হিল ভয়েস, ১২ জুলাই ২০২২, বান্দরবান: বান্দরবান পার্বত্য জেলাধীন লামা উপজেলার রূপসী ইউনিয়নে তিন বহিরাগত বাঙালি যুবক কর্তৃক নিরীহ এক মারমা যুবককে ছুরি দিয়ে আঘাত করে হত্যার চেষ্টার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, এক ধর্ষণ মামলার স্বাক্ষী হওয়ার কারণে উক্ত তিন দুর্বৃত্ত এই মারমা যুবককে হত্যার চেষ্টা করে এবং গুরুতর আহত করে।
গতকাল ১১ জুলাই ২০২২ দিবাগত রাত আনুমানিক ১০:০০ টায় রূপসীপাড়া ইউনিয়নের রূপসীপাড়া হতে শিলেরতুয়া সড়কের পাশে হাতিরঝিরি এলাকায় এই ঘটনা ঘটে বলে খবর পাওয়া গেছে।
আহত মারমা যুবকের নাম মংয়োং থোয়াই মারমা (৩৫), পিতা-মংচহ্লা মারমা। তার স্থায়ী বাড়ি আলীকদম উপজেলার ৩নং নয়াপাড়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বাবু পাড়া গ্রামে। বর্তমানে স্ত্রী সন্তান নিয়ে তিনি রূপসীপাড়া ইউনিয়নের রূপসীপাড়া বাজারে ভাড়া বাসায় বসবাস করেন বলে জানা গেছে। তিনি পেশায় একজন মোটর সাইকেল ড্রাইভার।
ভুক্তভোগীর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাত ৯:০০ টার দিকে রূপসীপাড়া বাজারের মোঃ পুতিয়া, মোঃ সাইমুন ও মোঃ জামাল হোসেন নামে তিন বাঙালি যুবক শিলেরতুয়া যাওয়ার জন্য মংয়োং থোয়াই মারমার মোটর সাইকেল ভাড়া করে। যাত্রী তিন জন বাঙালির মধ্যে পুতিয়া নামে যুবকটি পূর্বপরিচিত হওয়ায় মংয়োং থোয়াই মারমা তাদের নিয়ে যেতে রাজি হন।
যাত্রাপথে হাতিরঝিরি নামক নির্জন স্থানে পৌঁছালে তিন যাত্রী মোটর সাইকেল থামিয়ে মংয়োং থোয়াই মারমাকে এলোপাতাড়ি ছুরি মারতে থাকে। দুষ্কৃতিকারী পুতিয়া ও মোঃ সাইমুন মংয়োং থোয়াই মারমার হাত ধরে রাখে এবং মোঃ জামাল হোসেন তাকে ছুরি মারে। একপর্যায়ে তার হাত পা বেঁধে জবাই করার প্রস্তুতিকালে হঠাৎ রাস্তায় আরেকটি মোটর সাইকেল আসতে দেখে দুষ্কৃতিকারীরা তাকে ফেলে জঙ্গলে পালিয়ে যায়।
এতে পরে আসা মোটর সাইকেলের লোকজন ও মংয়োং থোয়াই মারমার আত্মীয়রা তাকে উদ্ধার করে রাত ১০:৩০ টার দিকে লামা হাসপাতালে নিয়ে যায়।
লামা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মেসবাহ উদ্দিন জানান, আহত যুবকের সামনে (বুকে) ৭টি ও পিছনে (পিঠে) ২টি ছুরির আঘাত রয়েছে। পেটে ছুরির আঘাতে তার ভূরি বের হয়ে গেছে। আশংকাজনক হওয়ায় আহত ব্যক্তিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে।
আহত মংয়োং থোয়াই মারমা বলেন, আমাকে ছুরি মারার সময় ঘাতক জামাল হোসেন বলছিল, আর মামলার স্বাক্ষী হবি? গত কয়েকদিন আগে রূপসীপাড়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে এক গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় আমাকে মামলায় স্বাক্ষী করা হয়। সেই জন্য আসামীপক্ষ গিয়াস উদ্দিনের ভাই মোঃ জামাল হোসেন ভাড়া করা লোকজন দিয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
এদিকে ঘটনার পরপরই সন্ত্রাসী তিনজন ভাড়া করা মোটর সাইকেলটি নিয়ে শিলেরতুয়ার দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। রূপসীপাড়া বাজারের লোকজনের কাছ থেকে এই ঘটনার বিষয়ে ফোন পেয়ে শিলেরতুয়া এলাকায় স্থানীয় লোকজন রাস্তায় পাহারা বসায় এবং সন্দেহভাজন দুইজনকে আটক করে। তাদের কাছ থেকে ছুরি ও ভাড়া করা মোটর সাইকেলটি উদ্ধার করে স্থানীয়রা। পরে লামা থানার পুলিশ উপস্থিত হলে আটককৃত দুইজন দৃর্বৃত্তকে, ছুরি ও মোটর সাইকেলটি পুলিশের নিকট বুঝিয়ে দেয়া হয়।
আটককৃতরা হল- মোঃ জামাল হোসেন (২৭), পিতা-আবুল কালাম, গ্রাম-পূর্ব পুকখালী, ১নং ওয়ার্ড, ঈদগাঁ ইউনিয়ন, উপজেলা- ঈদগাঁ, জেলা- কক্সবাজার এবং মোঃ সাইমুন (২৫), পিতা-মোঃ হারুনুর রশিদ, গ্রাম-পূর্ব গুমাথলি, ৯নং ওয়ার্ড, ঈদগাও ইউনিয়ন, উপজেলা-ঈদগাঁ, জেলা-কক্সবাজার। জনতার ধাওয়া খেয়ে পুতিয়া নামে ব্যক্তিটি পালিয়ে যায়।
স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার আবু তাহের বলে, খরব পেয়ে আমি ছুঁটে আসি। গরীব মোটর সাইকেল ড্রাইভারকে এভাবে ক্ষতবিক্ষত করার ঘটনায় সু-বিচার দাবি করছি।
লামা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মোল্লা রমিজ জাহান জুম্মা বলেন, জনগণ দুইজনকে আটক করে আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে। সে সাথে ছুরি ও মোটর সাইকেলটি আমরা বুঝে নিয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেয়া হবে।