হিল ভয়েস, ৯ আগস্ট ২০২২, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটিতে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ও ২৯৯ পার্বত্য রাঙ্গামাটি আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার বলেছেন, ‘পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণে পাহাড়ের মানুষ আজ নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে। তারা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে না।’
আজ (৯ আগস্ট ২০২২) সকাল ৯:৩০ টার দিকে ‘ঐতিহ্যগত বিদ্যা সংরক্ষণ ও বিকাশে আদিবাসী নারী সমাজের ভূমিকা’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রাঙ্গামাটি পৌরসভা চত্ত্বরে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঊষাতন তালুকদার একথা বলেন। আলোচনা সভার আগে আদিবাসী শিল্পীদের পরিবেশনায় উদ্বোধনী সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করা হয় এবং আদিবাসীদের বিভিন্ন ঐতিহ্যগত বাদ্যযন্ত্র বাজানো হয়। এরপর অনুষ্ঠানটির উদ্বোধন ঘোষণা করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য মাধবীলতা চাকমা।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম এর পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমার সভাপতিত্বে এবং বিজ্ঞান্তর তালুকদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরুপা দেওয়ান এবং প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এম এন লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিজয় কেতন চাকমা। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের রাঙ্গামাটি জেলার সহ-সভাপতি অরূপ মুৎসুদ্দী, পার্বত্য চট্টগ্রাম আদিবাসী লেখক ফোরামের সাবেক সভাপতি শিশির চাকমা ও সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট ভবতোষ দেওয়ান।
প্রধান অতিথি ঊষাতন তালুকদার বলেন, ‘মানুষ আজ পাহাড়ে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে না, এই জায়গায় চেক ঐ জায়গায় চেক, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এমনিভাবে মানুষকে আজ জিম্মি করে রাখা হয়েছে। পাহাড়ের মানুষ আজ নিরাপত্তাহীনতার মধ্য রয়েছে।’ তিনি বলেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় পাহাড়ে আজকে নানাবিধ সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আজকে আপনারা দেখেন, যেটা নয়, সেটা নিয়ে সরকার লাফালাফি করছে। কী দরকার ছিল আদিবাসী বলা যাবে কি যাবে না এটা ঠিক করে দেয়ার? সেটা তো আরো বরঞ্চ সুড়সুড়ি দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এমনও মানুষ আছে পার্বত্যঞ্চলে, এখানে আসতে ভয় পায়, ভয় পেয়ে আসে নাই। এত ভয়ভীতি, এত আতঙ্ক মানুষের মধ্যে, এখানে আসতে, সভা-সমিতিতে যেতে। অথচ, মানুষের মৌলিক অধিকার, সভা-সমিতিতে যোগ দেওয়ার, সভা-সমিতি করার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, বিভিন্ন আইনজীবী, তাঁরা যে এখানে এসে আদিবাসীদের অধিকারের কথা বলবে, এটা পর্যন্ত বারণ করতেছে।’
ঊষাতন তালুকদার আরও বলেন, ‘১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু যখন জীবিত ছিলেন, সে সময়ে জেনেভাতে বাংলাদেশ সরকার আইএলও নং ১০৭ অনুসাক্ষর করেছে। তাতে রয়েছে যে, আদিবাসীদের শুধু বন্দোবস্তকৃত ভূমি নয়, দখলকৃত ভূমিতেও তাদের অধিকার রয়েছে। সে অধিকার সরকারকে স্বীকৃতি দিতে হবে। তাদেরকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা যাবে না। অথচ আজকে আপনারা দেখেন, বাঘাইছড়িতে ৯ ফুটের একটা রাস্তা আছে। সেখানে মানুষের দোকান রয়েছে, বিভিন্ন বনজ গাছ, রাবার বাগান রয়েছে। সেখানে জনগণ মাঠে নেমে প্রতিবাদ করেছে। সেখানে সরকার কর্তৃক কোনো জমি অধিগ্রহণ করা হয় নাই এবং ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয় নাই। তা সত্ত্বেও তারা জোর করে, ওদের জোর আছে, শক্তি আছে, ওরা জোর করে ৩০ ফুটের রাস্তা করছে এবং করবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মৌলিক অধিকার, দাবীনামা করার অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার আছে। আমরা আদিবাসী হিসেবে হাজার বার দাবি করতে পারি, যতক্ষণ পর্যন্ত সংবিধানে স্বীকৃত না হয়। ২০০৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আদিবাসী দিবসে বাণী পাঠিয়েছিলেন। তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপুমনি আমাদের অনেকবার মিছিলে এসেছিলেন। তাহলে যখন বিরোধী দলে থাকা হবে, তখন বিরোধী দল হলে আদিবাসী বলা যাবে, সরকারি পক্ষ হলে আদিবাসী বলা যাবে না। এটা কোন বিবেক? কোন মানবতা? এটা কোন আইন?’
অনুষ্ঠানে সংহতি বক্তব্য রাখেন, মারমা জাতিগোষ্ঠী থেকে ম্রাচাই মারমা, তঞ্চঙ্গা জাতিগোষ্ঠী থেকে শান্তি দেবী তঞ্চঙ্গ্যা, অহমিয়া জাতিগোষ্ঠী থেকে অনুপ কুমার আসাম, ত্রিপুরা জাতিগোষ্ঠী থেকে সাগর ত্রিপুরা নান্টু, পাংখোয়া জাতিগোষ্ঠী থেকে জ্যোতি পাংখোয়া, লুসাই জাতিগোষ্ঠী থেকে লোমা লুসাই প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস ২০২২ রাঙ্গামাটি উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ইন্টু মনি তালুকদার।
অনুষ্ঠান শেষে রাঙ্গামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গণ থেকে এক বিশাল র্যালি শুরু হয়ে রাঙ্গামাটি শিল্পকলা একাডেমিতে গিয়ে সমাপ্ত হয়।