হিল ভয়েস, ৩১ জুলাই ২০২২, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলাধীন বাঘাইছড়ি উপজেলার বাঘাইছড়ি ইউনিয়নের আর্য্যপুর বনবিহারের রাস্তার মুখ এলাকায় বুলডোজার ও ট্রাক্টর দিয়ে জোরপূর্বক আদিবাসী জুম্ম গ্রামবাসীর দোকান ও মূল্যবান গাছ ধ্বংস করে সীমান্ত সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আজ (৩১ জুলাই ২০২২) সকাল ১০:০০ টায় বাঘাইছড়ির মারিশ্যা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (২৭ বিজিবি) জোনের জোন কম্যান্ডার লেঃ কর্নেল মোঃ শরীফুল আবেদ (এসজিপি) নিজে এসে এই সীমান্ত সড়ক নির্মাণের কাজ উদ্বোধন করেন। এর পরপরই তার উপস্থিতিতেই সেনাবাহিনীর ২০ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটেলিয়ন এর সদস্যরা বুলডোজার দিয়ে এক জুম্ম গ্রামবাসীর দোকান এবং ট্রাক্টর দিয়ে বেশ কিছু গ্রামবাসীর মূল্যবান আগর ও সেগুন গাছ ধ্বংস করে তাদের সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করেন।
এই সময় বাঘাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অলিভ চাকমার নেতৃত্বে স্থানীয় জুম্ম গ্রামবাসী জোন কম্যান্ডার লেঃ কর্নেল মোঃ শরীফুল আবেদ (এসজিপি) এর নিকট জুম্মদের ব্যাপক ক্ষতি করে এই সড়ক নির্মাণ কাজের প্রতিবাদ জানান এবং কাজটি বন্ধ করার দাবি জানান। কিন্তু বিজিবি ও সেনা সদস্যরা স্থানীয় জনগণের প্রতিবাদ ও দাবিকে তোয়াক্কা না করে সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করেন।
এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আজ সকাল বেলা ক্ষতিগ্রস্ত দোকানের মালিক হলেন শান্তিময় চাকমা (৩৮), পীং-ঠান্ডারাম চাকমা, গ্রাম-উগলছড়ি। দোকান ছাড়াও শান্তিময় চাকমার ৮টি আগর গাছ ধ্বংস করে দেয় সেনা সদস্যরা। জানা গেছে, তিনি ইতোমধ্যে ২০ হাজার টাকায় ঐ গাছগুলো বিক্রি করবেন বলে এক ক্রেতাকে কথা দিয়েছেন।
গ্রামবাসীদের তথ্য অনুযায়ী, সেনা সদস্যরা বুল ডোজার ও ট্রাক্টর দিয়ে আজকে সকালের মধ্যে নির্মাণাধীন সড়ক সংলগ্ন এলাকায় জুম্মদের প্রায় ১ হাজার আগর ও সেগুন গাছ ধ্বংস করে দিয়েছেন।
জানা গেছে, বাঘাইছড়ি ইউনিয়নের আর্য্যপুর বনবিহারের কাছাকাছি উগলছড়ি গ্রাম হতে ৩০ ফুট প্রস্থ এই সড়ক নির্মাণ কাজ করছে সাজেক ইউনিয়নের ১০নং ক্যাম্পের সেনাবাহিনীর ২০ ইঞ্জিনিয়ারিং কনেন্ট্রাক্টশন ব্যাটেলিয়ন।
উক্ত জায়গা থেকে কজোইছড়ি মুখ হয়ে হালিমপুর বিজিবি সীমান্তবর্তী ক্যাম্প পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে এই রাস্তাটি। আর সার্বোয়াতলী ইউনিয়নের তাংগুম মুখ ব্রিজ থেকে ঐ কজোইছড়ি ক্যাম্প বিজিবি রাস্তার সাথে সংযুক্ত হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে যে, আর্য্যপুর দোকানের রাস্তা মুখ থেকে কজোইছড়ি মুখ পর্যন্ত আনুমানিক ৪ কিলো দুরত্বের রাস্তা নির্মিত হবে এবং এতে কমপক্ষে ৫০ পরিবার জুম্ম গ্রামবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এই রাস্তা নির্মাণের ফলে জুম্ম গ্রামবাসীর রেকর্ডীয় জায়গার পরিমাণ ৪.৮৫ একর, ভোগদখলীয় জায়গার পরিমাণ ৭.২০ একর এবং ধান্য জমি ১.০০ একর ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া ডিপ টিউওয়েল ২টি, বাড়িঘর ১৩টি, দোকান ৩টি, গোয়ালঘর ২টি, তামাক চুলা ১টি ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর অন্যান্য আগর ও সেগুনসহ বিভিন্ন মূল্যবান প্রজাতির হাজার হাজার গাছ ধ্বংস হবে।
বর্তমানে উক্ত জায়গায় ১০ ফুট চওড়া ইট সুলিং রাস্তা রয়েছে এবং উক্ত রাস্তায় যানবাহন চলছে। ৩০ ফুট রাস্তা বৃদ্ধি করে ক্ষতি করার কোন প্রয়োজন নেই বলে ক্ষতির মুখে পড়া স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানান। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, মৌজার হেডম্যান ও এলাকার গ্রামবাসীরা উক্ত ৩০ ফুট সওড়া সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন। বর্তমানে অর্ধ-শতাধিক জুম্ম পরিবার উচ্ছেদের মুখে চরম আতঙ্ক ও ক্ষোভের মধ্যে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য যে, সীমান্ত সড়ক (রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা) নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে এই রাস্তাটি নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। প্রকল্পের নথি অনুসারে উক্ত সীমান্ত সড়কটি ৩১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য হবে।
উক্ত প্রকল্পের অধীনে ২০ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটেলিয়ন কর্তৃক রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের সিজকছড়া থেকে সাজেক-শিলদা-বেতলিং পর্যন্ত ৫২ কিলোমিটার ও সাজেক-দোকানঘাট-ঠেগামুখ পর্যন্ত ৯৫ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। তার মধ্যে সিজকছড়া থেকে প্রায় ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার কাজ শেষ হয়েছে। উক্ত সড়ক নির্মাণের ফলে জুম্মদের ২১১ পরিবারের ঘরবাড়ি, বাগান-বাগিচা ও ঐতিহ্যগত জুমভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।