হিল ভয়েস, ৩ অক্টোবর ২০২২, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলাধীন লংগদু উপজেলার ৪নং বগাচতর ইউনিয়নের ৯নং মারিশ্যাচর মৌজার অন্তর্গত চিবেরেগা এলাকার বৌদ্ধ বিহার সংলগ্ন এবং পাহাড়ি-বাঙালির একমাত্র ফুটবল খেলার মাঠের জায়গায় প্রস্তাবিত এপিবিএন ক্যাম্প স্থাপন না করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট আবেদন জানিয়েছেন এলাকার জুম্ম জনগণ।
আজ ৩ অক্টোবর ২০২২ সকাল ১১:০০ টায় লংগদুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে এই আবেদন প্রেরণ করেন এলাকাবাসী।
এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করেন ৯নং মারিশ্যাচর মৌজার হেডম্যান সুনির্মল চাকমা, কার্বারি বিনয় প্রসাদ চাকমা, কার্বারি তপন বিকাশ চাকমা ও কার্বারি নতুন চাকমা এবং তারাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট আবেদন পত্রটি পেশ করেন।
আবেদন পত্রে এলাকাবাসীর সার্বিক জীবনধারা সুরক্ষা ও উন্নয়নের স্বার্থে এলাকার পাহাড়ি-বাঙালির সুন্দর সামাজিক পরিবেশের স্বার্থে উক্ত জায়গায় এপিবিএন ক্যাম্প স্থাপনের প্রস্তাবনাটি বাতিল করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ কামনা করা হয়।
আবেদন পত্রে উল্লেখ করা হয়, “বিরাজমান পরিস্থিতির কারণে ১৯৮০-৮১ সালে অত্র এলাকা থেকে উদ্বাস্তু হয়ে বিভিন্ন জায়গায় অতি কষ্টের সাথে জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়েছি। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে নতুন করে অত্র এলাকায় বসতি স্থাপনের উদ্দ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ২০০০ সাল থেকে শুরু করে বর্তমানে অত্র এলাকায় শতাধিক পরিবার স্থায়ীভাবে বসবাস করছি। এলাকাবাসীর প্রয়োজনের তাগিদে পর্যায়ক্রমে নিজস্ব অর্থায়নে বৌদ্ধ বিহার নির্মাণ, প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন ও একটি ফুটবল খেলার মাঠ সৃষ্টি এবং একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ও স্থাপন করিয়াছি, যা ইতিমধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে মাননীয় চেয়ারম্যান, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড নিখিল কুমার চাকমা মহোদয় দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি পাকা দালান নির্মাণের স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধন করেছেন।”
এতে আরো উল্লেখ করা হয়, “কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় যে, গত ১২/০৯/২০২২ খ্রিঃ তারিখে এপিবিএন এর উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল নির্মিত বৌদ্ধ বিহার ও ফুটবল খেলার মাঠটি সরেজমিন পরিদর্শন করেন এবং ১৯/০৯/২০২২ খ্রিঃ তারিখে উক্ত দলের নেতৃত্বে লংগদু ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার এর মাধ্যমে আমাদের নির্মিত বৌদ্ধ বিহার ও ফুটবল খেলার মাঠের সম্পূর্ণ জায়গা বাধা প্রদান সত্ত্বেও পরিমাপ করেন। এরপর প্রতিনিধিদল কর্তৃক উক্ত বৌদ্ধ বিহারের জায়গার কিছু অংশসহ ফুটবল খেলার মাঠের উপর এপিবিএন ক্যাম্প স্থাপনের জন্য সুপারিশ সহকারে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে বলে বিশ্বস্তসূত্রে জানা গেছে। বর্তমানে আমরা এলাকাবাসী ও আশেপাশের জনগণ খুবই উদ্বেগ ও আশংকার মধ্যে রয়েছি।”
উক্ত স্থানে এপিবিএন ক্যাম্পটি স্থাপন করা হলে এলাকাবাসীর দৈনন্দিন ধর্মীয় কর্মকান্ডে বিঘ্ন ঘটবে, এলাকার একমাত্র ফুটবল মাঠটি বিলুপ্ত হবে, এলাকাবাসীর স্বাভাবিক চলাফেরায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে এবং তিন জন জুম্ম গ্রামবাসীর বসতবাড়ি প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া ধীরে ধীরে এলাকার মানুষজনও ঐ এলাকা থেকে উদ্বাস্তু হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি বলে আশঙ্কা করা হয়।
সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি বসতবাড়ি হল- (১) নিরোদ বরন কার্বারী, পিতা- ভরত কুমার কার্বারী, (২) বিজয় শান্তি চাকমা, পিতা- পুনং চান কার্বারী, (৩) রঞ্জন কুমার চাকমা, পিতা- পুর্ন কুমার চাকমা।