হিল ভয়েস, ১৬ জুলাই ২০২২, নড়াইল: নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া সাহাপাড়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মহানবীকে নিয়ে কটুক্তির অভিযোগ তুলে উত্তেজিত মুসল্লীরা স্থানীয় একটি বাজারের হিন্দু সম্প্রদায়ের ৬টি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট, ৪টি বাড়িঘরে আসবাবপত্র ভাঙচুর করে নগদ টাকাসহ স্বর্ণালঙ্কার লুট এবং একটি বাড়ি ও একটি হিন্দু মন্দিরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গতকাল শুক্রবার (১৫ জুলাই ২০২২) সন্ধ্যায় লোহাগড়ার দিঘলিয়া গ্রামের সাহা পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, ঘটনার সূত্রপাত হয় দিঘলিয়া সাহাপাড়ার অশোক সাহার ছেলে আকাশ সাহার (১৮) বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে।
গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর সন্ধ্যায় উত্তেজিত মুসল্লীরা আকাশকে গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন করে। পরে দিঘলিয়া বাজারের নিত্য দুলাল সাহা, অনুপ সাহা, অশোক সাহা, সনজিদ সাহার মুদি দোকান এবং গোবিন্দ কুণ্ডু ও গৌতম কুণ্ডুর মিষ্টির দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করে।
এ ছাড়া সাহাপাড়ার গৌর সাহা, চায়না রানী সাহা, বিপ্লব সাহার বাড়িঘর ও আসবাবপত্র ভাঙচুরসহ এবং স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা নিয়ে যায়। তারা নাড়ূ গোপালের বসতঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং লুটপাট করে। উত্তেজিত জনতা রাত ৯:০০ টার দিকে আখড়াবাড়ী সার্বজনীন পূজামণ্ডপে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এ ছাড়াও, উত্তেজিত মুসল্লীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে সাহাপাড়া মন্দিরের চেয়ার ও সাউন্ড বক্স ভাঙচুর করে।
লোহাগড়া থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও রাজনৈতিক নেতারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। পরে রাত সাড়ে ৯:০০ টার দিকে র্যাব ৬-এর একটি দল এবং নড়াইলের পুলিশ সুপার প্রবীর রায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।
লোহাগড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হারান চন্দ্র পাল বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শটগান থেকে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা বিষয়টি মীমাংসায় কাজ করে যাচ্ছেন। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর বাবাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তবে ওই শিক্ষার্থী পলাতক। তাকে আটকের চেষ্টা চলছে।’
লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজগর আলী বলেন, ‘অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে আমরা এখনো পাইনি। তাই তার পোস্ট সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না। এটি কোনো সংগঠিত হামলা নয়। দিঘলিয়া একটি বড় বাজার হওয়ায় এটি একটি বিচ্ছিন্ন হামলা। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি। মন্দিরে কিছু ইট-পাটকেল ছোড়া হয়েছে।’
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার এবং কোনো মামলা করা হয়নি।