হিল ভয়েস, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ঢাকা: সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশের নারীরা। নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপা জিতল বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের শিরোপা জিতল নারী ফুটবলাররা। এই জয়ে সারা দেশের মতো পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীরাও মেতেছে উল্লাস ও আনন্দে। সাফজয়ী নারীদের এই দলটিতে আছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমতলের ৭ জন আদিবাসী নারী ফুটবলার ।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ৩-১ গোলে নেপালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। বাংলাদেশ দলের পাঁচ খেলোয়াড় উঠে এসেছেন রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে। এই পাঁচ খেলোয়াড় হলেন আনাই মগিনি, আনুচিং মগিনি, মনিকা চাকমা, ঋতুপর্ণা চাকমা ও রুপনা চাকমা। সেই দলের দুই সদস্য মিডফিল্ডার ঋতুপর্ণা চাকমা ও গোলকিপার রূপনা চাকমার বাড়ি রাঙামাটিতে। এরমধ্যে ঋতুর বাড়ি কাউখালী উপজেলার মগাছড়ি চাকমা পাড়ায়। আর রূপনা চাকমার বাড়ি নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ভুঁইআদাম পাড়ায়। এক বিদ্যালয় থেকে উঠে এলেও যমজ বোন আনাই ও আনুচিং- এর বাড়ি খাগড়াছড়ির সাতভাইয়া পাড়া এলাকায় এবং মনিকা চাকমার বাড়ি লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার বর্মাছড়ি এলাকায়।
আর ময়মনসিংহের কলসিন্দুর থেকে উঠে এসেছেন মারিয়া মান্দা এবং শিউলি আজিম । নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে অদম্য মনোবল, প্রবল ইচ্ছা আর দৃঢ়সংকল্পকে সঙ্গী করে তাঁরা পাড়ি দিয়েছেন স্বপ্নপূরণের পথ।
অন্যদিকে দু’বোন আনাই মগিনি ও আনুচিং মগিনির বাড়ি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার সাত ভাইয়ের গ্রামে। মনিকা চাকমার বাড়ি খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার বর্মাছড়ি গ্রামে। মিডফিল্ডার ঋতুপর্ণা চাকমার বাড়ি রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের মঘাছড়ি গ্রামে। আর জাতীয় দলের গোলরক্ষক রুপনা চাকমার বাড়ি রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ভুঁইয়োছড়ি গ্রামে।
ঘাগড়া উচ্চবিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ দিয়ে শুরু হয় আনাই মগিনি, মনিকা চাকমা ও আনুচিং মগিনিদের ফুটবল। ২০১২ সালে সবাইকে ঘাগড়া উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেওয়া হয়। তার পর থেকে তাদের নিয়ে নারী ফুটবল দল গঠন করা হয়। জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘাগড়া উচ্চবিদ্যালয়ের পাশে এই খেলোয়াড়দের জন্য আলাদা ঘর নির্মাণ ও থাকা–খাওয়ার ব্যাপারে সহায়তা করেন। তাদের অনুশীলনের জন্য শান্তি মনি চাকমা নামের এক প্রশিক্ষককে দায়িত্ব দেওয়া হয়। জাতীয় দলের পাঁচ পাহাড়ি নারী খেলোয়াড়ের মনিকা, আনুচিং ও আনাই ঘাগড়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছেন। অন্য দুজনের মধ্যে গোলরক্ষক রুপনা ঘাগড়া উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে পড়ছেন এবং ঋতুপর্ণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে বিকেএসপিতে চলে যান।
স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের মঘাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক বীরসেন চাকমা শুরু থেকে আনাই মগিনি, মনিকা চাকমা ও আনুচিং মগিনিদের নিয়ে একটি দল তৈরি করেন। তাদের প্রশিক্ষণ, থাকা-খাওয়াসহ সব সুযোগ-সুবিধার দিকে নজর রাখেন। তার চেষ্টায় ২০১১ সালে বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ চ্যাম্পিয়ন হয় আনাই মগিনিদের দল। পরবর্তী সময়ে যোগ হন রুপনা চাকমা ও ঋতুপর্ণা চাকমা।
এদিকে আনাই মগিনি ও আনুচিং মগিনির জন্ম কয়েক মিনিটের ব্যবধানে, প্রায় একই চেহারা, দুজনই ফুটবলার, খেলার শুরুও একই সঙ্গে। কিন্তু একটি জায়গায় তাদের অমিল। আনাই ডিফেন্ডার আর আনুচিং ফরোয়ার্ড। দুই বোন মাঠের দুই অংশে দাপট জারি রেখে কয়েক বছর ধরে জাতীয় দলে খেলে আসছেন। তারই ফল এবারের সাফ চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ৩-১ গোলে নেপালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। সেই দলের দুই সদস্য মিডফিল্ডার ঋতুপর্ণা চাকমা ও গোলকিপার রূপনা চাকমার বাড়ি রাঙামাটিতে। এরমধ্যে ঋতুর বাড়ি কাউখালী উপজেলার মগাছড়ি চাকমা পাড়ায়। আর রূপনা চাকমার বাড়ি নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ভুঁইআদাম পাড়ায়।
মিডফিল্ডার মারিয়া মান্দার বাড়ি কলসিন্দুর বিদ্যালয়ের পেছনে মন্দিরকোনা গ্রামে। ওই গ্রামে যেতে পার হতে হয় খরস্রোতা নেতাই নদ। সেতু না থাকায় দড়ি টেনে নৌকায় নদ পাড়ি দিতে হয়। নদের ওপারের মানুষের মধ্যেও বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। মারিয়া এখন বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তিনি এখন এলাকাবাসীর গর্ব ও অহংকার। স্বপ্নজয়ী এই নারী ফুটবলাররা আরো আলো ছড়াবেন এই প্রত্যাশা সকলের।