থলী পাড়া আর্মি ক্যাম্পের সুবেদারের কপাল গুলিতে কেটে গেছে। তবে এসব তথ্য নির্ভরযোগ্য সূত্রে যাচাই করার সুযোগ হয়নি।
সেনাসদস্যরা আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথেই পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। এতে বমপার্টি সন্ত্রাসীরা কোনরকমে পালিয়ে রেইংখ্যং খাল পার হয়ে যায়। স্থানীয়দের ধারণা, বমপার্টির এই গ্রুপটি ভাঙচুনলিয়ানের নেতৃত্বাধীন গ্রুপ।
সর্বশেষ তথ্য অনুসারে ১৪ অক্টোবর দুপুরে রেইংখ্যং-এর হাংঙ্যাছড়াতে বমপার্টির সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের সাথে সেনাবাহিনীর আবার গোলাগুলি হয়। তবে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
ইসলামী ব্যাংক থেকে নিয়মিত টাকা উত্তোলন:
যেদিন (৩ অক্টোবর) সেনাবাহিনী ও র্যাবের অপারেশন শুরু হয়েছিল, সেদিন বমপার্টির সভাপতি নাথান বম চট্টগ্রামের লোহাগড়া উপজেলার আমিরাবাদে যান। সেখানে ইসলামী ব্যাংকের লোহাগড়া শাখা থেকে ৩০ লক্ষ টাকা উত্তোলন করেন। উল্লেখ্য যে, এই আমিরাবাদ হচ্ছে জামাত-শিবিরের ঘাঁটি এবং জঙ্গীদের আস্তানা।
পরদিন ৪ অক্টোবর তিনি বান্দরবানে ফিরে আসেন এবং তাকে গেৎসামনি পাড়া নিবাসী সাংপুই বম বান্দরবান থেকে রিসিভ করেন। সাংপুই বম তাকে বাইক যোগে রুমা-রোয়াংছড়ির দেবতা পাহাড় রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে আসেন।
উল্লেখ্য যে, ইসলামী ব্যাংক থেকে নাথান বমের লোকেরা নিয়মিত টাকা উত্তোলন করে থাকেন। এই টাকাগুলো ইসলামী জঙ্গীদের প্রদত্ত মাসোয়ারা টাকা হতে পারে বলে অনেকে অভিমত ব্যক্ত করেন। প্রতি মাসে ইসলামী ব্যাংকের লোহাগড়া শাখা থেকে টাকা উত্তোলন এবং প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র ক্রয় করে নিয়ে আসেন রুমার লাইরুনরুপি পাড়া নিবাসী ঙুনত্লির বমের ছেলে ফেলেংক বম (৩৫)।
বমপার্টিকে নিয়ে গ্যাঁড়াকলে সেনাবাহিনী:
বমপার্টিকে নিয়ে সেনাবাহিনী আজ গ্যাঁড়াকলে আটকে গেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে ভন্ডুল করা এবং জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বে চলমান পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন তথা জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য সেনাবাহিনী, ডিজিএফআই, ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ তথা সরকার কর্তৃক পৃষ্টপোষকতা ও আশ্রয় প্রদানকৃত বিভিন্ন সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপের পর সর্বশেষ সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ হচ্ছে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ), যা বম পার্টি নামে সমধিক পরিচিত।
সেনাবাহিনী আজ নিজেদের চালে নিজেরাই আটকে গেছে বলে সংশ্লিষ্ট অনেকে অভিমত করেছেন। জামাই আদর দিয়ে সেনাবাহিনী বমপার্টিকে সৃষ্টি করেছে এবং জনসংহতি সমিতিসহ সাধারণ জুম্ম গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজি ইত্যাদি সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে তাদেরকে লেলিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আজ সেনাবাহিনীর জন্য বমপার্টিকে খাল কেটে কুমির আনার সামিল হয়েছে।
১২ অক্টোবর সেনাবাহিনী অপারেশন এলাকায় ‘বিশেষ ঘোষণা’ শীর্ষক একটি লিফলেট বিলি করেন। এতে “সমতল থেকে আসা জঙ্গীদের আজ ১২ অক্টোবর ২০২২ তারিখ সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে আত্মসমর্পন করার জন্য বলা হলো। আত্মসমর্পণ না করলে আপনাদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চলমান থাকবে” বলে উল্লেখ করা হয়। বিশেষ ঘোষণায় আরো বলা হয় যে, “এইসব জঙ্গী কাদের আশ্রয় এবং প্রশ্রয়ে আছে সে সম্পর্কে আইন শৃ্ঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিশ্চিতভাবে অবগত আছে।” এখানে বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য যে, কারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে সেনাবাহিনী কিন্তু এই লিফলেটে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেনি। সুকৌশলে আশ্রয়দাতাদের নাম এড়িয়ে গেছে। এখানেই শর্ষের মধ্যে ভুত রয়েছে বলে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
এমনকি সেনাবাহিনীর একটি এলএমজি ও একটি চাইনিজ রাইফেলসহ যথেষ্ট পরিমাণ গোলাবারুদ খুইয়ে যাওয়ার ঘটনাটিকেও অনেক ওয়াকিবহাল ব্যক্তি সন্দেহের চোখে দেখছেন। এই ঘটনাকে বমপার্টি তথা ইসলামী জঙ্গীদের শক্তি যোগান দেওয়ার সামিল বলে অনেকে মনে করছেন।
বাহ্যত আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে সরকার বমপার্টি কর্তৃক আশ্রয় দেয়া ইসলামী জঙ্গীদের বিরুদ্ধে এই অপারেশন চালাতে বাধ্য হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। যেহেতু বমপার্টি হচ্ছে সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদপুষ্ট। তাই এই বিষয়টা বিবেচনা করে স্থানীয় সেনা কর্মকর্তাদের ওপর নির্ভর করতে না পারায় অভিযানের নিয়ন্ত্রণ নিতে ঢাকা থেকে র্যাব ব্যাটালিয়ন ও কয়েকজন সেনা কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও শেষ রক্ষা হলো না। সেনাবাহিনী কৌশলে বমপার্টির নেতা নাথান বমকে তার দলবল ও ইসলামী জঙ্গী সশস্ত্র সদস্যসহ প্রাকারান্তরে পালিয়ে যেতে সুযোগ করে দিয়েছিল।
সেনাবাহিনীর এই নাটকের মধ্য দিয়ে বোঝা যায় যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর নিজস্ব এজেন্ডা রয়েছে যা ঢাকা বা সরকারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এভাবেই আজ সরকারের দুর্বলতার কারণে সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের পরিবর্তে নানা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পার্বত্য সমস্যাকে জিইয়ে রেখেছে বলে সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ মহল অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এতে করে দেশবাসীকে আজ অবধি চরম মূল্য দিতে হচ্ছে বলে জানান এসব ওয়াকিবহাল মহল।