হিল ভয়েস, ৩০ জুলাই ২০২২, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার বাঘাইছড়ি ইউনিয়নের আর্য্যপুর বনবিহারের কাছাকাছি উগলছড়ি গ্রাম হতে ৩০ ফুট প্রস্থ রাস্তা নির্মাণ কাজ করতে যাচ্ছে সাজেক ইউনিয়নের ১০নং ক্যাম্পের সেনাবাহিনীর ২০ ইঞ্জিনিয়ারিং কনেন্ট্রাক্টশন ব্যাটেলিয়ন।
উক্ত জায়গা থেকে কজোইছড়ি মুখ হয়ে হালিমপুর বিজিবি সীমান্তবর্তী ক্যাম্প পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে এই রাস্তাটি। আর সার্বোয়াতলী ইউনিয়নের তাংগুম মুখ ব্রিজ থেকে ঐ কজোইছড়ি ক্যাম্প বিজিবি রাস্তার সাথে সংযুক্ত হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে যে, আর্য্যপুর দোকানের রাস্তা মুখ থেকে কজোইছড়ি মুখ পর্যন্ত আনুমানিক ৪ কিলো দুরত্বের রাস্তা নির্মিত হবে এবং এতে কমপক্ষে ৫০ পরিবার জুম্ম গ্রামবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এই রাস্তা নির্মাণের ফলে জুম্ম গ্রামবাসীর রেকর্ডীয় জায়গার পরিমাণ ৪.৮৫ একর, ভোগদখলীয় জায়গার পরিমাণ ৭.২০ একর এবং ধান্য জমি ১.০০ একর ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া ডিপ টিউওয়েল ২টি, বাড়িঘর ১৩টি, দোকান ৩টি, গোয়ালঘর ২টি, তামাক চুলা ১টি ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর অন্যান্য আগর ও সেগুনসহ বিভিন্ন মূল্যবান প্রজাতির হাজার হাজার গাছ ধ্বংস হবে।
ইতিমধ্যেই কর্ণেল মুহম্মদ সাইফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনীর ২০ ইন্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটেলিয়ন থেকে স্থানীয় জুম্ম গ্রামবাসীদেরকে যাদের ঘরবাড়ি, অন্যান্য স্থাপনা ও বাগান-বাগিচা এই রাস্তায় পড়বে, তাদেরকে ঘরবাড়ি, স্থাপনা ও বৃক্ষ সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানান যে, ইতিমধ্যে সার্বোয়াতলী ইউনিয়নের ২৭ বিজিবি অধীনস্থ কচুছড়ি বিজিবি ক্যাম্পে ২০ ইঞ্জিনিয়ারিং কনেন্ট্রাক্টশন ব্যাটেলিয়ন বেইজ ক্যাম্প স্থাপন করেছে এবং আগামী ২/১ দিনের মধ্যে সড়ক নির্মাণের সরঞ্জামাদি নিয়ে আসা হবে।
বর্তমানে উক্ত জায়গায় ১০ ফুট চওড়া ইট সুলিং রাস্তা রয়েছে এবং উক্ত রাস্তায় যানবাহন চলছে। ৩০ ফুট রাস্তা বৃদ্ধি করে ক্ষতি করার কোন প্রয়োজন নেই বলে ক্ষতির মুখে পড়া স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানান। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, মৌজার হেডম্যান ও এলাকার গ্রামবাসীরা উক্ত ৩০ ফুট সওড়া সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন। বর্তমানে অর্ধ-শতাধিক জুম্ম পরিবার উচ্ছেদের মুখে চরম আতঙ্ক ও ক্ষোভের মধ্যে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য যে, সীমান্ত সড়ক (রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা) নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে এই রাস্তাটি নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। প্রকল্পের নথি অনুসারে উক্ত সীমান্ত সড়কটি ৩১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য হবে।
উক্ত প্রকল্পের অধীনে ২০ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটেলিয়ন কর্তৃক রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের সিজকছড়া থেকে সাজেক-শিলদা-বেতলিং পর্যন্ত ৫২ কিলোমিটার ও সাজেক-দোকানঘাট-ঠেগামুখ পর্যন্ত ৯৫ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। তার মধ্যে সিজকছড়া থেকে প্রায় ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার কাজ শেষ হয়েছে। উক্ত সড়ক নির্মাণের ফলে জুম্মদের ২১১ পরিবারের ঘরবাড়ি, বাগান-বাগিচা ও ঐতিহ্যগত জুমভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
রাঙ্গামাটি জেলার বরকল উপজেলায় নির্মাণাধীন ঠেগা স্থল বন্দরের সাথে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের সংযোগের জন্য রাজস্থলী থেকে ঠেগামুখ পর্যন্ত ১৩০ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। এই সড়ক নির্মাণ কাজের ফলে ইতোমধ্যে উক্ত দুই উপজেলায় অন্তত ১২৯ পরিবার জুম্ম ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে।
বান্দরবানে নাইক্ষ্যংছড়ির দোছড়ির পাইনছড়ি থেকে পোয়ামুহুরী পর্যন্ত এলজিইডির একটি সড়ক নির্মাণ কাজ চলছে। রাস্তাটা আলিকদম জানালী পাড়া থেকে শুরু হয়ে করুকপাতা, পোয়ামুরি হয়ে টেকনাফ সীমান্ত সড়কের সাথে সংযুক্ত হবে। ইতিমধ্যে ৩৭ কিমি রাস্তা নির্মাণ হয়ে গেছে।
খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা-পানছড়ি-দীঘিনালা সীমান্ত সড়ক নির্মাণ ও এলক্ষ্যে পানছড়ির শনখোলা পাড়ায় সেনাবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই সড়কের ফলে অনেক পাহাড়ির জমি ও বাগান বাগিচার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ৩০ মে ২০২২ এক স্মারকলিপির মাধ্যমে ১৮৪ জন বর্তমান ও সাবেক জনপ্রতিনিধি, হেডম্যান ও কার্বারী এই সড়ক ও সেনা ক্যাম্প নির্মানের কাজ বাতিল করার দাবির কথা জানান।